বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : বিশ্বকে আবিষ্কারের নেশায় ছুটছে মানুষ। বিজ্ঞানের বদৌলতে মানুষ পৌঁছে যাচ্ছে চাঁদ কিংবা সমুদ্র গভীরে। চাঁদে যাওয়ার ঘটনা নতুন নয়, এর আগেও অনেকেই পা রেখেছেন চাদের মাটিতে। চাদের মাটিতে যেসব মহাকাশচারী ও বিজ্ঞানীরা পা রেখেছেন, তারা অনেকেই ফেলে এসেছেন নানা জিনিসপত্র। কেউ ফেলে এসেছেন ল্যান্ডার, পারিবারিক ছবি, রোভার, পতাকা, ভাঙা যন্ত্রাংশ, গলফ বল ইত্যাদি।
চাঁদের মাটিতে মহাকাশচারীদের যেসব জিনিস ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে, তার বেশিরভাগ রেখে এসেছেন আমেরিকার অ্যাপোলো অভিযানের মহাকাশচারীরা। নানা সময়ে তাদের অভিযানের ফলে চাঁদে প্রায় দুই লক্ষ বর্জ্য ফেলে এসেছেন তারা। চাঁদে সবচেয়ে বেশি দেখতে পাওয়া যায় মলের ব্যাগ। চাঁদে ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মহাকাশচারীর ফেলে আসা ৯৬টি মলের ব্যাগ। ফেরার সময় অতিরিক্ত ওজন এবং নিচে আসার সময় যেন কোনো দুর্ঘটনা না হয় তাই এসব রেখে এসেছেন তারা। নাসার দাবি, চাঁদে ফেলে আসা এসব ব্যাগ এখনো বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে।
চাঁদে যারা প্রথম পা রেখেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম এডউইন অলড্রিন। এক টুইট বার্তায় এই মহাকাশচারী জানান, ভবিষ্যতে আমার মলভর্তি ব্যাগ যিনি খুঁজে পাবেন, তার জন্য খুব খারাপ লাগছে। তিনি চাঁদে পা রাখা দ্বিতীয় ব্যক্তি হলেও চাঁদের মাটিতে সর্বপ্রথম মূত্রত্যাগ করেছিলেন তিনিই।
মহাকাশ বিশেষজ্ঞ টিসেল মুইর হারমোনির লেখা বই ‘অ্যাপোলো টু দ্য মুন: এ হিস্ট্রি ইন ফিফটি অবজেক্টস’ থেকে জানা যায়, অলড্রিনের প্রস্রাব রাখার ব্যাগটি চাঁদের বুকে ফেটে যায় এবং তার প্রস্রাব চাঁদের মাটিতে ছড়িয়ে পড়ে।
এছাড়াও চাঁদের মাটিতে দেখা মেলে আমেরিকার পতাকার। ১৯৬৯ সালের ১৬ জুলাই অ্যাপোলো-১১ অভিযানে গিয়ে চাঁদের মাটিতে দেশের পতাকা রেখে এসেছিলেন আর্মস্ট্রং এবং অলড্রিন। নাসার দাবি, রেখে আসা পতাকা চাঁদের আলো এবং অতিবেগুনি রশ্মির জন্য অনেকটা বিবর্ণ হয়ে গিয়েছে।
অ্যাপোলো-১৫ অভিযানে গিয়ে মহাকাশচারী ডেভিড স্কট চাঁদে ফেলে এসেছিলেন বাজপাখির পালক ও হাতুড়ি। তিনি পরীক্ষা করে দেখেন যে, নির্দিষ্ট উচ্চতা থেকে হাতুড়ি ও পাখির পালক ফেলে দিলে সেটি কত সময় আগে পড়ে চাঁদের বুকে পড়ে। যদিও পালক ও হাতুড়ি একই সময় চাঁদের বুকে পড়েছিল। এখনো সেসব রয়েছে চাঁদের বুকেই।
