আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রাশিয়ার একাধিক যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে ইউক্রেন। এদিকে ১৯১৭ সালের পর প্রথমবারের মতো ৭ জানুয়ারির পরিবর্তে ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন উদ্যাপন করতে যাচ্ছে ইউক্রেন। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে তিনটি রুশ যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে বলে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী নিশ্চিত করেছে। খবর বিবিসি।
দেশটির বিমান বাহিনী এক ঘোষণায় জানায়, খেরসন অঞ্চলে রাশিয়ার তিনটি এসইউ-৩৪ যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করা হয়। যেসব কর্মকর্তা রুশ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছেন তাদের ধন্যবাদ দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি জানান, যুদ্ধবিধ্বস্ত খেরসন অঞ্চলে এই ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে মস্কো কোনো মন্তব্য করেনি।
তবে, রাশিয়ার বেশ কয়েক জন ব্লগার ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করেছেন। শুক্রবার রাতে এক ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেনে যেসব রুশ পাইলট হামলা চালাচ্ছে এই ঘটনায় তারা সচেতন হবে যে, তাদের কেউই শাস্তির বাইরে থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে সম্ভবত বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয়েছে। এক ব্লগার জানিয়েছেন, রুশ যুদ্ধবিমানে থাকা জীবিত ও মৃত ক্রু সদস্যদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে আকস্মিক হামলা চালায় রাশিয়া। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত দুপক্ষের মধ্যে লড়াই চলছেই। এই সংঘাত থামার কোনো লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না। সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনে গোলাবারুদের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। মিত্র দেশগুলোর কাছ থেকে সহায়তা না পেয়ে বিপদে পড়ে যাবে কিয়েভ।
সম্প্রতি ইউক্রেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যপদ দেওয়ার বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করায় এ সংক্রান্ত বৈঠক থেকে বের হয়ে যেতে হয় হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানকে। এর প্রতিক্রিয়ায় ইইউয়ের পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে দিতে যাওয়া ৫০ বিলিয়ন বা ৫ হাজার কোটি ইউরোর সহায়তা প্রস্তাব আটকে দেন তিনি।
এদিকে ১৯১৭ সালের পর প্রথমবারের মতো ৭ জানুয়ারির পরিবর্তে ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন উদ্যাপন করতে যাচ্ছে ইউক্রেন। দেশটিতে মস্কোর প্রভাব নির্মূল করার সর্বশেষ প্রচেষ্টা হিসেবে ইউক্রেন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যুদ্ধ হোক বা শান্তি বড়দিন সবসময়ই আসে। তবে বছর ঘুরে ইউক্রেনে এই দিনটি এবার একটু তাড়াতাড়িই যেন আসছে। দেশটিতে এবার ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন পালন করা হবে।
ইউক্রেনের শত বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম এমন ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। সাধারণত রীতি অনুযায়ী, জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে বড়দিন পালন করে থাকে ইউক্রেনীয়রা। এই ক্যালেন্ডারে বড়দিনের তারিখ ৭ জানুয়ারি। এই দিনে ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়াও বড়দিন পালন করে। দেশটির সঙ্গে সাংস্কৃতিক এ মিল থাকায় চলতি বছর জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের তারিখের পরিবর্তে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের তারিখ ব্যবহার করে বড়দিন পালন করতে যাচ্ছে ইউক্রেন।
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার মূলত পশ্চিমারা ব্যবহার করেন। পশ্চিমা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের ব্যবহারকে ইউরোপের সঙ্গে কিয়েভের এক সারিতে দাঁড়াবার ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। চলতি বছর বড়দিন আগে থেকে শুরু হওয়ার ঘোষণার পর দেশটিতে ক্রিসমাসের প্রস্তুতিও তাই একটু আগেই শুরু হয়ে গেছে। বড়দিনকে সামনে রেখে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সাজসজ্জা প্রস্তুতকারী কারখানাগুলো। কিয়েভের বাইরে ছোট একটি শহর ক্লাভদিভো-তারাসোভ। শহরটির একটি সাজসজ্জা কারখানার কর্মীদের সঙ্গে বড়দিন নিয়ে কথা বলেছেন বিবিসির প্রতিনিধিরা।
পুরো সোভিয়েত ইউনিয়নকে সাজসজ্জার জিনিসপত্র সরবরাহকারী তিনটি সাজসজ্জার কারখানার মধ্যে একটি ছিল এই শহরে। বর্তমানে কারখানাটির বেহাল দশা। কারখানার একজন কর্মচারী লিওকাদিয়া। ১৯৭৮ সাল থেকে এই প্রোডাকশন লাইনে কাজ করছেন তিনি। লিওকাদিয়া বলেন, ‘আমাদের অনেক লোক ছিল এখন নেই।’ বছরের পর বছর ধরে ধীরে ধীরে উত্পাদন কমতে থাকার পর ২০২২ সালে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায় কারখানাটি। তখন ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন শুরু হয়। এর পরপরই এক মাসের জন্য রুশ বাহিনীর দখলে চলে গিয়েছিল অঞ্চলটি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।