জুমবাংলা ডেস্ক : দীর্ঘ অপেক্ষা, টানটান উত্তেজনা, পরম আনন্দ, পাথরের মতো জমাট বাঁধানো বুক আলগা করা স্বস্তি নিয়ে অবশেষে ফিরে এসেছে হারানো মানিকগুলো। কারো সুশীতল ছায়াময় বাবা, কারো পরম স্নেহের কিংবা শ্রদ্ধার ভাই, কারো আদরের সন্তান, কারো প্রেমময় স্বামী কিংবা কারো বুকের মানিক।
শ্বাসরুদ্ধকর ৬৪ দিন পর মায়ের কোলে মাতৃভূমি বাংলাদেশে ফিরে এসেছে সোমালিয়ায় জিম্মি হওয়া জাহাজ ও জাহাজের নাবিক, কর্মকর্তা-কর্মাচারীরা।
মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় যখন জিম্মি দশা থেকে ফিরে আসাদের বহন করা জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায় তখন ঘাটে ছিল তুমুল হইচই। এ হইচই কেবলই আনন্দের, উচ্ছাসের, বাঁধভাঙ্গা উল্লাসের।
সোমবার সন্ধ্যায় এমভি আব্দুল্লাহ কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় পৌঁছানোর পর সেখান থেকে এমভি জাহান মনি-৩ জাহাজে করে নাবিক-ক্রুদের নিয়ে চট্টগ্রামে আনার ব্যবস্থা করা হয়। মঙ্গলবার বিকালে জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) এক নম্বর জেটিতে ভিড়ে।
এ সময় উল্লাসে নেচে ওঠে পুরো বন্দর এলাকা। স্বজন, মিডিয়াকর্মী, স্থানীয় লোকজন, জাহাজের মালিকপক্ষ ও সরকারি কর্তৃপক্ষের লোকজনসহ অসংখ্য মানুষ উচ্ছাসের সঙ্গে তাদের বরণ করে নেয়।
জাহাজটির মালিক প্রতিষ্ঠান কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম) গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাতসহ অন্যান্য কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী, বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম সোহায়েলসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ফুল দিয়ে বরণ করে নেন নাবিকদের।
কেএসআরএমের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম জানান, সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নাবিকদের বরণের পরই তারা ঘরে ফিরতে শুরু করে। চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ সারাদেশে নাবিকদের যার যেখানে বাড়ি, সেখানে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে কোম্পানির পক্ষ থেকেই।
জাহাজ থেকে নাবিকরা যখন ঘাটে নামে তখন হারানো মানিক ফিরে পাওয়ার মতো করে আনন্দের অশ্রু গড়িয়ে পড় শুরু করে স্বজনদের চোখে মুখে। আবেগে উদ্বেলিত হয়ে পড়ে উপস্থিত সবাই। নাবিকরাও জীবনের ভয়ংকরতম একটি অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন পর স্বজনদের কাছে ফিরতে পেরে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন।
এই নাবিকদের একজন ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ। ঘাটে তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন মমতাময়ী মা জ্যোৎস্না বেগম। ছেলেকে ফিরে পেয়ে তিনি বলেন, ‘কলিজার টুকরা আমার কলিজায় ফিরেছে। এটাই আল্লাহর কাছে হাজার শোকরিয়া। ছেলের জন্য রাতদিন নামাজ পড়েছি, ভালো করে নাওয়াখাওয়াও করতে পারিনি। ঈদ কেটেছে নিরানন্দ। ছেলেকে কাছে পেয়েছি। ছুঁয়ে দেখেছি। এটা ঈদ আনন্দের চেয়ে বড়। বাড়ির সবাই অপেক্ষা করছে আমার ছেলের জন্য। আমার আত্মীয়-স্বজনরাও এখানে এসেছে। বাসায় ছেলের পছন্দের রান্না করে এসেছি। গিয়ে সবাই মিলে খাব।’
যেন এক নিশ্বাঃসেই কথাগুলো বলে ফেললেন জ্যোৎস্না বেগম। ছেলেকে পেয়ে আনন্দের সীমা নেই তার মনে। এই আনন্দ যেন তার জীবনের সব ঈদানন্দের চেয়েও বেশি।
মো. তানভীর আহমেদ এমভি আবদুল্লাহর ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার। বাসা চট্টগ্রামের সিডিএ ১০ নম্বর এলাকায়। তার মা জ্যোৎস্না বেগম দুপুর থেকেই অপেক্ষা করছিলেন ছেলের জন্য।
ঘাটে অপেক্ষা করছিলেন তানভিরের স্ত্রী মায়মুনা আক্তারও। মুখে চওড়া হাসি নিয়ে বলেন, ‘সংসারে স্বামীই তো সবচেয়ে আপন। এই আপনজনের কিছু হলে আমিই প্রথম ক্ষতিগ্রস্ত হবো। মুক্তি পেয়ে অনেক দিন পর এসেছে। এতদিন পর কাছ থেকে তাকে দেখতে পাবো, আমি অনেক খুশি।’
গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ। জিম্মি হয় জাহাজে থাকা ২৩ নাবিক। অপহরণের দীর্ঘ এক মাস পর গত ১৩ এপ্রিল সোমালিয়ার স্থানীয় সময় রাত ১২টায় মুক্তি পায় এমভি আবদুল্লাহ। সেই সঙ্গে নাবিকরাও স্বস্তির নিশ্বাঃস ফেলে।
চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে নামা অন্য নাবিকরা হলেন জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. সালেহ আহমদ, মো. শরিফুল ইসলাম ও মো. নুরুদ্দিন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।