জুমবাংলা ডেস্ক : আট বছর পর লাইসেন্স ফিরে পেতে আবেদন করেছে মোবাইল অপারেটর সিটিসেল। এ নিয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী এক বছরের মধ্যে বাজারে আসবে সিটিসেল। ২০১০ সালে কোম্পানিটির প্রায় ৩০ লাখ গ্রাহক থাকলেও ২০১৬ সালে তা ৫ লাখ ৫৯ হাজারে নেমে আসে। ২০১৭ সালের ১১ জুন বিটিআরসি তাদের তরঙ্গ বন্ধ করে দেয়।
সিটিসেলের মূল কোম্পানি প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেডের (পিবিটিএল) মালিকানা রয়েছে বিএনপির সাবেক নেতা এম মোর্শেদ খানের পরিবারের হাতে। ওই রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে সিটিসেল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের ‘বৈষম্যের শিকার হয়’ বলে বিটিআরসিতে জমা দেওয়া চিঠিতে দাবি করা হয়েছে।
কোম্পানিটির দাবি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে প্রথমে তাদের তরঙ্গ স্থগিত, পরবর্তীকালে আদালতে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় লাইসেন্স বাতিল করা হয়। এ জন্য সাবেক টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমকে দায়ী করছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে সে সময় বিটিআরসি জানিয়েছিল, ২১৮ কোটি টাকা বকেয়া পরিশোধ না করায় সিটিসেলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়।
চিঠিতে প্যাসিফিক টেলিকম জানায়, সিটিসেল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের ‘বিরোধী একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে’ যুক্ত ছিল এমন ধারণা থেকে লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে, যে ধারনাটি ছিল ‘অযৌক্তিক’। ‘আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, গত আট বছরে বিটিআরসির পক্ষপাতদুষ্ট, অপ্রীতিকর ও অসৎ উদ্দেশ্যে নেওয়া সিদ্ধান্ত ও মূল্যায়নের শিকার হয়েছে সিটিসেলের মূল কোম্পানি পিবিটিএল।
তরঙ্গ বন্ধ করায় গত ৮ বছরে ব্যাংক ঋণ, কর্মচারীদের বকেয়া, অবকাঠামোর ক্ষতিসহ সব মিলিয়ে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। গত আট বছর কার্যক্রম বন্ধ থাকায় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় সম্ভব হয়নি। এতে সরকার প্রায় ৪৩০ কোটি টাকা কর ও ফি থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
সিটিসেল এখন লাইসেন্স বাতিলের জন্য জারি করা পত্রের প্রত্যাহার চায়। পাশাপাশি প্রযুক্তি নিরপেক্ষ লাইসেন্স চায়, যাতে ফাইভ-জিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তারা এ জন্য অর্থ পরিশোধ করবে, তবে সেটা রাজস্ব আদায়ের পর। এ প্রসঙ্গে প্যাসিফিক টেলিকমের হেড অব রেগুলেটরি ও করপোরেট অ্যাফেয়ার্স নিশাত আলি খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন, তাই বিটিআরসি লাইসেন্স বাতিল করতে পারে না।
তৎকালীন সরকার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। আমরা এর প্রতিকার চাই। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, সিটিসেলের লাইসেন্স দিতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
তবে এটা যেন আইনগত দিক মেনে হয় সেটা বিবেচনা করতে হবে। যেন কোনো বদনাম না হয়। তিনি বলেন, লাইসেন্স ফিরে পেতে আমরা আশাবাদী। লাইসেন্স পাওয়ার পর আমরা অপারেশনাল কাজে মনোযোগ দেব। এ জন্য অনেক বিনিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে। আমরা সেসবের জন্য প্রস্তুত।
বিশেষ করে নতুন ডিভাইস, আধুনিক প্রযুক্তিপণ্য ও লোকবল নিয়োগ দেওয়া হবে। পাশাপাশি বিটিআরসির সঙ্গে পাওনা বকেয়া টাকার ইস্যুও রয়েছে। এদিকে সিটিসেলের লাইসেন্স ফেরত প্রসঙ্গে বিটিআরসির লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেনসিং বিভাগের মহাপরিচালক আশীষ কুমার বলেন, সিটিসেলের আবেদন নিয়ে কমিশনের বিভিন্ন বিভাগ কাজ করছে। এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
১৯৮৯ সালে বাংলাদেশের প্রথম মোবাইল ফোন অপারেটর হিসেবে লাইসেন্স পেয়েছিল বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (বিটিএল), যা পরে মালিকানার হাতবদলে সিটিসেল নাম পায়। সিটিসেল কোড-ডিভিশন মাল্টিপল অ্যাক্সেস (সিডিএমএ) প্রযুক্তি ব্যবহার করত। জিএসএম ও সিএমডির মধ্যে মূল পার্থক্য হলো, জিএসএম হ্যান্ডসেটগুলোতে সিম কার্ড স্লট থাকে আর সিডিএমএতে একটি হ্যান্ডসেটের জন্য একটি নির্দিষ্ট সিম কার্ড নম্বর নির্দিষ্ট করা থাকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।