আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ট্রিলিয়ন ডলারের বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্প নিয়ে কঠিন সময় পার করছে চীন। কভিড-১৯ মহামারীর অভিঘাত, দেশটির অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে শ্লথতা এবং চলমান ভূরাজনৈতিক টানাপড়েনের কারণে অনেকটাই গতি হারিয়েছে উদ্যোগটি। এরই মধ্যে বিআরআই থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে ইতালি। আগ্রহ হারাচ্ছেন বেসরকারি বিনিয়োগকারীরাও। ফলে আগামী দিনগুলো বিআরআইয়ের জন্য কঠিন হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে সাংহাইভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান দ্য গ্রিন ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (জিএফডিসি)। খবর ইকোনমিক টাইমস।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৭ সালে বিআরআইকে ‘প্রজেক্ট অব দ্য সেঞ্চুরি’ আখ্যা দিয়েছিলেন। চলতি সপ্তাহে হয়ে গেল তৃতীয় সম্মেলন। কিন্তু এর মধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে অনিশ্চয়তা। শুরুর প্রথম দশকে ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি আকর্ষণের পর গতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। বিআরআইয়ের অংশীদার দেশগুলোয় চীনের কার্যক্রম ২০১৮ সালের তুলনায় ৪০ শতাংশ কমেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভূরাজনৈতিক টানাপড়েন চীনের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে। জি-৭ ব্লকভুক্ত একমাত্র দেশ ইতালি যুক্ত ছিল বিআরআইয়ে। দেশটি এর মধ্যেই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে, চলতি বছরের শেষ দিকেই বিআরআই থেকে বেরিয়ে যাবে। এর মধ্যে বৈশ্বিক শ্লথতার কারণে ঋণগ্রহীতা দেশগুলোর জন্য ঋণ শোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ২০২০ সালে আফ্রিকার প্রথম দেশ হিসেবে খেলাপিতে পড়ে জাম্বিয়া। সেখানে সবচেয়ে বড় ঋণদাতা ছিল চীন। ইথিওপিয়া, শ্রীলংকা ও পাকিস্তানও রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে। ২০১৮ সালে বিআরআই খাতে বিনিয়োগ ছিল ১২ হাজার কোটি ডলার। মহামারীর প্রথম বছরেই তার আকার অর্ধেকে নেমে আসে।
সর্বশেষ সম্মেলনকে দেখা হয়েছে বিআরআইকে পুনরায় গতি দেয়ার উদ্যোগ হিসেবে। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে মার্কিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘বিআরআই কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বেইজিং চাপে রয়েছে নতুন করে বিনিয়োগ নিয়ে। তবে যদি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ ও থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী শ্রেত্থা থাবিসিনের সঙ্গে নতুন কোনো চুক্তি করতে পারে, তা হলে পরিস্থিতি ঘুরে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক আধিপত্য মোকাবেলায় চীন নিজস্ব মৈত্রী গড়ে তুলতে চাচ্ছে।’
জিএফডিসির প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৮ সালের তুলনায় চলতি বছরের প্রথমার্ধে বিআরআইয়ের অধীনে চুক্তি কমেছে ৪৮ শতাংশ। গ্রিফিথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক ক্রিস্টফ নেদোপিল ওয়াং জানান, চীনের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো মহাকাশ প্রযুক্তিতে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হচ্ছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের তুলনায় প্রাধান্য পাচ্ছে বৈশ্বিক বাজার।
ইতালির প্রতিরক্ষামন্ত্রী গুইদো ক্রোসেত্তো জুলাইয়ে বলেন, ‘তিন বছরে চীন ইতালিতে রফতানি তিন গুণ করেছে। প্যারিস কোনো প্রকার চুক্তি ছাড়াই বেইজিংয়ের কাছে কোটি ডলারের উড়োজাহাজ বিক্রি করেছে। সেদিক থেকে চুক্তির মধ্য দিয়ে ইতালি লাভবান হয়নি। গত বছর দেশটিতে আমাদের রফতানি বেড়েছে মাত্র ৫ শতাংশ, যা জার্মানি ও ফ্রান্সের তুলনায় কম। অথচ তারা কেউ বিআরআইভুক্ত না।’
উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বিনিয়োগের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন শি জিনপিং। বেইজিং তার বাণিজ্য সম্প্রসারণের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছে বিআরআইকে। কিন্তু তা প্রত্যাশিত গতি ধরে রাখতে পারছে না। উদাহরণ হিসেবে কেবল ২০১৫-১৯ সালের মধ্যে আসিয়ান দেশগুলোয় বিআরআইয়ের অধীনে দেশটি বিনিয়োগ করেছিল প্রায় ২ হাজার ৭৯০ কোটি ডলার। ২০২১ সালে সেটা ১ হাজার ৮০ কোটি ডলারে নেমে আসে।
চীন এখন অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি পুনর্গঠনে বেশি মনোযোগী। ফলে ভাটা পড়েছে বিআরআইয়ের অগ্রযাত্রায়। তবে রাজা রতনাম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ ইন সিঙ্গাপুরের অধ্যাপক রাফায়েলো পানতুচ্চি বলেন, ‘শি খুব কাছে থেকে দেখাশোনা করছেন বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পকে। ফলে যতদিন পর্যন্ত তিনি ক্ষমতায় আছেন, প্রকল্পটি গুরুত্বের সঙ্গেই সামনে এগিয়ে যেতে থাকবে। হতে পারে প্রথমে গতি প্রত্যাশার তুলনায় বেশি ছিল।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।