যারা ফেসবুক ইউটিউব ব্যবহার করেন তারা নিশ্চয়ই নিজেদের সোশ্যাল হ্যান্ডলে এমন একটা ভিডিও ভেসে আসতে দেখেছেন যে কিছু যুবক একজন ভাসমান ব্যক্তিকে ধরে তার চুল কেটে ফেলছেন, তাকে গোসল করিয়ে একটি নতুন লোগো সংবলিত টি-শার্ট পরিয়ে দিচ্ছেন। সবশেষে তাকে একটা খাবারের প্যাকেট দিচ্ছেন। এমন ভিডিও আসলে না দেখে সামাজিক মাধ্যমে থাকার উপায় নেই, কেননা এসব ভিডিওর স্ট্রিম সংখ্যা লাখ লাখ, কোটি কোটি।
এ ঘটনার পুরো কর্মকাণ্ড ভিডিও আকারে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা হচ্ছে, যেসবের কোটি কোটি ভিউ হচ্ছে।
মানুষ আগ্রহ সহকারে দেখছেন যে ফুটপাতে পড়ে থাকা এসব মানুষের ‘পরিচ্ছন্ন অভিযান’। এই তালিকায় ফুটপাতের সাধারণ মানসিক ভারসাম্যহীন ভাসমান মানুষ যেমন রয়েছে, তেমনই এদের মধ্যে রয়েছেন অনেক ফকির, জটাধারী, সাধু সন্ন্যাসী।
এই অভিযোগ উঠেছে মাহবুব নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে। বলা হচ্ছে, এই মাহবুব মানবিক মাহবুব নামে পরিচিত।
এসব কর্মকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছেন তিনি। তবে এক ফেসবুক লাইভে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। ফেসবুক লাইভে জুলকারনাইন সায়েরের শেয়ার করা একটি ভিডিও দেখিয়ে তিনি বলেন, এই ভিডিওতে যারা জটা কেটে দিচ্ছে সেটা তাঁর টিম নয়।
তবে জুলকারনাইন সায়েরের শেয়ার করা ভিডিও এবং ভিডিও থেকে ছড়িয়ে পড়া ছবি মাহবুবের টিমের না হলেও মাহবুব নিজের পদ্ধতিতে একই ধরনের কাজ করে থাকেন।
যেসব কাজের প্রশংসা রয়েছে, রয়েছে সমালোচনাও।
মাহবুবের নাম ব্যবহার করে অনেকেই এসব কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘ইদানীং আমাদের কাজগুলোকে অনেকেই সমালোচনা করতেছে, ট্রল করতেছে। আমরা অত্যন্ত কষ্টের সঙ্গে জানাচ্ছি যে আমরা হয়তো এই কাজটা আর বেশি দিন করতে পারব না, আমরা হতাশ হয়ে যাচ্ছি। এতো বাজেভাবে আমাদের কাজ উপস্থাপন করছে যা বলার বাইরে।
অবশ্য প্রশ্নবিদ্ধ হবার কারণও আছে। এখন অনেকগুলো টিম বের হইছে।’
নিজের এই কাজ শুরুর কথা বলতে গিয়ে মাহবুব বলেন, ‘আমি যখন ২০২০ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকায় আসি, তখন এদের এই অবস্থা দেখে আমার খুবই খারাপ লাগে, তখন এসব কাজ শুরু করি। তবে খাওয়ার দাওয়ার দেওয়া, পরিচ্ছন্ন করার এই কাজ আমরা শুরু করি দুই বছর হয়ে গেছে। এই দুই বছরে আমরা কোনো প্রশ্নের মুখে পড়িনি।’
নিজের টিম একটাই উল্লেখ করে এই তরুণ বলেন, ‘আমার একটাই টিম, আমার কোনো জেলাতে টিম নাই। আমরা যখন কাজ করি মানুষগুলোর সঙ্গে খুবই নমনীয় ব্যবহার ও ভালোবাসা দেখিয়ে কাজ শুরু করি। কখনো তাদেরকে কষ্ট দেওয়া হয় না কিংবা আঘাত দেওয়া হয় না। ইদানীং দেখছি অনেকেই এসব কাজ করতেছে যারা বলছে এসব আমাদের টিম বা আমাদের হয়ে কাজ করতেছে। এইসব টিমগুলোর কারণে আমি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছি।’
তবে মাহবুব নিজের Mahbub Creation নামের যে ফেসবুক পেইজ থেকে লাইভ করেছেন সেই পেইজে এমন অনেক ভিডিও রয়েছে, যেখানে সাধারণ মানসিক ভারসসাম্যহীন মানুষকে পরিচ্ছন্ন করানোর পাশাপাশি জোরপূর্বক ধস্তাধস্তি ও জটা কেটে দেওয়ার ভিডিও রয়েছে। যারা অনেকেই পাগল নামে পরিচিত।
সদরঘাটে ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায় একজন জটাধারী কোনো অবস্থাতেই জটা কাটতে ইচ্ছুক না, মাহবুব-এর দল জোরপূর্বক তাকে ধরে তার চুল কাটতে ধরে। ওই জটাধারী ব্যক্তি সর্বোচ্চ প্রাণপনে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই ছাড়াতে পারেননি, এমনকি তিনি মাহবুবের দলের একজনকে সজোরে লাথিও মারেন। তবুও তাঁর দল ওই জটাধারী ব্যক্তিকে ছাড়েনি।’
এই ভিডিওটির নিচেই অনেকে যেমন প্রশংসা করেছেন, তেমনই অনেকেই লোকটির সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে ক্রাইম বা অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তবে মাহবুব জোরপূর্বক কোনো কাজ করেন না জানিয়ে লাইভে বলছেন, ‘একটা ভালো কাজ সবাই করতে পারে। কিন্তু যদি আমার নাম ব্যবহার করে, আমার নাম দিয়ে ব্যবসা করেন এটা তো ঠিক না। আপনারা ভালো কাজ করেন। সমস্যা নাই। আপনারা যদি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন, তাহলে আমি বলে দিতাম কিভাবে কাজ করবেন। অথচ এখন বলতেছেন আপনারা আমার লোক। আপনারা এমনভাবে কাজ করতেছেন যে একটা মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষকে ধরতে গিয়ে আপনারাও মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছেন। এমনভাবে মানুষগুলোকে জাপ্টায় ধরেন যেটা আমারও খারাপ লাগে।’
জোরপূর্বক কর্মকাণ্ডের অসংখ্য ভিডিও রয়েছে মাহবুবের ঐ ফেসবুক পেইজে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।