জুমবাংলা ডেস্ক : কিশোরগঞ্জ জেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা, সদা-নিষ্ঠাবান কবর খোঁড়ার কাজে নিয়োজিত মনু মিয়া আর নেই। গতকাল শনিবার (২৮ জুন) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া এই মানুষটি নিজ হাতে তিন হাজারের বেশি কবর খুঁড়েছেন। তার মৃত্যুতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
মনু মিয়া ছিলেন নিঃসন্তান। স্ত্রী রহিমা বেগমকে রেখে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন তিনি। জীবনের প্রায় পুরোটা সময় তিনি বিনা পারিশ্রমিকে কবর খোঁড়ার কাজ করেছেন। কেউ মারা গেলেই ছুটে যেতেন, এমনকি দ্রুত পৌঁছানোর জন্য নিজের জমি বিক্রি করে একটি ঘোড়া পর্যন্ত কিনেছিলেন।
কোদাল, খুন্তিসহ প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জাম নিজেই বহন করতেন। গত ১৪ মে শরীরের নানা জটিলতায় ভুগতে শুরু করলে তাকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিছুটা সুস্থ হলে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। তবে শনিবার ভোর থেকে আবার অসুস্থ বোধ করায় সেদিনই তার মৃত্যু হয়।
মনু মিয়া যাদের কবর খুঁড়তেন, তাদের নাম, জন্ম ও মৃত্যু তারিখ তিনি নিজের ডায়েরিতে নথিভুক্ত করতেন। সর্বশেষ কবর খুঁড়েছিলেন গত ২৪ এপ্রিল। সেদিন তিনি ও তার স্ত্রী বাড়িতে ছিলেন না।
সেই সুযোগে দুর্বৃত্তরা তার প্রিয় ঘোড়াটি মেরে ফেলে। বিষয়টি দেশজুড়ে আলোড়ন তোলে, দেশ-বিদেশের অনেকেই তাকে নতুন ঘোড়া উপহার দিতে চাইলেও তিনি বিনয়ের সাথে প্রত্যাখ্যান করেন।
মনু মিয়ার কবর খোঁড়ার কর্মক্ষেত্র শুধু কিশোরগঞ্জ ও আশপাশের গ্রামেই সীমাবদ্ধ ছিল না; তিনি ঢাকার বনানী কবরস্থানেও কাজ করেছেন। দক্ষ কবর খোঁড়ার জন্য স্থানীয়ভাবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সম্মানিত ও নির্ভরযোগ্য একজন মানুষ। তার মতো একজন নিঃস্বার্থ ও নিবেদিতপ্রাণ মানুষের বিদায়ে সমাজ হারাল এক নিঃশব্দ সেবককে।
Get the latest News first— Follow us on Zoombangla Google News, Zoombangla X(Twitter) , Zoombangla Facebook, Zoombangla Telegram and subscribe to our Zoombangla Youtube Channel.