জুমবাংলা ডেস্ক : জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের বিষয়ে সরকার একটি রূপরেখা তৈরি করেছে। এটি গাইডলাইন আকারে প্রকাশের প্রস্তুতি চলছে। এতে আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের বিষয়ে সরকারের উদ্যোগগুলো প্রতিফলিত হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারের এসব উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে—আন্দোলনে আহত হয়ে যারা কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন, তাদের আজীবন ভাতা দেওয়া হবে।
সূত্র বলছে, সরকারের ছয় উপদেষ্টা এই রূপরেখায় সম্মতি দিয়েছেন। এই উপদেষ্টাদের মধ্যে রয়েছেন— স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম, সমাজ কল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, অন্তর্বর্তী সরকার যে গাইডলাইন প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেখানে আহতদের চিকিৎসা, মানসিক স্বাস্থ্য, উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া, আইনি ব্যবস্থা, অর্থ সহায়তা, পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থান বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া আছে।
চিকিৎসা মিলবে আজীবন
আহতদের চিকিৎসা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, সব সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্য কার্ডধারীরা ফাস্ট ট্র্যাক সার্ভিসে চিকিৎসা পাবেন। অর্থাৎ সব সরকারি হাসপাতালে তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিকিৎসা দেওয়া হবে। একইসঙ্গে কার্ডধারী আহতরা সরকারি হাসপাতালে আজীবন বিনামূল্যে সব ধরনের চিকিৎসাসেবা পাবেন। সরকারি হাসপাতালে নির্দিষ্ট কোনও সেবা না পাওয়া গেলে বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক সেবার ব্যবস্থা করা হবে, যার অর্থ সরকার পরিশোধ করবে।
এছাড়া চিকিৎসার জন্য সুনির্দিষ্টভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বিএসএমএমইউ) নির্ধারণ করা হয়েছে, যেখানে সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। আর চিকিৎসার সুবিধার্থে আহতদের সঙ্গে থাকা স্বজন বা অ্যাটেন্ডেন্টদের সরকারি খরচে শাহবাগ এলাকায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিএসএমএমইউ’র পাশাপাশি অন্যান্য বিশেষায়িত হাসপাতাল, যেমন- জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) বা পঙ্গু হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটও আহতদের নিয়ে কাজ করবে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন অনেকে। এর মধ্যে রাজধানীর চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ছিলেন ৭৮ জন। আন্দোলনে গুলিতে চোখ নষ্ট হয়েছে চার শতাধিক ব্যক্তির। এর মধ্যে দুই চোখ হারিয়েছেন অনেকে। আর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) চিকিৎসাধীন আছেন ৯৮ জন। তাদের মধ্যে ২১ জনের হাত পা কাটা গেছে। কারও গুলিবিদ্ধ স্থানে মাংস প্রতিস্থাপন করা লেগেছে। এদের অনেকেরই বিদেশে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে। এখন পর্যন্ত ১০ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে পাঠানো হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যারা চোখে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, তাদের জন্য গানশট বিষয়ে অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে যদি উন্নত চিকিৎসার সুযোগ থাকে, তাহলে তাদের দেশে নিয়ে এসে অথবা আহতদের বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।
বিভাগীয় শহরে মিলবে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা
আন্দোলনে আহতদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আহতদের টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে প্রাথমিক মূল্যায়ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সাইকোথেরাপির ব্যবস্থা করা হবে। বর্তমানে একটি নম্বরে আহতদের জন্য সেবা চালু থাকলেও আরেকটি টেলিমেডিসিন-সেবা চালু করা হবে। এছাড়া একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আহত এবং তার পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার ব্যবস্থা করা হবে।
আহতদের বিদেশে চিকিৎসা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, আহতরা যেখানে চিকিৎসাধীন আছেন, তাদের সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল ‘বিদেশে পাঠানোর প্রয়োজনীয়তা’ উল্লেখ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেবেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত রিভিউ কমিটি পর্যালোচনা করে সুপারিশের ভিত্তিতে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আহতদের আইনি সহায়তা দেবে সরকার
আন্দোলনে নিহতদের পক্ষে সরকারের দেওয়া আইনিসেবা আহতদের ক্ষেত্রেও দেওয়া হবে। অর্থাৎ আহতরা চাইলে সরকার বাদী হয়ে মামলা করতে পারবে।
আহত হয়ে কর্ম ক্ষমতা হারানোরা পাবেন আজীবন ভাতা
আহতদের পুনর্বাসনের বিষয়ে বলা হয়েছে, গুরুতর আহতদের হাসপাতালে রেখে শারীরিক পুনর্বাসনের জন্য ফিজিওথেরাপি দেওয়া হবে। এছাড়া জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে শহীদ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা, পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে শহীদ পরিবারের নিকটতম কোনও সদস্যকে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির ব্যবস্থা করার জন্য বিভিন্ন অর্থনৈতিক বা সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে। শহীদ পরিবারের নিকটতম সদস্যদের চাকরির ব্যবস্থাও করা হবে।
এছাড়া, আহতদের মধ্যে যারা চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে অন্ধত্ববরণ করেছেন, কিংবা আংশিক দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন— তাদের পছন্দ অনুযায়ী, সামর্থ্য ও যোগ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।
পাশাপাশি আহতদের যারা পঙ্গুত্ববরণ করেছেন কিংবা অন্ধ হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন, তাদের আজীবন ভাতার ব্যবস্থা করা হবে। প্রয়োজনে তাদের পরিবারের একজনকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরিতে সহায়তা করা হবে। সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আহতদের বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে।
আন্দোলনে শহীদ পরিবার ও আহতদের পুনর্বাসনের জন্য মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদফতর’ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। এর অধীনে জুলাই আন্দোলনে শহীদ পরিবার ও আহতদের আজীবন সহায়তা ও পুনর্বাসন করা হবে বলে জানান তিনি। গত ৬ জানুয়ারি রেল মন্ত্রণালয়ে তিন উপদেষ্টার সঙ্গে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের বৈঠক শেষে তিনি এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
নাহিদ ইসলাম সেদিন আরও জানিয়েছেন, সরকার শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পর্যায়ক্রমে ৬৩৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রদান করবে। পরের সপ্তাহ থেকে গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের মাঝে ২৩২ কোটি ৬০ লাখ টাকা বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে। এই বরাদ্দ থেকে প্রতিটি শহীদ পরিবারের জন্য ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র রাখা হবে।
‘অটোমোবাইল সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার’ পদে চাকরির সুযোগ দিচ্ছে উত্তরা মটরস
তিনি বলেন, মোট বরাদ্দের বাকি ৪০৫ কোটি ২০ লাখ টাকা ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে দেওয়া হবে। এই অর্থ থেকে প্রতিটি শহীদ পরিবারকে ২০ লাখ টাকা দেওয়া হবে। আহতের ধরন বিবেচনা করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আর্থিক সহায়তাও প্রদান করা হবে। এছাড়া, আগামী জুলাই মাস থেকে গণঅভ্যুত্থানে গুরুতর আহতদের মাসিক ভাতা প্রদান করা হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গাইডলাইন তৈরির কাজ চলছে। এটি আগামী সপ্তাহের মধ্যে প্রস্তুত হতে পারে।
সাদ্দিফ অভি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।