শাইখ সিরাজ : খাবার হিসেবে ডিম পছন্দ করে না এমন মানুষ কমই আছে। প্রোটিনের বড় উৎস হিসেবে তার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। তবে স্বাদ, জনপ্রিয়তা বা পুষ্টিগুণ নয়, ইদানীং কয়েক দিন পর পর ডিম হয়ে উঠছে ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। কার কী অদ্ভুত কারিশমায় মুরগির ডিমের দাম চলে যাচ্ছে সাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে।
মনে পড়ে, গত শতাব্দীর আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে মুরগির ডিমকে সাধারণের হাতের নাগালে আনতে প্রচার অভিযান শুরু করেছিলাম টেলিভিশনে। তখন এ দেশের মানুষের পুষ্টির অভাব ছিল। পুষ্টিহীনতার পেছনে অভাব ছাড়াও ছিল অভ্যাসের দোষ। গ্রামের কৃষক পরিবার সাধারণত ডিম খেতে চাইত না।
কারণ তাদের কাছে একটি মুরগি বা হাঁসের ডিম মানে ছিল একটি নতুন ছানা। হাটবাজারে নিয়ে বিক্রি করলেও দুটো টাকা ঘরে আসবে।
বেশ আগে হক চাচার (সাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হক) শ্যালক দায়িন আমাকে একবার অস্ট্রেলিয়ার একটি ম্যাগাজিন এনে দিয়েছিলেন। সেই পত্রিকায় খাঁচায় মুরগি লালন-পালনের ছবি ছিল।
এর কিছুদিন পরই রাজধানীর খিলগাঁওয়ে দেখা পাই মিসেস জামানের। তিনি তাঁর বারান্দায় খাঁচায় মুরগি পুষতেন। আমি তাঁর এই কার্যক্রম নিয়ে টিভির জন্য একটি ভিডিও চিত্র তৈরি করলাম ‘মিসেস জামানের মুরগির খামার’ নামে। সেখানে দেখালাম, একজন গৃহিণী চাইলেই বারান্দায় ছয় থেকে আটটি মুরগি লালন-পালন করতে পারেন, যা থেকে সহজেই পরিবারের প্রতিদিনের ডিমের চাহিদা মেটানো যেতে পারে। এই ভিডিও প্রচারের পর অনেক বেকার তরুণ-যুবক ঝাঁপিয়ে পড়লেন মোরগ-মুরগি লালন-পালন ও ডিম উৎপাদনে।
ধীরে ধীরে বিকশিত হলো পোলট্রিশিল্প। অনেক মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হলো। খাতটির সম্ভাবনা দেখে এক পর্যায়ে এগিয়ে এলেন বড় শিল্প উদ্যোক্তারাও। একসময় তাঁদের বিশাল বিনিয়োগের কাছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা হিমশিম খেতে শুরু করলেন। ক্রমে বড় উদ্যোক্তাদের হাতে চলে গেল পোলট্রির বাজার। অথচ চীনে দেখেছি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের নীতি সহায়তা দিয়ে তাঁদের স্বার্থ রক্ষা করেছে সরকার। কোনোভাবেই বড় উদ্যোক্তারা বাজার নিজেদের দখলে নিতে পারেননি।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য থেকে জানা যায়, আগের দশকের তুলনায় উৎপাদন বেড়ে প্রায় তিন গুণ হয়েছে। উৎপাদন অনেক বাড়লেও দাম কেন এত বাড়ছে? অর্থনীতির জোগান ও চাহিদার সূত্র কেন এখানে মিলছে না?
বিভিন্ন খামারির সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, উৎপাদন উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে একটি ডিমের উৎপাদন খরচই ১০ টাকার মতো। আর পরিবহন ব্যয় এবং পথে নানা রকম খরচে খুচরা পর্যায়ে ডিমের দাম অনেকটা বেড়ে যায়। গত বছরও আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে ডিমের দাম অযৌক্তিকভাবে বেড়ে যায়। সেই ডিমকাণ্ডের মূল বিষয়টি উঠে আসে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে। যা-ই হোক, ক্ষুদ্র উৎপাদনকারী ও সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষায় উৎপাদন থেকে খুচরা বাজারে সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরি। তা না হলে ডিম কিনতে সাধারণ মানুষ হিমশিম খেতেই থাকবে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে জাতীয় পুষ্টি পরিস্থিতিতেও।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।