জুমবাংলা ডেস্ক : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহিংসতায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা। ট্রাফিক বক্সে আগুন লাগানো, ভাঙচুরসহ নানা কর্মকাণ্ডে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ সদস্যরা। এখন নতুন করে রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে সাজাতে আধুনিকায়নের পরিকল্পনা চলছে।
এই পরিকল্পনার আওতায় ডিএমপির ৩৪০টি সিগন্যালকে আধুনিক করা হবে। হাতের ইশারায় নয়, এখন আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যাল অনুযায়ীই ট্রাফিকিং চলবে। এ ছাড়া, ২৫০টি ট্রাফিক বক্স তৈরি, ট্রাফিকের কারিগরি ইউনিটের ৩৯টি পদে ৬ হাজার জনবল নিয়োগ, লজিস্টিক সাপোর্ট এবং যুগোপযোগী আইন ও বিধিমালা তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে কাজ করে ট্রাফিক পুলিশ। তবে তারা দায়িত্ব পালন করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে না। সড়কের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব সরকারি প্রতিষ্ঠানকেও তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। বিশেষ করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, ডিটিসিএ, বিআরটিএ, বিআরটিসি, সেতু বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ডিএমপির ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে নতুন করে সাজাতে হলে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
ডিএমপির ট্রাফিক বিষয়ের গবেষক ও প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় মূলত অপারেশনাল ভূমিকা পালন করে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। কিন্তু ট্রাফিক অবকাঠামো, ট্রাফিক বিভাগের প্রকৌশলগত বিষয়গুলো, রাস্তায় চলাচলরত সব যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যানবাহন রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, রুট পারমিট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পার্কিং নীতিমালা, রাস্তায় গাড়ির ধারণ ক্ষমতা ও ব্যবস্থাপনা বিশ্লেষণ প্রভৃতি দায়িত্ব বিআরটিএ ও বিআরটিসির। ফুটপাত, পার্কিং নীতিমালা, বায়ুদূষণ, বাস-বে, বাস টার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশন, সরকারি ডাম্পিং স্টেশন, ট্রাফিক সিগন্যাল ও পথচারীদের নিরাপদ পারাপার, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করিডর ব্যবস্থাপনাসহ প্রায় সব বিষয়ের ব্যবস্থাপনা ঢাকা সিটি করপোরেশন, সেতু বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় করে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও ডিজিটাল সিগন্যাল ব্যবস্থাপনার জন্য বহু বছর ধরে হাজার হাজার কোটি টাকার নানা প্রকল্প নেওয়া হলেও তা সফল হতে পারেনি। নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ এখনো হাতের ইশারায় ট্রাফিকিং করে নগরবাসীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। অথচ ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে সরকারের ১১-১২টি প্রতিষ্ঠান সরাসরি জড়িত, কিন্তু সবাই ট্রাফিক বিভাগের ওপর দায় চাপিয়ে দেয়। ট্রাফিক বিভাগের উন্নয়নে ও আধুনিকায়নে বিশেষ করে ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে যুগোপযোগী ডিএমপি ট্রাফিক আইন ও বিধিমালা তৈরি করতে হবে। ডিএমপির আরও উন্নত ও প্রকৌশলগতভাবে উৎকৃষ্ট ট্রাফিক অবকাঠামো খুবই জরুরি।’
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীতে অতি গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ ট্রাফিক ইন্টারসেকশন রয়েছে ৩৪০টি। এই ট্রাফিক ইন্টারসেকশনের ব্যবস্থাপনা ও গতিশীল ট্রাফিকিংয়ের জন্য পুলিশ সদস্যদের রোদ, বৃষ্টি, ঝড়, তুফান ও বৈরী আবহাওয়া থেকে রক্ষার জন্য রিফ্লেক্টেড ট্রাফিক ক্যানোপি স্থাপনসহ অ্যাডাপ্টিভ ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম, আইটিএস, এআই, সাইবার সফটওয়্যার সংযোজন করে সমন্বিত ও অটোমেটেড ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা মহানগরবাসীকে উপহার দেওয়া দরকার। ট্রাফিক ইন্টারনেটসেকশন ব্যবস্থাপনা, যানবাহনের আধিক্যেও পরিমাপন ও শ্রেণীকরণ, নিরাপদ পথচারী ক্রসিংয়ের জন্য এই মুহূর্তে পোর্টেবল সিগন্যাল লাইট, ট্রাফিক সাইন, পরিবর্তনশীল বার্তা বোর্ড (ভিএমএস) স্থাপন, অ্যাডভান্সড ড্রাইভার অ্যাসিস্ট্যান্স সিস্টেম এবং ড্রাইভার মনিটরিং সিস্টেমসহ ট্রান্সপোর্ট মডেলিং সফটওয়্যারের ব্যবহার খুব জরুরি। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ রোড নেটওয়ার্ক বিশ্লেষণের জন্য ডিএমপি ট্রাফিক রিসার্চ ইউনিট সফলভাবে গবেষণা করছে।’
ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ পুলিশ সদর দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলাদেশে প্রথম ঢাকা মহানগরীর সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য আধুনিক ডিএআরসি সফটওয়্যারের মাধ্যমে সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে মহানগর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সফলভাবে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করেছে। ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য নতুন প্রকল্প গ্রহণ জরুরি। ঢাকা মহানগরীর রাস্তায় সব ইউ-টার্ন বিবেচনায় নিয়ে নতুনভাবে ডাইভারশন পয়েন্ট ও সময় অনুযায়ী একমুখী ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এবং ট্রাফিক সার্কুলেশন পরিকল্পনা যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সমন্বয় ও পরিকল্পনা ছাড়াই রোড পার্কিং, রাস্তার মধ্যে নির্দেশক পিলার স্থাপন ছাড়াই নানা উন্নয়নমূলক কার্যক্রম করে থাকে। এসবের জন্য জবাবদিহিমূলক নীতিমালা প্রণয়ন যানজট নিরসনে অবশ্যম্ভাবী।
স্বরাষ্ট্র থেকে সরানোর প্রতিক্রিয়ায় যা জানালেন এম সাখাওয়াত হোসেন
ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের রিসার্চ অনুযায়ী, ঢাকা মহানগরীর জন্য প্রায় ২৫০টি বিভিন্ন ক্যাটাগরির ট্রাফিক অফিস, ট্রাফিক বক্স, ট্রাফিক ইনফরমেশন ও সার্ভিস সেন্টার, ট্রাফিক এডুকেশন সেন্টার এবং ট্রাফিক ট্রেনিং পার্ক স্থাপন জরুরি। ডিএমপি ট্রাফিক কারিগরি ইউনিটে ৩৯টি পদ রয়েছে। আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য এসব পদে ছয় হাজার ট্রাফিক জনবল সংস্থাপন, লজিস্টিক সাপোর্ট, আধুনিক ট্রাফিক কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার স্থাপন করা দরকার। টেকসই ও আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ধরে রাখতে অবশ্যই ‘ডিএমপি ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও সড়ক নিরাপত্তা গবেষণা কেন্দ্র’ গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি অংশীজনদের সঙ্গে নিয়ে ট্রাফিক সচেতনতামূলক কার্যক্রম, ট্রাফিক মিডিয়া ও তথ্য সরবরাহ সেন্টার, ট্রাফিক মোবাইল লাইভ অ্যাপসহ বিভিন্ন দেশের আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর লক্ষ্যে দেশি-বিদেশি সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, প্রশিক্ষণ আয়োজনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও প্রকল্প নিতে হবে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের জন্য ট্রাফিক বিভাগের সদস্যদের সক্ষমতাবৃদ্ধির নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।