স্পোর্টস ডেস্ক : ফিফা নারী বিশ্বকাপের ফাইনাল শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে দলের এক খেলোয়াড়ের ঠোঁটে চুমু দিয়ে সমালোচনার জন্ম দেন স্পেনের ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি লুইস রুবিয়ালেস। এরপর রুবিয়ালেসকে ফেডারেশন থেকে পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার হন দেশটির অনেকে। তবে পদত্যাগের পথে না হাঁটার ঘোষণা দিয়েছেন রুবিয়ালেস। একইসঙ্গে এই ঘটনায় স্বপক্ষে লড়াই চালিয়ে যাওয়ারও প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন স্প্যানিশ ফুটবলপ্রধান।
ইতোমধ্যে রুবিয়ালেসের ‘চুমু-কাণ্ডে’র বিষয়টি আমলে নিয়ে শাস্তির বিষয়ে কাজ শুরুর ঘোষণা দিয়েছে ফিফা। এ নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেছিল স্পেন ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকর্তারা। তখন অনেকে ধারণা করছিলেন, চাপের মুখে হয়ত পদত্যাগ করবেন রুবিয়ালেস। কিন্তু বৈঠকে রুবিয়ালেস বলেছেন, ‘আমি পদত্যাগ করব না, কিছুতেই না।’
এর আগে, গত ২০ আগস্ট অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে যৌথভাবে অনুষ্ঠিত নারী বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়ে স্পেন। পুরস্কারমঞ্চে স্প্যানিশ তারকা ফুটবলার জেনিফার হারমোসোকে প্রকাশ্যে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে চুমু দেন রুবিয়ালেস। এরপর বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে।
পরে অবশ্য এ ঘটনায় ক্ষমা প্রার্থনা করেন রুবিয়ালেস। সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘চুমুটা ছিল স্নেহপূর্ণ। এটাকে নিয়ে যারা সমালোচনা করছে, তারা মূর্খ।’ তবে ক্রমেই তার পদত্যাগের দাবিতে সোচ্ছার হন সাবেক ও বর্তমানের ফুটবল সংশ্লিষ্ট অনেকেই। তাতেও পার পাননি তিনি, তার পদত্যাগের দাবি তুলে স্পেনের নারী ফুটবল লিগ ‘লিগা এফ’।
এমন প্রতিবাদের বিপরীতে ইউরোপীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছিল, শুক্রবার (আজ) পদত্যাগের ঘোষণা দিতে পারেন রুবিয়ালেস। তবে স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের (আরএফইএফ) জরুরি সভায় নিজের দায়িত্ব না ছাড়ার ঘোষণা দেন রুবিয়ালেস। তার দাবি, চুমুর ঘটনাটি পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে হয়েছিল এবং এ নিয়ে নারীবাদীরা তাকে হত্যার চেষ্টা করছে।
৪৬ বছর বয়সী রুবিয়ালেস বলছেন, ‘তুমি কি আসলেই সিরিয়াস যে এ ঘটনায় আমি সব ছেড়ে চলে যাব? স্প্যানিশ ফুটবলের ইতিহাসে আমিই সবচেয়ে সেরা ম্যানেজমেন্ট তৈরি করেছি। তোমাদের জানাতে চাই যে, ‘‘আমি পদত্যাগ করছি না (তিন বার)।’’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ওপর অনেক চাপ আসছে। সম্ভবত গত সোমবার আমাকে কেউ সরিয়েও দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আমাদের দেশে আইন আছে, একটি সংবেদনশীল চুমুর জন্য আমাকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে? আমি শেষ পর্যন্ত নিজের লড়াই চালিয়ে যাব। আমি আশা করি যথাযথ আইনেরই প্রয়োগ ঘটবে এবং সেখানে আমাকে সরিয়ে দেওয়ার মতো কিছু ঘটবে না।’
এর আগে চুমু-কাণ্ড আলোচনায় আসার পর আরএফইএফের মাধ্যমে স্প্যানিশ বার্তা সংস্থা ইএফই-কে পাঠানো এক বিবৃতিতে হারমোসো শুরুতে বলেছিলেন, ঘটনাটি ‘স্নেহ ও কৃতজ্ঞতার স্বাভাবিক প্রকাশ’ ছিল। তবে বৃহস্পতিবার পেশাদার নারী ফুটবলারদের সংগঠন ফুটপ্রো ইউনিয়ন ও নিজের এজেন্সির মাধ্যমে এক যৌথ বিবৃতিতে তিনি রুবিয়ালেসের ‘দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি’ চান।
বিবৃতিতে হারমোসো বলেন, ‘এ ঘটনায় আমি মানসিকভাবে আহত হয়েছি। আমার স্বার্থ রক্ষা করতে এজেন্সি টিমজের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। আমার ইউনিয়ন ফুটপ্রো এ বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকায় আছে। নারীর প্রতি এমন আচরণ করে কেউ যেন পার না পায়, সেটা নিশ্চিত করতেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। নারী ফুটবলারদের প্রতি এমন অসম্মানজনক আচরণ থেকে রক্ষা দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা যেন নেয়া হয়, সেটাই আমদের লক্ষ্য। আমি চাই এমন শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক যেন ভবিষ্যতে এমন কাজ করার সাহস কেউ না দেখায়।’
এরপরই গত বৃহস্পতিবার রুবিয়ালেসের বিরুদ্ধে ফিফা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর ঘোষণা দেয়। একইসঙ্গে তাদের আপত্তিকর আচরণ ও ফেয়ার প্লে আর্টিকেল ১৩ ধারা রুবিয়ালেস লঙ্ঘন করেছেন কিনা, তা খতিয়ে দেখার কথাও জানায় ফিফা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।