জুমবাংলা ডেস্ক : কক্সবাজারের উখিয়ায় শরণার্থী ক্যাম্পের ২০ নম্বর এক্সটেনশন ক্যাম্পের হেলিপ্যাড এলাকায় আগামী শুক্রবার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে ইফতার করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এবং কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন জানান, উখিয়ায় শরণার্থী ক্যাম্পের ২০ নম্বর এক্সটেনশন ক্যাম্পের হেলিপ্যাড এলাকায় প্রধান উপদেষ্টার আয়োজনে এই ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রাথমিক সফরসূচি উল্লেখ করে মিজানুর রহমান বলেন, শুক্রবার সকালে প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমান বন্দরে অবতরণ করবেন। এ সময় ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, বীর প্রতীক- প্রধান উপদেষ্টা এবং জাতিসংঘ মহাসচিবকে স্বাগত জানাবেন।
প্রাথমিক কর্মসূচি অনুযায়ী জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বেলা দেড়টায় উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শনে যাবেন।
তিনি সেখানে ক্যাম্প-১৮ তে লার্নিং সেন্টারে যাবেন এবং শরণার্থী ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলবেন। একইস্থানে ইউনিসেফ এবং ডব্লিউএফপি’র পক্ষ থেকে বর্তমান খাদ্য পরিস্থিতি তুলে ধরে উপস্থাপিত তথ্য প্রজেকশন অবলোকন করবেন।
এরপর মহাসচিব রোহিঙ্গা কালচারাল মেমোরি সেন্টার পরিদর্শন ও মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করবেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব সন্ধ্যায় ক্যাম্প-২০ এক্সটেনশন হেলিপ্যাড এলাকায় লক্ষাধিক রোহিঙ্গাদের জন্য প্রধান উপদেষ্টা আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
জেলা প্রশাসক জানান, প্রধান উপদেষ্টা কক্সবাজারে দিনব্যাপী কর্মসূচি শেষে উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের জন্য আয়োজন করা ইফতার মাহফিলে যোগদানের কথা রয়েছে।
এর আগে প্রধান উপদেষ্টা কক্সবাজারে জুমার নামাজ আদায়সহ নির্ধারিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এই আয়োজনকে ঘিরে ইতোমধ্যে নানা প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিবকে নিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ইফতারের আয়োজন নিয়ে পুরো ক্যাম্পজুড়ে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে।
রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরে যেতে পারবে এমন প্রত্যাশার কথা তারা এই দুই নেতাকে বলতে পারবেন। একই সঙ্গে সম্প্রতি বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) খাদ্য সহায়তা কমিয়ে নেয়ার বিষয়টিরও সমাধান হবে বলে মনে করেন রোহিঙ্গারা।
প্রশাসনের তথ্য মতে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে বলা হয় বিশ্বের সর্ববৃহৎ আশ্রয় শিবির। যেখানে বসবাস করছেন ১৩ লাখের বেশি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক।
দীর্ঘ ৮ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। উল্টো গত কয়েক মাসে নতুন করে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় শিবিরে ঠাঁই নিয়েছেন ৬০ থেকে ৭০ হাজার রোহিঙ্গা। এ অবস্থায় আগামী শুক্রবার কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির পরিদর্শনে যাচ্ছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।
লক্ষাধিক রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতারের সময় হাজির হয়ে একসঙ্গে ইফতারে অংশ নেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এটা রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে প্রধান উপদেষ্টার প্রথম সফর। আশ্রয় শিবিরে দুই নেতার সফর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে অগ্রগতি আসবে মনে করছেন রোহিঙ্গা নেতারা।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস কর্মকর্তারা বলেন, ‘জাতিসংঘ মহাসচিবকে রোহিঙ্গাদের পক্ষ থেকে একটা কথা বলব, বাংলাদেশ আমাদের দেশ নয়। এই ক্যাম্পে আর দীর্ঘ সময় থাকতে চাই না। এখন ক্যাম্প জীবনের ৮ বছর চলছে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে আরাকানে নিরাপদ জোন করে দিন। আমরা এক্ষুনি স্বদেশে চলে যেতে চাই।’
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, শুক্রবার (১৪ মার্চ) জাতিসংঘের মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টা আশ্রয় শিবিরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতার করবেন। এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। বাংলাদেশের জন্য এবং রোহিঙ্গাদের জন্যও তো অবশ্যই। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং বিশ্ব সম্প্রদায় যে রোহিঙ্গাদের পাশে আছে এটি প্রমাণিত হচ্ছে। এটি ঐতিহাসিক একটি বড় ঘটনা।
তিনি আরও জানান, পরিদর্শনকালে জাতিসংঘের মহাসচিব বালুখালী আশ্রয় শিবিরের (ক্যাম্প-১৮) একটি লার্নিং সেন্টার, ইউএনএইচসিআর এবং ডব্লিউএফপির সেবা ও ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে যাবেন। পাশাপাশি পৃথক তিনটি বৈঠকে রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতা, তরুণ ও নারী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
এরপর বিকেলে কুতুপালং আশ্রয় শিবিরের (ক্যাম্প-২০ বর্ধিত) হেলিপ্যাডের কাছে একটি সেন্টারে রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা, ধর্মীয় নেতা, শিক্ষক ও নারীদের সঙ্গে কথা বলবেন।
সবশেষে তিনি প্রধান উপদেষ্টাসহ ইফতার করবেন। যেখানে ধারণা করা হচ্ছে, লক্ষাধিক রোহিঙ্গা একসঙ্গে ইফতার করবেন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, শুক্রবার (১৪ মার্চ) জাতিসংঘের মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টা কক্সবাজার আসছেন। আশ্রয় শিবিরে যে কার্যক্রমগুলো হবে তা তত্ত্বাবধান করছেন সেনাবাহিনী। পুলিশ কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে ক্যাম্প পর্যন্ত নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রাখবে। কয়েক স্তরের বলয় থাকবে। মূলত এসএসএফ কক্সবাজার চলে এসেছেন, তারা সব বিষয় সমন্বয় করছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি। প্রধান উপদেষ্টার কক্সবাজার শহর কেন্দ্রিক কিছু ভেন্যু রয়েছে, এসব ভেন্যুতেও কয়েক স্তরের নিরাপত্তার বলয় থাকছে।’
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৮ সালের ২ জুলাই নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের দেখতে কক্সবাজারের উখিয়া ক্যাম্পে যান জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশা নিজের চোখে দেখেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।