আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে চলমান সংঘাত নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে চীন ও রাশিয়া। মার্কিন প্রস্তাবে মানবিক ত্রাণ সরবরাহে লড়াইয়ে বিরতি, বেসামরিকদের সুরক্ষা, হামাসসহ গাজার অপর সশস্ত্র গোষ্ঠীকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছিল। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
ইসরায়েলি বোমা বর্ষণে গাজা উপত্যকায় মানবিক সংকট ও বেসামরিকদের মৃত্যুতে বিশ্বজুড়ে নিন্দার মুখে শনিবার খসড়া প্রস্তাবটি উত্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্র। মাত্র কয়েক দিন আগে মানবিক ইস্যু কেন্দ্রিক ব্রাজিলের একটি প্রস্তাবে ভেটো দেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র তাদের খসড়া উত্থাপন করলো। ওই সময় ওয়াশিংটন বলেছিল, মার্কিন নেতৃত্বাধীন কূটনৈতিক উদ্যোগের জন্য আরও সময় প্রয়োজন।
প্রাথমিক খসড়ায় অনেক কূটনীতিক অবাক হয়েছিলেন। কারণ এতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষার অধিকার ও সশস্ত্র গোষ্ঠীকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে ইরানের প্রতি দাবি জানানো হয়েছিল। এতে ত্রাণ সরবরাহের জন্য কোনও মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান অন্তর্ভুক্ত ছিল না। যদিও ভোটাভুটিতে যাওয়ার আগে প্রস্তাবটিতে পরিবর্তন আনা হয়।
চীন ও রাশিয়া ভেটো দেওয়ার পর নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের প্রতি জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন দূত লিন্ডা টমাস-গ্রিনফিল্ড বলেছেন, আমরা আপনাদের সবার কথা শুনেছি। যদিও আজকের ভোট ছিল হতাশাজনক। আমাদের নিরুৎসাহিত করা উচিত নয়।
নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিরল উদ্যোগ। জাতিসংঘে ওয়াশিংটন সব সময় মিত্র ইসরায়েলকে রক্ষা ও সমর্থন দিয়ে আসছে।
মার্কিন প্রস্তাবের পক্ষে নিরাপত্তা পরিষদের দশ সদস্য ভোট দেয়, ভোটদানে বিরত ছিল ব্রাজিল ও মোজাম্বিক। বিপক্ষে ভোট দেয় সংযুক্ত আরব আমিরাত। ভেটো দেয় চীন ও রাশিয়া।
ভোটাভুটির পর চীনা দূত ঝেং জুন বলেছেন, যুদ্ধবিরতি, লড়াইয়ের অবসান ও সংঘাত সমাধানে বিশ্বের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বরের প্রতিফলন নেই খসড়া প্রস্তাবে। এই মুহূর্তে যুদ্ধবিরতি শুধু একটি কূটনৈতিক পরিভাষা নয়। এটির অর্থ হলো অনেক বেসামরিকের জন্য জীবন ও মৃত্যু।
রুশ দূত ভাসিলি নেবেঞ্জিয়া অভিযোগ করেছে, মার্কিন প্রস্তাবে গাজায় স্থল অভিযানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যদিও হাজারো ফিলিস্তিনি শিশু মারা যাচ্ছে।
মার্কিন প্রস্তাবে ভেটো দেওয়ার পর রাশিয়ার প্রস্তুতকৃত আরেকটি খসড়া প্রস্তাবে ভোটাভুটি হয়। এতে মানবিক যুদ্ধবিরতি ও গাজার উত্তর থেকে দক্ষিণে বেসামরিকদের চলে যাওয়ার নির্দেশ প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়। এই প্রস্তাবও পাস হয়নি। পক্ষে পড়েছে মাত্র চার ভোট। এটি ছিল রাশিয়ার দ্বিতীয় খসড়া প্রস্তাব। এর আগে ১৬ অক্টোবর আরেকটি খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল রাশিয়া। সেটিও পাস হয়নি।
নিরাপত্তা পরিষদে ১৫ সদস্যের মধ্যে পক্ষে ৯টি ভোট এবং যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রিটেন, রাশিয়া ও চীনের কোনও ভেটো না থাকলেই কেবল কোনও প্রস্তাব পাস হয়।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস মানবিক যুদ্ধবিরতির জন্য আহ্বান জানিয়ে আসছেন।
নিরাপত্তা পরিষদে অচলাবস্থা থাকার মধ্যে শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ১৯৩ সদস্য দেশ একটি খসড়া প্রস্তাবে ভোট দেবে। যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে এই প্রস্তাব উত্থাপন করেছে আরব দেশগুলো। সাধারণ পরিষদে কোনও দেশের ভেটো ক্ষমতা নেই। তবে এই পরিষদে গৃহীত প্রস্তাব বাস্তবায়নের কোনও আইনি বাধ্যবাধকতা নেই, কিন্তু রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।