১৯৭২ সালে অ্যাপোলো-১৬ অভিযানের জন্য মহাকাশচারী চার্লস ডিউক চাঁদে গিয়েছিলেন। সর্বকনিষ্ঠ মহাকাশচারী হিসেবে ৩৬ বছরে চাঁদে পা রাখেন তিনি। পৃথিবীতে রেখে গিয়েছিলেন স্ত্রী ডরোথি মেড ক্লাইবোর্ন এবং দুই পুত্রকে। চাঁদে যাওয়ার সময় সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন তাদের একটি ফ্যামিলি ফটো। যা রেখে এসেছেন চাঁদের বুকেই।
আর্মস্ট্রং চাঁদে প্রথম পা রাখলেও চাঁদে একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে গলফ খেলেছিলেন অ্যালান শেপার্ড। অ্যালান ছিলেন পেশাদার গলফ খেলোয়াড়। অ্যাপোলো-১৪ অভিযানের সময় নাসাকে অনুরোধ করে দুইটি গলফ বল ও ক্লাব নিয়ে যান তিনি। চাঁদে এসব নিয়ে যাওয়ার পর সজোরে বল দুইটিকে আঘাত করেন এবং তা অনেক দূরে গিয়ে পড়ে বলে জানান অ্যালান। এই ঘটনা লিপিবদ্ধ আছে অ্যালানের আত্মজীবনীতেও।
আমেরিকার একজন ভূতাত্ত্বিক ছিলেন যার নাম ইউজিন শুমেকার। অসংখ্য গ্রহ ও ধুমকেতু আবিষ্কার করেছিলেন তিনি। চাঁদে রয়েছে তার অস্থিভস্ম। নাসার অ্যাপোলো-১১ মিশনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ইউজিন। তিনি প্রশিক্ষকও ছিলেন মহাকাশচারীদের। তিনিও যেতে চেয়েছিলেন চাঁদে। অ্যাডিসন রোগে আক্রান্ত হয়ে ভেঙে যায় সেই স্বপ্ন। তাই ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই নাসার কার্যালয়ে বসে বাইরে থেকেই চাঁদের পিঠে মানুষের প্রথম পদচারণা দেখেছিলেন ইউজিন শুমেকার। ১৯৯৭ সালের জুলাই মাসে তিনি সস্ত্রীক পৌঁছেছিলেন পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার প্রত্যন্ত প্রান্তে ট্যানামি ট্র্যাকে উল্কাপিণ্ডের আঘাতে তৈরি হওয়া নতুন গহ্বরের সন্ধানে। সেখানেই গাড়ির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে মৃত্যু হয় ইউজিনের। এরপর ১৯৯৮ সালে চাঁদের নাসার লুনার প্রসপেক্টর একটি পলি কার্বোনেটের ক্যাপসুলে পিতলের পাত্রে রাখে ইউজিনের অস্থিভস্ম। নাম, জন্ম ও মৃ্ত্যুতারিখ এবং ‘রোমিও জুলিয়েট’- এর একটি অংশ সেই ক্যাপসুলে লেখা ছিল। ১৯৯৯ সালের ৩১ জুলাই চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে একটি গহ্বরে ক্র্যাশ ল্যান্ডিং করানো হয় লুনার প্রসপেক্টরকে। আঘাতের তীব্রতায় খণ্ডিত প্রসপেক্টর থেকে বেরিয়ে আসে ক্যাপসুল। চাঁদের মাটিতে মিশে যায় ইউজিনের অস্থিভস্ম।
সুপারহিট ‘কাভি খুশি কাভি গাম’ ছবির যে ভুলটি খেয়াল করেননি কখনো
অ্যাপোলো-১৫-র মহাকাশচারীরা চাঁদে ‘ফলেন অ্যাস্ট্রোনট’ নামে একটি অ্যালুমিনিয়ামের ভাস্কর্য চাদে রেখে আসেন। সেই ভাস্কর্য তৈরি করেছিলেন বেলজিয়ামের শিল্পী পল ভ্যান হোয়েডনক। তারই স্মৃতি হিসেবে চাঁদে এই ভার্স্কয রেখে এসেছিলেন অ্যাপোলো-১৫ অভিযানের মহাকাশচারীরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।