জুমবাংলা ডেস্ক : ইলিশের বড় বাজার চাঁদপুরে ভরা মৌসুমেও ইলিশের দাম চড়া। গত বছরের তুলনায় এবার এক কেজি সাইজের প্রতিমণ ইলিশ সাত-আট হাজার টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এক কেজি সাইজের ইলিশের মণ বিক্রি হয়েছে ৩৬-৩৮ হাজার টাকা। দেড় কেজি সাইজের ইলিশের মণ বিক্রি হয়েছে ৪০-৪২ হাজার টাকা। এবার দাম বেশি হওয়ায় হতাশ ক্রেতারা।
রবিবার (০২ অক্টোবর) সকালে চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছের আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, ডাকাতিয়া নদীর পাড়ের এই বাজারের ঘাটে নেই কোনও ফিশিং বোট। বাজারে মোটামুটি ইলিশ থাকলেও ক্রেতা বেশি। মাছের দামও বেশি। দেড় কেজি সাইজের ইলিশের কেজি এক হাজার ৪০০-৫০০, এক কেজি সাইজের ইলিশ এক হাজার ২০০, ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ৮৫০, এর চেয়ে ছোট ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা। তবে গত বছর একই সাইজের ইলিশের কেজি ২০০-২৫০ টাকা কম ছিল। সে হিসাবে সব সাইজের ইলিশের দাম বেশি।
একই দিন বিকালে রাজধানীর কাওরান বাজারের মাছের আড়তদার মন্টু মিয়া জানিয়েছেন, রবিবার মাছের আমদানি বেশি ছিল। পাইকারিতে দেড় কেজি সাইজের ইলিশের কেজি এক হাজার ২০০-৩০০, এক কেজি সাইজের ইলিশ ৮৫০-৯০০ ও ৭০০-৮০০ গ্রামের ইলিশের কেজি ৫০০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খুচরা বাজারে প্রকারভেদে ৫০-১০০ টাকা বেশিতে ইলিশের কেজি বিক্রি হয়েছে।
চাঁদপুরে এ বছর যে কারণে ইলিশের দাম বেশি
জেলে ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাগর অঞ্চলে ইলিশ কম ধরা পড়ছে। এছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে চাঁদপুরের বাজারে ইলিশ কম আসছে। সেইসঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে ইলিশের বাজারে।
দেড় কেজি সাইজের ইলিশের কেজি এক হাজার ৪০০-৫০০ টাকা
চাঁদপুর বড় স্টেশন মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সবে বরাত সরকার বলেন, ‘গত কয়েক বছর চাঁদপুরের নদী অঞ্চলে ইলিশ কম পাওয়া যাচ্ছে। অন্যান্য বছর ভোলা, বরিশাল, হাতিয়া ও সন্দ্বীপসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে এই সময়ে প্রচুর ইলিশ আসতো। কিন্তু এ বছর কম ইলিশ আসছে। কারণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় ওসব এলাকা থেকে সহজে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাছ যাচ্ছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ইলিশ ক্রেতা ও পাইকাররা চাঁদপুরে কম আসছেন। তারা উপকূলীয় অঞ্চল থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে দ্রুত সময়ে মাছ ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছেন। যে কারণে চাঁদপুরের বাজার থেকে ঢাকায় ইলিশের দাম কম।’
চাঁদপুর বড় স্টেশন বাজারের আড়তদার ইমান হোসেন গাজী বলেন, ‘দাম না কমার মূল কারণ হচ্ছে মাছ কম ধরা পড়ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর সাগর মোহনা থেকে কম মাছ চাঁদপুর আসছে। আগে অমাবস্যা-পূর্ণিমায় যে পরিমাণ মাছ ধরা পড়তো তা এখন ধরা পড়ছে না। এখন মাছ ধরার মৌসুম। সব জেলে সাগরে অবস্থান করছেন। দুই-তিন দিন পর ফিরবেন। তখন চাঁদপুরের বাজারে প্রচুর ইলিশ আমদানি হবে বলে আশা করছি আমরা।’
ইলিশের দাম বেশি হওয়ায় যা বলছেন ক্রেতারা
মৌসুমের শুরু থেকে এ বছর ইলিশের দাম ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। তবে বেশি মাছ ধরা পড়লে দাম কিছুটা কমে। এতে সন্তুষ্ট নন ক্রেতারা। কারণ গত বছরের তুলনায় এবার ইলিশের দাম অনেক বেশি।
