মিজানুর রহমান খান : নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহনকারী মশা লোকজনকে যতো কামড় দিয়ে থাকে তার ৩০ শতাংশই ঘটে দিনের বেলায় এবং ঘরের ভেতরে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন এই তথ্যের কারণে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে প্রচলিত ব্যবস্থাগুলোর বিষয়ে নতুন করে ভাবনা চিন্তার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
বর্তমান কর্মসূচিতে রাতের বেলায় মশার কামড়ানোর ওপরেই জোর দেওয়া হয় যে কারণে রাতের বেলায় কীটনাশক মেশানো মশারি টানিয়ে ঘুমানোর কথা বলা হয়।
এনোফিলিস নামের এক নারী মশার মাধ্যমে এই রোগটি ছড়িয়ে থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে ২০২০ সালে সারা বিশ্বে ২৪ কোটি দশ লাখ মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে সোয়া ছয় লাখেরও বেশি মানুষের, যার বেশিরভাগই ঘটেছে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে।
৩০% কামড় দিনের বেলায়
এতোদিন ধারণা করা হতো যে মশা সাধারণ রাতের বেলায় কামড়ায়।
তবে সম্প্রতি সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের রাজধানী বাঙ্গুইতে এবিষয়ে একটি গবেষণা পরিচালিত হয়েছে যাতে দেখা গেছে মশা দিনের বেলাতেও প্রচুর কামড়ায়।
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শহরের চারটি স্থান থেকে এই গবেষণার জন্য স্বেচ্ছাসেবীরা মশা সংগ্রহ করেন। যখনই কোনো মশা তাদের গায়ের ওপর বসেছে, কামড়ানো শুরু করার আগেই তাদেরকে ধরে কাঁচের খাঁচার ভেতরে রেখে দেওয়া হয়।
মশা সংগ্রহ করতে যারা কাজ করেছেন তাদের ম্যালেরিয়া-প্রতিরোধী ওষুধ দেওয়ার পাশাপাশি তাদেরকে ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়েছে।
এই গবেষণার জন্য আটটি ভিন্ন প্রজাতির প্রায় আট হাজারের মতো মশা সংগ্রহ করা হয় যেগুলো ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহন করছিল।
গবেষকরা বলছেন, মশার কামড়ানোর বেশিরভাগই ঘটে সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত। তবে তারা এটা দেখে বিস্মিত হয়েছেন যে এর ৩০ শতাংশ ঘটে দিনের বেলাতেই এবং ঘরে ও অফিস আদালতের ভেতরে।
মশার আচরণে পরিবর্তন
বাংলাদেশেও এধরনের কিছু গবেষণা হয়েছে যাতে অনেক মশার আচরণে পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে।
কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার, যিনি দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে মশা নিয়ে গবেষণা করছেন, তিনি বলেছেন নানা চাপের কারণে একটি মশার আচরণে পরিবর্তন ঘটে থাকে।
“আমরা জানি ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা সকালে ও সন্ধ্যায় কামড়িয়ে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি আমার এক গবেষণায় দেখেছি এডিস মশা এখন রাতেও কামড়ায়। এর অর্থ তার আচরণে পরিবর্তন ঘটেছে,” বলেন তিনি।
বাংলাদেশে ম্যালেরিয়ার প্রাথমিক বাহক এনোফিলিস মশার চারটি প্রজাতি- এনোফিলিস বাইমাই, এনোফিলিস ফিলিপেনিনসিস, এনোফিলিস তানডাইকা এবং এনোফিলিস মিনিমাস।
এছাড়াও রয়েছে আরো তিনটি সেকেন্ডারি ভেক্টর- এনোফিলিস একোনিটাস, এনোফিলিস এনোলারিস এবং এনোফিলিস ভেগাস।
এই সাতটি প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বড় ভেক্টর এনোফিলিস বাইমাই।
বিজ্ঞানী কবিরুল বাশার বলেন, এনোফিলিস বাইমাইর আচরণে এতোদিন দেখা গেছে যে এটি বনভূমির আশেপাশে পাহাড়ি অঞ্চলে বেশি থাকে এবং এটি ঘরের বাইরে কামড়াতে পছন্দ করে।
কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে এই মশাটির আচরণে পরিবর্তন ঘটছে।
“বাংলাদেশে পরিবেশগত কিছু পরিবর্তন ঘটছে। বনভূমি উজাড় হয়ে যাওয়ার কারণে এই মশাটিরও আচরণগত কিছু পরিবর্তন ঘটছে।”
তিনি বলেন, “এনোফিলিস মিনিমাস প্রজাতি বন জঙ্গলে যেসব বাড়িঘর আছে তার কাছাকাছি থাকতো। কিন্তু ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য সমস্ত বাসাতে কীটনাশকযুক্ত মশারি সরবরাহ করা হয়েছে। এর ফলে মশাটি চাপের মুখে পড়েছে এবং পরিণতিতে এটি তার চারিত্রিক কিছু পরিবর্তন ঘটিয়েছে।”
গবেষণায় দেখা গেছে মশারি দেওয়ার পরেও কিছু কিছু জায়গায় ম্যালেরিয়া হচ্ছে। এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে গবেষকরা দেখেন যে মশারির চাপের কারণে মশাটি তাদের আচরণের পরিবর্তন ঘটিয়ে ঘরের বাইরে কামড়াতে শুরু করেছে।
তবে বাংলাদেশে মশার কামড়ের কতো শতাংশ দিনে এবং কতো শতাংশ রাতে ঘটে থাকে এরকম সুনির্দিষ্ট কোনো গবেষণা হয়নি।
মি. বাশার বলেন, বন জঙ্গল এলাকাতে এনোফিলিসি মশা দিনের বেলায়ও কামড়াতে পারে।
“কারণ সেখানে অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ। একারণে মশা ভুল করে থাকে,” বলেন তিনি।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এনোফিলিস ভেগাস প্রজাতি দিনের বেলায় ঘরের ভেতরে বিশ্রাম নিতে পছন্দ করে। তাই এটি দিনের বেলাতেও ঘরের ভেতরে কামড়াতে পারে। সূত্র : বিবিসি বাংলা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।