জুমবাংলা ডেস্ক : ক্যান্সার আক্রান্ত ষাটোর্ধ্ব শহিদুল ইসলামকে চিকিৎসা করাতে নোয়াখালী থেকে চট্টগ্রাম নিয়ে গিয়েছিলেন ছেলে আবদুর রহিম। ডাক্তার দেখিয়ে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তারা বাড়ি ফিরছিলেন। তবে বন্যার কারণে ফেনীতে গাড়ি থেকে নেমে যেতে হয় তাদের। লালপোল এলাকায় এলে পানির তীব্র স্রোতের মধ্যে পড়েন বাবা ও ছেলে।
ছেলের হাত ধরেই সেই স্রোত পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বৃদ্ধ শহিদুল ইসলাম। কিন্তু স্রোতের তোড়ে শেষ পর্যন্ত রহিম বাবার হাত রাখতে পারেননি। তাঁর চোখের সামনেই বানের পানি ভাসিয়ে নিয়ে যায় বৃদ্ধ বাবাকে। এর পর থেকে বাবাকে লালপোলের বিভিন্ন এলাকায় পাগলের মতো খুঁজেছেন রহিম। অবশেষে দুই দিন পর রোববার লালপোলের একটু দূরেই মিলেছে বৃদ্ধ শহিদুল ইসলামে লাশ।
বাবার লাশ সামনে নিয়ে গতকাল লালপোল এলাকায় হাউমাউ করে কাঁদছিলেন আবদুর রহিম। সেখানে ছুটে আসেন শহিদুল ইসলামের আরেক ছেলে সাইফুল ইসলাম। বাবাকে হারিয়ে দুই ভাইয়ের কান্নায় তখন ভারী হয়ে উঠছিল আশপাশের পরিবেশ। লালপোল থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে পানিতে পড়ে নিখোঁজ ভাই কালাচান কর্মকারকে খুঁজছিলেন পলাশ কর্মকার। তিনি জানান, ফেনীর ছাগলনাইয়ার শান্তিরহাট বাজারে স্বর্ণের দোকান আছে তাদের। দোকানের স্বর্ণ নিরাপদ স্থানে রাখতে গিয়ে চার দিন আগে বন্যার পানিতে নিখোঁজ হন কালাচান। দিগ্বিদিক ঘুরেও গত চার দিনে ভাইয়ের কোনো হদিস পাননি। পরে অবশ্য তিনি ফেনীতে ভাইয়ের খোঁজ পান।
বন্যায় বিধ্বস্ত জনপদ ফেনীতে গতকাল এমনই সব দৃশ্য হৃদয়বিদারক দেখা গেছে নিয়মিত। এর মধ্যেই গতকাল ফেনী ও কুমিল্লাতে ভেসে উঠেছে তিন লাশ। শহিদুল ইসলাম ছাড়াও এদিন লালপোল এলাকায় ভেসে আসে অজ্ঞাত শিশুর লাশ। কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার রামনগরে পাওয়া গেছে ফরিদ মিয়ার (৬০) লাশ।
পরিচয় নিশ্চিত হওয়া শহিদুল ইসলামের বাড়ি নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর উপজেলার চরজব্বার গ্রামে। বাবা হারানো আবদুর রহিম বলেন, ‘ক্যান্সারের চিকিৎসা করাতে বাবাকে নিয়ে চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম। ফেরার পথে পড়ে গেছি বানের স্রোতে। বাবাকে শক্ত করে ধরে লালপোল এলাকা অতিক্রম করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পানির স্রোত বাবাকে ছিনিয়ে নেয় আমার হাত থেকে। বাবার এমন চলে যাওয়া মানতে পারছি না কিছুতেই।’ শহিদুল ইসলামের আরেক ছেলে সাইফুল ইসলাম বলেন, বাবাকে উদ্ধার করতে গত তিন দিনে অনেকের সাহায্য চেয়েছি কিন্তু কাউকে পাইনি। আজ পেলাম বাবার লাশ।
অন্যদিকে ভাইকে খুঁজতে থাকা পলাশ কর্মকার বলেন, নিখোঁজ থাকা ভাই কালাচানকে জীবিত খুঁজে পেয়েছেন। ভাইকে দেখতে এখন ফেনী যাচ্ছেন।
ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার মধুগ্রামের নেপাল কর্মকার জানান, পরিবারের ৮ সদস্য নিয়ে গত বুধবার রাত থেকে বাড়ির ছাদে আটকে আছেন। বন্যার পানিতে তাঁর তিনটি গরু ভেসে গেছে। গত চার দিনে কোনো ত্রাণ পাননি। এক আত্মীয় নৌকা নিয়ে এসে কিছু শুকনো খাবার ও পানীর বোতল দিয়ে গেছে।
ফাজিলপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের ফরিদুর রহমান বলেন, দুটি অটোরিকশার ভাড়া দিয়ে তার ৫ সদস্যের সংসার চলে। কিন্তু বন্যায় রিকশা দুটি ডুবে তাঁর সব স্বপ্ন শেষ। মুহুরীগঞ্জ এলাকার মর্জিনা আক্তার বলেন, স্বামী-সন্তানসহ পরিবারের ৫ সদস্যকে নিয়ে এক কাপড়ে ঘর ছেড়ে মুহুরীগঞ্জ রহমানিয়া কমিউনিটি সেন্টারে আশ্রয় নিয়েছেন। ছাগলনাইয়া বাজারের ব্যবসায়ী সুজিত বাবু জানান, বাজারে তাঁর দুটি চালের দোকান ও একটি গোডাউনে প্রায় তিন হাজার বস্তা চাল পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। মাত্র কয়েক মাস আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কাছাকাছি থেকে ফিরে এসেছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।