জুমবাংলা ডেস্ক : আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় নেত্রকোনা জেলায় এবার চাল কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে এবং দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকের চোখে মুখে দেখা দিয়েছে হাসির ঝিলিক।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, নেত্রকোনায় নানাবিধ কারণে শত শত হেক্টর জমি অনাবাদি পড়ে থাকতো।
‘এক ইঞ্চি জমিও পতিত রাখা যাবে না’, প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা, কৃষি বিভাগের নানা রকম প্রচার প্রচারণা, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী, যান্ত্রিকীকরণ, প্রণোদনা, কৃষি খাতে বিপ্লব এবং সময়ে চাহিদা পূরণে কৃষকেরা অনাবাদি পতিত জমি চাষাবাদে ক্রমশ উৎসাহিত হয়ে উঠছে। গত কয়েক বছরে নেত্রকোনার দুই হাজার ৯৫৫ হেক্টর অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। চলতি রবি মৌসুমে নেত্রকোনা জেলায় ২৬৫ হেক্টর জমিতে চাল কুমড়ার আবাদ করা হয়েছে।
এ বছর চাল কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজার মূল্য ভালো পাওয়ায় চাষিরাও বেশ খুশি। কীটনাশকমুক্ত এই চাল কুমড়া স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে প্রতিদিন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ আশা করছে, জেলায় এ বছর আনুমানিক সাড়ে ছয় হাজার টন চাল কুমড়া উৎপাদিত হবে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ২৬ কোটি টাকা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার হীরাকান্দা, হাতিমঞ্জি, রহিমপুর, চান্দুয়াইল, বাদাম তৈল, পাল পাড়া, ধোপা পাড়া, চন্ডিগড়, বেলতলী কোনা পাড়া, বারহাট্টা উপজেলার ধলপুর, সিংধাসহ ৩০টি গ্রামে এবার রবি শস্যের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধান চাষের চেয়ে শাক-সবজির চাষ বেশি লাভজনক হওয়ায় অনেকেই তাদের জমিতে চাল কুমড়া, লাউ, টমেটো, ফুল কফি, বাঁধাকপি ও ডাটাসহ বিভিন্ন জাতের শাক-সবজির চাষ করেছেন।
কৃষি বিভাগ জানায়, প্রতি হেক্টর জমিতে ২৫ থেকে ২৬ মেট্রিক টন চাল কুমড়া উৎপাদিত হচ্ছে। প্রতি ১০ শতক বা এক কাঠা জমিতে ৫০ থেকে ৬০ মণ চাল কুমড়া উৎপাদিত হয়। স্থানীয় পাইকারদের কাছে প্রতিটি চাল কুমড়া গড়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে এক কাঠা জমি থেকে কৃষকের আয় হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।
কলমাকান্দা উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী নরল্লাপাড়া গ্রামের কৃষক শফিকুল আলম জুঁই বলেন, এক সময় এ সমস্ত সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় শত শত একর জমি অনাবাদি, পতিত কিংবা পড়া অবস্থায় পড়ে থাকতো। ফলে এলাকার মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার অভাব লেগেই থাকতো। এলাকার হত-দরিদ্র কেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ একটু সচ্ছল স্বাভাবিক জীবনধারণের জন্য নিজ এলাকা ছেড়ে কাজের সন্ধানে রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় চলে যেতেন। আবার অনেকেই কাজ না পেয়ে সীমান্তে চোরাকারবারসহ নানা অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকতেন।
বর্তমানে অনাবাদি, পতিত বা পড়া জমিগুলো চাষাবাদের আওতায় আসায় ধানসহ নানা ধরনের শাক-সবজির আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকেরা বাড়ির আঙ্গিনায় বা অনাবাদি জমিতে লাউ, শসা, বেগুন, জিঙ্গা, কফি, টমেটো, চাল কুমড়াসহ নানা ধরনের রবিশস্য আবাদ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন।
তিনি আরও বলেন, গত বছর দেড় একর জমিতে চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া ও ফুল কপির আবাদ করে নয় লাখ টাকা আয় করেছিলাম। এবার আড়াই একর জমিতে চাল কুমড়া, টমেটো, বেগুন ও বাদাম চাষ করেছি। এ পর্যন্ত দুই লক্ষ ৭৫ হাজার টাকার চাল কুমড়া, টমেটো, বেগুন বিক্রি করেছি। আশা করছি, এ বছর ২০ লাখ টাকা আয় হবে।
রংছাতি ইউনিয়নের কালিহালা গ্রামের কৃষক সায়েদুর রহমান জানান, আমি ৫ কাটা জমি বর্গা নিয়ে কুমড়া চাষ করেছি। এই পর্যন্ত ৩০ হাজার টাকার কুমড়া বিক্রি করেছি।
বারহাট্টা উপজেলার ধলপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম জানান, আমার অনেক জমি পতিত পড়ে থাকতো। এই বছর ৩০ কাটা জমিতে চাল কুমড়া করছি। ভালো ফলন হয়েছে। স্থানীয় পাইকাররা জমি থেকেই মণ প্রতি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বসত বাড়ির আশপাশের জমি এবং অনাবাদি, পতিত কিংবা পড়া জমিতে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজির আবাদ বাড়াতে কৃষি বিভাগ স্থানীয় কৃষকদের নানা ধরনের পরামর্শ, প্রণোদনা, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, কৃষি যান্ত্রিকী করণ ও প্রদর্শনী স্থাপনের মাধ্যমে কৃষকদের ব্যাপক উদ্বুদ্ধকরণ করা হচ্ছে।
লক্ষ টাকার গহনা কিনলেও কখনও কি যাচাই করেছেন আসল নাকি নকল? জানুন সোনা চেনার উপায়
তিনি আরও বলেন পতিত জমিতে ভালা শাকসবজি উৎপাদিত হওয়ায় কৃষকেরা দিন দিন শাকসবজি আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ফলশ্রুতিতে নেত্রকোনায় দুই হাজার ৯৫৫ হেক্টর অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।