জুমবাংলা ডেস্ক : শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্যসহ প্রায় ৭৮ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। দায়িত্ব ছেড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি আবাসিক হলের অধিকাংশ প্রাধ্যক্ষ। এতে ঝিমিয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম।
অন্যদিকে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কোনো নেতা–কর্মী এলেই আটক করে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আর সেই চিত্র মোবাইল ফোনে ধারণ করে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তবে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে বিরক্ত শিক্ষার্থীদের একাংশ।
তাঁরা বলছেন, কোনো শিক্ষার্থীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা মানবাধিকার লঙ্ঘন। ছাত্রলীগ এত দিন যা করে এসেছে, সরকার পতনের পর সাধারণ শিক্ষার্থীরাই এই কাজটা শুরু করেছেন। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। দেশে যেহেতু আইন ও বিচারব্যবস্থা আছে, তাই বিচারবহির্ভূত যেকোনো কর্মকাণ্ডই নিন্দনীয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৪ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হল ছাত্রলীগের এক নেতা তাঁর জিনিসপত্র নিতে এলে তাঁকে আটক করে বেঁধে রাখেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁকে মারধরও করা হয়। পরে হল প্রাধ্যক্ষ ও শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের ওই নেতার কাছ থেকে লিখিত অঙ্গীকারনামা নেন। পাশাপাশি তাঁকে রাজশাহী ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়।
১৮ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলে প্রশাসনের সিলগালা কক্ষের তালা ভেঙে প্রবেশ করার সময় আল আমিন নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীকে আটক করেন শিক্ষার্থীরা। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে ওই ছাত্রলীগ কর্মীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখেন তাঁরা। পরে সেনাবাহিনী ডেকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
এর পরদিন ১৯ আগস্ট গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ্ হল থেকে জিনিসপত্র বাইরে সরানোর সময় ছাত্রলীগের আরও দুজন কর্মীকে আটক করে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখেন শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁকে পুলিশে সোপর্দ কর হয়।
সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার রাত ১১টার দিকে সাব্বির হোসেন নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের এক কর্মীকে আটক করে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁকে মারধর করা হয়।
এ বিষয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সোহানুর রহমান রাফি বলেন, ‘ইতিপূর্বে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ যেমন ভিন্নমতের শিক্ষার্থী কিংবা অন্য কাউকে বিভিন্ন ট্যাগ দিয়ে নির্যাতন করত, এখন একদল শিক্ষার্থী ঠিক সে রকমই কাজ করছে। হলে হলে দেখা যাচ্ছে, সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের ধরে বেঁধে রাখছে, মারধর করছে—যেটা মোটেও কাম্য নয়। এগুলো নিশ্চিতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন। দেশে যেহেতু আইন, বিচারব্যবস্থা আছে; সুতরাং যেকোনো বিচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ডই নিন্দনীয়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘একজনকে গাছে বেঁধে রাখা—এটা কোনোভাবেই উচিত নয়। ছাত্রলীগের যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে, তাদের প্রতি আমাদের ধিক্কার, তাদের প্রতি আমাদের ক্ষোভ আছে—এটা সত্য। কিন্তু সবাই তো আর এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ছিল না।
অনেকেই ছিল একটা সিট পাওয়ার জন্য, হয়রানি না হওয়ার জন্য। কিন্তু ছাত্রলীগ করত বলে তাকে অপদস্থ করতে হবে—এটা অন্যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া একটা শিক্ষার্থীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা, চার-পাঁচটা থাপ্পড় দেওয়ার থেকেও অপমানজনক।’
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘এই মুহূর্তে হল প্রশাসন বলতে কিছু নেই। প্রক্টরিয়াল বডিও নেই। এখনকার বাস্তবতায়, যদি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে তাহলে শিক্ষার্থীদের উচিত হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ছেড়ে দেওয়া। নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়া উচিত না। এটাও ঠিক শিক্ষার্থীদের ওপর যে অত্যাচার হয়েছে, তার একটা প্রতিকার হওয়া দরকার। এটা অবশ্যই আইনগত প্রক্রিয়ায় হতে হবে।’
ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলাম কনক বলেন, ‘কোনো শিক্ষার্থীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা, অবশ্যই মানবাধিকার লঙ্ঘন। এভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া কোনোভাবেই উচিত নয়। তবে তারা যা করেছে তা অনেকটা দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।’ সূত্র : আজকের পত্রিকা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।