বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : চীনের ইস্ট (এক্সপেরিমেন্টাল অ্যাডভান্সড সুপারকন্ডাক্টিং টোকামাক), যা “কৃত্রিম সূর্য” নামে পরিচিত, একটানা ১ হাজার ৬৬ সেকেন্ড স্থায়ী উচ্চ-তাপমাত্রার প্লাজমা ধরে রেখে নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়েছে।
এটি ফিউশন শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে এক বিশাল অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পূর্বের রেকর্ড ছিল ৪০৩ সেকেন্ড, যা ২০২৩ সালে একই ইস্ট রিঅ্যাক্টরের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছিল।
পরমাণু ফিউশন প্রযুক্তির লক্ষ্য হলো সূর্যের মতো শক্তি উৎপাদন করা, যা পরিষ্কার, নিরাপদ এবং প্রায় অনন্ত শক্তির উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়। বর্তমানে বিদ্যমান জ্বালানি প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ফিউশন শক্তি ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তন রোধ ও বিশ্বব্যাপী শক্তির সংকট সমাধানের অন্যতম মূল চাবিকাঠি হতে পারে।
বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে এই প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করছেন। ফিউশন শক্তি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন ১০০ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি তাপমাত্রা। সেইসঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে স্থিতিশীল প্লাজমা ধরে রাখা এবং তা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা অর্জন করাই মূল চ্যালেঞ্জ।
রেকর্ড গড়ার পেছনের বৈজ্ঞানিক সাফল্য
চীনের বিজ্ঞানীরা ইস্ট রিঅ্যাক্টরের বিভিন্ন উন্নতি সাধন করেছেন। এর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, শক্তিশালী চুম্বকীয় ক্ষেত্র, এবং প্লাজমার স্থিতিশীলতা বাড়ানোর জন্য উন্নত প্রযুক্তি যুক্ত করা হয়েছে। প্লাজমা গরম করার জন্য ব্যবহৃত শক্তিশালী মাইক্রোওয়েভ সিস্টেমের ক্ষমতা দ্বিগুণ করা হয়েছে, যা প্রায় ৭০ হাজার মাইক্রোওয়েভ ওভেনের সমান শক্তিশালী।
ইস্ট প্রকল্পের পরিচালক সং ইউনতাও বলেন, “ফিউশন শক্তির জন্য স্থিতিশীল প্লাজমা পরিচালনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের এই নতুন রেকর্ড ভবিষ্যতের ফিউশন বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বড় পদক্ষেপ।”
২০০৬ সালে চীন আন্তর্জাতিক থার্মোনিউক্লিয়ার এক্সপেরিমেন্টাল রিঅ্যাক্টর প্রকল্পে যুক্ত হয়। ফ্রান্সে নির্মিতব্য আইটিইআর রিঅ্যাক্টরটি হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় টোকামাক ফিউশন রিঅ্যাক্টর। এতে চীন ৯% অবদান রাখছে এবং চীনা একাডেমি অব সায়েন্সের প্লাজমা পদার্থবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট এই প্রকল্পের মূল পরিচালনাকারী।
গত কয়েক বছরে চীনের ইস্ট রিঅ্যাক্টর ধারাবাহিকভাবে নতুন নতুন সাফল্য অর্জন করেছে। এটি আইটিইআর ও ভবিষ্যতের চীনা ফিউশন প্রকল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে।
ফিউশন শক্তির ভবিষ্যৎ ও মানব সভ্যতার আশা
ফিউশন শক্তি একবার সফলভাবে নিয়ন্ত্রিতভাবে উৎপাদন সম্ভব হলে, এটি দীর্ঘমেয়াদে কার্বন-মুক্ত, কার্যকরী এবং সীমাহীন শক্তির উৎস হবে। চীন ইতোমধ্যেই পরবর্তী প্রজন্মের ফিউশন গবেষণা স্থাপনা তৈরি করছে, যা বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক ফিউশন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তুতি হিসেবে কাজ করবে।
বিজ্ঞানীদের মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে ফিউশন বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করা সম্ভব হতে পারে। এই সাফল্য বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকট সমাধানের পাশাপাশি পরিবেশগত টেকসই উন্নয়নের নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।
চীনের ইস্ট রিঅ্যাক্টরের নতুন রেকর্ড ফিউশন শক্তির পথে এক যুগান্তকারী মাইলফলক। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকট সমাধান এবং পরিবেশবান্ধব শক্তি উৎপাদনে এটি হতে পারে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন। মানব সভ্যতা কি তবে সূর্যের মতো নিজের শক্তি উৎপাদনের দ্বারপ্রান্তে? উত্তরটা হয়তো সময়ই বলে দেবে!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।