আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দক্ষিণ এশিয়ার আকাশ শক্তির মানচিত্রে এক নাটকীয় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে পাকিস্তান। চীনের পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ ফাইটার J-35A বিমান ক্রয়ের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে পাকিস্তান সামরিক প্রযুক্তিতে একটি ঐতিহাসিক ঝাঁপ দিয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত পাকিস্তান এয়ার ফোর্সের (PAF) এয়ার কমোডোর জিয়া উল হক শামশির মতে, এই ফাইটার জেট পাকিস্তানকে ভারতের বর্তমান এয়ার ইনভেন্টরির তুলনায় “১২ থেকে ১৪ বছর” এগিয়ে রাখবে।
Table of Contents
J-35A: পাকিস্তান এয়ার ফোর্সের গেম-চেঞ্জার
J-35A হচ্ছে শেনিয়াং এয়ারক্রাফট কর্পোরেশন কর্তৃক নির্মিত চীনের দ্বিতীয় পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ যুদ্ধবিমান, যা বিশেষভাবে রপ্তানির জন্য তৈরি। এটি কম রাডার দৃশ্যমানতা, উন্নত এভিওনিক্স, ইন্টারনাল ওয়েপন বেস, এবং নেটওয়ার্ক-কেন্দ্রিক ক্ষমতা সহ উচ্চ হুমকিপূর্ণ অঞ্চলেও মিশন সম্পাদনে সক্ষম। চীনের J-20 এর তুলনায় এটি বিদেশি মিত্রদের জন্য উন্নত এক্সপোর্ট সংস্করণ।
২০২৫ সালের মধ্যেই পাকিস্তানে প্রথম J-35A ইউনিট আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা পূর্বে নির্ধারিত সময়ের তুলনায় অনেক আগেই। ইতোমধ্যে পিএএফের পাইলটদের প্রশিক্ষণের জন্য চীনে পাঠানো হয়েছে, যা ডিলটির দ্রুত অগ্রগতির প্রমাণ।
আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্যে J-35A এর প্রভাব
বর্তমানে ভারতের এয়ার ফোর্স নির্ভর করছে Su-30MKI এবং Rafale এর মতো ৪.৫ প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের ওপর, যেগুলো স্টেলথ সক্ষমতা ও পূর্ণাঙ্গ ফিফথ-জেন ইন্টিগ্রেশনের অভাবে ভোগে। এর বিপরীতে J-35A পাকিস্তানকে একটি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান দিবে যা এয়ার সুপেরিয়রিটি ও প্রেসিশন স্ট্রাইক মিশনে অতুলনীয়।
চীন-পাকিস্তানের সামরিক সহযোগিতার প্রতিফলন এই ডিল, যা চীনের গ্লোবাল স্টেলথ ফাইটার মার্কেট দখলের প্রচেষ্টার অংশ। Lockheed Martin এর এক পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে কিভাবে আধুনিক যুদ্ধবিমান সামরিক ভারসাম্য গঠনে ভূমিকা রাখে।
প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য ও যুদ্ধ সক্ষমতা
অস্ত্র ও স্টেলথ ক্ষমতা
প্রতিটি ইন্টারনাল বেতে দুটি PL-15 মাঝারি পাল্লার এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল বহনের সক্ষমতা রয়েছে, যা রাডার ক্রস-সেকশন কম রাখে। বাহ্যিক হার্ডপয়েন্টগুলিও নির্দিষ্ট মিশনের জন্য বিভিন্ন অস্ত্র বহনে ব্যবহৃত হতে পারে।
ক্যারিয়ার ক্যাপাবিলিটি
J-35A একটি ক্যারিয়ার-সক্ষম যুদ্ধবিমান, অর্থাৎ এটি চীনের পরবর্তী প্রজন্মের এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ারে মোতায়েন করা যাবে।
PAF এর আধুনিকীকরণ কৌশল
পাকিস্তানের বর্তমান এয়ার ফোর্সের বহরে রয়েছে: JF-17 Thunder (১৫৬ ইউনিট), F-16 (৭৫ ইউনিট), J-10C (২০+ ইউনিট), Mirage III/5 এবং F-7PG। এছাড়াও রয়েছে AEW&C, Il-78MP রিফুয়েলার এবং বিভিন্ন UAV। সম্প্রতি পুরাতন Mirage 5 ও F-16 ধাপে ধাপে অবসরে পাঠানোর পরিকল্পনা শুরু হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা সমীকরণে প্রভাব
চীন যখন J-20 ব্যবহার করছে এবং পাকিস্তান পাচ্ছে J-35A, তখন ভারতের সামনে দাঁড়াচ্ছে দ্বিমুখী হুমকি। নিজের নিরাপত্তা বজায় রাখতে ভারতের হয়তো দ্রুত AMCA প্রকল্পে গতি আনতে হবে বা বিকল্প উৎস থেকে ফিফথ-জেন যুদ্ধবিমান সংগ্রহ করতে হবে।
J-35A: একটি কৌশলগত লাফ
এই অর্জন শুধুমাত্র একটি নতুন যুদ্ধবিমান নয়, বরং একটি প্রতীক — যা বোঝায় পাকিস্তানের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, কূটনৈতিক কৌশল, ও ভবিষ্যৎ যুদ্ধনীতি।
J-35A সম্পর্কিত প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
- J-35A কী?
J-35A হচ্ছে একটি চীনা পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ ফাইটার জেট যা মিশ্র যুদ্ধ ক্ষমতা এবং স্টেলথ প্রযুক্তির জন্য পরিচিত। - ভারতের তুলনায় J-35A কতটা আধুনিক?
J-35A উন্নত এভিওনিক্স, সেন্সর ফিউশন ও স্টেলথ ক্ষমতার কারণে Su-30MKI ও Rafale এর চেয়ে অনেক এগিয়ে। - পাকিস্তান কখন J-35A পাবে?
২০২৫ সালের মধ্যেই প্রথম J-35A ইউনিট পাকিস্তানে পৌঁছাতে পারে। - চীন J-20 রপ্তানি না করে J-35A কেন করছে?
J-20 শুধুমাত্র PLAAF এর জন্য সংরক্ষিত, কিন্তু J-35A রপ্তানি উপযোগী করে তৈরি। - J-35A কি ক্যারিয়ার ফাইটার?
হ্যাঁ, এটি ক্যারিয়ার-সক্ষম ডিজাইন যা সমুদ্রে মোতায়েনযোগ্য।
- J-35A কী ধরণের অস্ত্র বহন করতে পারে?
PL-15 মিসাইল, প্রেসিশন বোমা ও অ্যান্টি-শিপ মিসাইল বহনের ক্ষমতা রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।