লাইফস্টাইল ডেস্ক : শীতে বাড়ে শরীরের ব্যথাবেদনা। এর একটি অনুঘটক ইউরিক অ্যাসিড; যেটা সাধারণত আমাদের শরীরে উপজাত হিসেবে তৈরি হয়। এ ছাড়া খাদ্য থেকেও আসে। এর মাত্রা সঠিক রাখাটা জরুরি।
শীত এলেই শরীরে ব্যথা বেড়ে যায়; বিশেষ করে ঘাড়ের ব্যথা, হাঁটুব্যথা, কোমরব্যথা। এর মধ্যে সবচেয়ে বিরক্তিকর হচ্ছে গোড়ালির ব্যথা। এই ব্যথা হলে ব্যথানাশক ওষুধ খেয়েও ব্যথা কমানো যায় না। অনেকে স্ট্রেরয়েড দিয়ে ব্যথা কমানোর চেষ্টা করে থাকেন।
শীতে অনেক ধরনের ব্যথা হতে পারে। তবে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার কারণেও ব্যথা হতে পারে। এর ফলে ব্যথার ঔষধ খেয়েও এই ব্যথা কমানো যায় না। এ জন্য করণীয় হলো শরীর থেকে বাড়তি ইউরিক অ্যাসিড কমানো।
ইউরিক অ্যাসিড শরীরের প্রয়োজনীয় উপাদান। এটা যেমন আমাদের শরীর নিজে তৈরি করে, তেমনি আবার কিছু খাবার থেকেও আসে। কিন্তু মাত্রার অতিরিক্ত হয়ে গেলেই বাধে সমস্যা।
ইউরিক অ্যাসিড কী?
ইউরিক অ্যাসিড হলো একটি জৈব যৌগ, যা শরীরে স্বাভাবিকভাবেই তৈরি হয়। ইউরিক অ্যাসিড একটি স্বাভাবিক উপাদান, যা শরীরে প্রোটিন বিপাকের ফলে তৈরি হয়। এটিকে একটি উপজাতও বলা যেতে পারে। ইউরিক অ্যাসিড সাধারণত রক্তের মাধ্যমে কিডনিতে প্রবাহিত হয় এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। কিছু কারণে যদি শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের উৎপাদন বেড়ে যায় বা কিডনি দ্বারা ইউরিক অ্যাসিড অপসারণ কমে যায়, তাহলে রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়তে পারে।
কী করলে ইউরিক অ্যাসিড বাড়ে
অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ: প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছ, মাংস, ডিম, দুগ্ধজাত খাদ্য ইত্যাদিতে পিউরিন নামক একটি উপাদান রয়েছে। পিউরিন ভাঙার সময় ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হয়। তাই অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ করলে রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
অ্যালকোহল গ্রহণ: অ্যালকোহলও পিউরিন–সমৃদ্ধ। তাই অ্যালকোহল গ্রহণ করলেও রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
ওজনবৃদ্ধি: অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়ানোর একটি কারণ হতে পারে।
ওষুধ: থিওফিলিন, সাইক্লোস্পোরিন, লেভোডোপা ইত্যাদি ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়াতে পারে।
রোগ: কিডনি রোগ, থাইরয়েড রোগ, লিভারের রোগ ইত্যাদিতেও ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়ে।
ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়লে গাউট, কিডনি স্টোন, কিডনি রোগ ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে তাকে হাইপারইউরিকেমিয়া বলা হয়। হাইপারইউরিকেমিয়া গাউট, কিডনিতে পাথর এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা স্বাভাবিক রাখা জরুরি।
ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে করণীয় ইউরিক অ্যাসিড কমানোর জন্য প্রথমে প্রোটিন–জাতীয় খাবার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় প্রোটিনের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত। মানুষের উচিত নিজের ওজন অনুযায়ী প্রোটিন গ্রহণ করা। একজন মানুষ সুস্থ থাকলে প্রতিদিন ০.৮ গ্রাম প্রোটিন প্রতি কেজি শরীরের ওজনের হিসাবে গ্রহণ করা উচিত। অর্থাৎ, একজন ৫০ কেজি ওজনের মানুষের ৪০ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত। এটা মানুষের জন্য নিরাপদ মাত্রা হিসেবে ধরা হয়। ওজন কমাতে চেষ্টা করুন। ওজন এমন বিষয় যে আপনার শরীরে ওজন বেশি হলে নানা ধরনের সমস্যা হতে থাকে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। যেহেতু অ্যালকোহলে পিউরিন থাকে যার কারণে ইউরিক অ্যাসিড বাড়ে, এ জন্য অ্যালকোহল গ্রহণ পরিহার করুন। ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, এমন কিছু খাবার ফলের মধ্যে পেয়ারা, আমলকী, কমলা, মাল্টা, আনারস, লেবু—অর্থ্যাৎ ভিটামিন সি–যুক্ত ফল খুব ভালো, যা নিয়মিত খাওয়া উচিত।
সবজির মধ্যে, ডাঁটা, কচু, পালংশাক, লাউ, শসা, চালকুমড়া ভালো। বাদাম খাওয়াতেও সমস্যা নেই; কাজুবাদাম, পেস্তাবাদাম, আখরোট ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা এবং নিয়মিত ব্যায়াম করাও ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। পথ্য: ইউরিক অ্যাসিড কমানোর জন্য খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও একটি পথ্য বেশ উপকারে আসবে। সেটা হলো তেজপাতা ভেজানো পানি! দুই লিটার পানিতে ১০–১২টি তেজপাতা দিয়ে জ্বাল দিতে হবে, যতক্ষণ না পানিতে তেজপাতার হালকা হলুদ রং আসে। রং এলেই সেই পানি ছেঁকে একটি কাচের বোতলে স্বাভাবিক অবস্থায় রেখে দেবেন। সেই পানি থেকে প্রতিদিন দুই কাপ পানি সকালে ও বিকেলে পান করবেন। এই তেজপাতার পানি এক মাস রেখে দিলেও নষ্ট হবে না, খাওয়ার সময় গরম করারও প্রয়োজন হয় না।
লেখক: খাদ্য ও পথ্যবিশেষজ্ঞ; প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র
ছবি: পেকজেলসডটকম
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।