জুমবাংলা ডেস্ক : অন্য সব রাতের মতো বুধবার খাবার শেষে দুই মেয়েকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন আকলিমা খাতুন। স্বামী আব্দুর রহমান প্রবাসী। ২০ বছর ধরে এ দম্পতি তিল তিল করে গড়েছেন ঘর, সাজিয়েছেন সংসার। কিন্তু চোখের পলকে তাঁর স্বপ্নের সংসার বানের পানিতে তলিয়ে যায়। আকলিমার ফেনীর দাগনভূঞার দুধমুখা ইউনিয়নের গ্রামের বাড়িটি এখন পানির নিচে দাঁড়িয়ে কংকালসার হয়ে। ভেসে গেছে ঘরের সবকিছু।
গতকাল শনিবার দাগনভূঞা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় প্রতিবেদকের কথা হয় আকলিমার সঙ্গে। একটি ভ্যানে কামাল আতার্তুক আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন। কোথায় যাচ্ছেন– প্রশ্নে তাঁর বিষণ্ন মুখ থেকে জবাব এলো, নিয়তি যেখানে নিয়ে যাচ্ছে! আলাপের এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলে চলেন, বুধবার রাতে পানি বাড়তে শুরু করে। শুক্রবার দুপুরের মধ্যে পুরো টিনের ঘর পানির নিচে চলে যায়। কোনো মতে দুই মেয়েকে নিয়ে সাঁতরে রাস্তায় আসি। তারপর থেকেই বোনের দোতলা বাড়িতে আছি। এখন বের হয়েছি কিছু খাবার কিনতে।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আকলিমা বলেন, আরেকটা ঘর তোলার মতো সামর্থ্য নেই। কোনো জিনিসপত্র বের করতে পারিনি। এখন নতুন করে সব শুরু করতে হবে। ভাড়া বাসায় উঠতে হবে। হঠাৎ বন্যায় সব ওলটপালট হয়ে গেল। মেয়েরা স্কুলে পড়ে। স্বামী হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে খরচ পাঠায়। সেই টাকা থেকে ঘরের অনেক জিনিস কিনেছি। কিন্তু সব ভেসে গেল!
সেই ভয়াল রাতের কথা মনে পড়লে এখনও আঁতকে ওঠেন আকলিমা। রাতে পানি বাড়তে বাড়তে কাঠের ওপর পর্যন্ত চলে আসে। তখন ঘুটঘুটে অন্ধকার। কোনো রকমে টর্চ নিয়ে ওপরে সিলিংয়ে আশ্রয় নেন সবাই। রাতভর সেখানেই কাটান। মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় কাউকে ফোনও দিতে পারেননি। বলেন, আতঙ্কে শুধু আল্লাহকে স্মরণ করেছি। দুই মেয়ের কান্না সহ্য হচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল, রাতেই জীবনগুলো থেমে যাবে! পরদিন স্বামীর কষ্টার্জিত টাকায় বানানো ঘরটি পানিতে সঁপে দিয়ে মেয়েদের নিয়ে এক কাপড়ে বোনের বাড়িতে এসেছি। আপন ঠিকানা বলতে আর কিছুই নেই।
কতদিন বোনের বাড়িতে থাকব। কবে আরেকটা ঘর হবে– এমন বিভীষিকাময় রাতের কথা জীবনেও ভুলবেন না আকলিমা। দুই মেয়ে কবে ট্রমা থেকে বের হবে, তা ভাবাচ্ছে সারাক্ষণ। রাত নামলেই কান্না করছে। ঘুমাতে চাইছে না। তাদের বই-খাতা, প্রিয় ড্রয়িং, হাতের কারুকাজ– সব পানি কেড়ে নিয়েছে। এসব বলছে, আর কান্না করছে তারা। মা হয়ে কোনো সান্ত্বনা দিতে পারছি না। কথাগুলো বলার সময় মমতাময়ী মায়ের মুখের বলিরেখায়ও স্পষ্ট ধরা দেয় অসহায়ত্ব!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।