ইলিশ কিনতে ঢাকা থেকে চাঁদপুরে আসা চাকরিজীবী রকিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কয়েকজন ইলিশ কিনতে এসেছি। ভেবেছিলাম, কম দামে একমণ তাজা ইলিশ কিনবো। কিন্তু এখানে ঢাকার চেয়েও দাম বেশি। এটি অস্বাভাবিক। অন্যান্য বছর এখানে ইলিশের দাম কম ছিল।’
ইলিশ কিনতে ঢাকা থেকে আসা জুঁই আক্তার বলেন, ‘ইলিশের জেলা চাঁদপুর। এখানের বড় স্টেশন বাজারে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারি ও খুচরা ক্রেতারা মাছ কিনতে আসেন। তাই হয়তো দাম বেশি। তবে ইলিশ ব্যবসায়ীরা দাম নিয়ে কারসাজি করছেন কিনা তাও খতিয়ে দেখা দরকার।’
অনলাইনে কমেছে ইলিশ বেচাকেনা
চাঁদপুরের বাজার থেকে অন্যান্য স্থানে কম দামে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। তাই যারা অনলাইনে এতদিন চাঁদপুর থেকে ইলিশ কিনতেন তাদের অনেকে এখন কেনা কমিয়ে দিয়েছেন বলে জানালেন অনলাইনের ব্যবসায়ীরা।
অনলাইনে ইলিশ বিক্রেতা তানিয়া ইসলাম বলেন, ‘গত বছর অনলাইনে অর্ডার পেয়ে প্রচুর ইলিশ বিক্রি করেছিলাম। গত বছরের তুলনায় এবার অনেক কম বিক্রি করেছি। মাছের দাম বেশি। অনলাইনে ক্রেতাও কম।’
অনলাইনে ইলিশ বিক্রেতা ফাতেমাতুজ জোহরা বন্যা বলেন, ‘সাধারণত ঝামেলার ভয়ে অনলাইনে ইলিশের অর্ডার দেন ক্রেতারা। অনেক ক্রেতা আছেন; এর মধ্যে কেউ কেউ ৬০-৭০ হাজার টাকার ইলিশ কেনেন। চাঁদপুর থেকে দুই বছর ধরে অনলাইলে ইলিশ বিক্রি করছি। গত বছরের চেয়ে এ বছর বেশি বিক্রি করেছি। তবে এবার দাম বেশি। এখন বেচাকেনা কিছুটা কম। তবে আবারও বাড়তে পারে।’
তিনি বলেন, ‘ইলিশ বিক্রি করতে এসে দেখেছি, প্রচুর চাহিদা। ভালো জিনিসের দাম বেশি হলেও মানুষ কেনেন। হোক এক হাজার ৮০০ কিংবা দুই হাজার টাকা কেজি। যাদের সামর্থ্য আছে তারা দাম দেখেন না, ভালো জিনিসটাই কেনেন।’
ইলিশ কিনে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ আছে
গত কয়েক বছর চাঁদপুরে ইলিশ ধরা পড়ছে কম। চাঁদপুরের নদী অঞ্চলের বেশিরভাগ মাছ নদীর পাড়ের আড়তগুলোতে বিক্রি হয়ে যায়। এ অবস্থায় চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছ বাজারে আসা অধিকাংশ ইলিশ সাগর মোহনা তথা নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার। কিন্তু এখানের বিক্রেতারা এসব মাছকে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার ইলিশ বলে বিক্রি করছেন। এতে ইলিশ না চেনা ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছেন।
নদী ও সাগরের ইলিশ চিনবেন
আনেন জেলেরা। এজন্য অনেক সময় নরম হয়ে যায়। তবে পদ্মা-মেঘনার ইলিশ তাজাই বাজারে চলে আসে।
জেলে ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাগর অঞ্চলে ইলিশ কম ধরা পড়ছে
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান বলেন, ‘যতই বর্ণনা দেওয়া হোক—নদী ও সাগরের ইলিশ সহজেই চিনতে পারেন অভিজ্ঞরা। ইলিশ কিনতে গেলে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘পদ্মা-মেঘনা নদীর মিঠাপানিতে ইলিশ কাঙ্ক্ষিত খাবার পায়। মাছ শিকারের পর বাজারে আনতে বেশি সময় লাগে না। এ কারণে উজ্জ্বলতা বেশি তথা চকচকে রূপালি বর্ণের থাকে। ইলিশগুলো অপেক্ষাকৃত গোলাকার তথা চ্যাপ্টা হয়। সব মিলে মাছগুলো তাজা থাকে।’
বাজারের মধ্যেই উদ্দাম ড্যান্স দিলো আরেক রানু মন্ডল, তুমুল ভাইরাল ভিডিও
ড. আনিছুর রহমান বলেন, ‘সাগরের ইলিশের উজ্জ্বলতা কম থাকে এবং কিছুটা ধূসর বর্ণের হয়। কিছুটা সরু হয়। সাগর থেকে যে মাছগুলো আসে সেগুলো বরফ দিয়ে রাখা হয়। চোখ একটু ভেতরে থাকে এবং কিছুটা লালচে বর্ণের হয়। সাগর থেকে একশ কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দিয়ে ইলিশগুলো যখন এই অঞ্চলে এসে ধরা পড়ে তখন স্বাভাবিকভাবেই তার মধ্যে বর্ণ এবং স্বাদের কিছুটা পার্থক্য হয়ে থাকে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।