সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : বৈষ্যমবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচার সরকারের পতনের মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ ফজলে বারীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে। ছাত্র-জনতা ও স্থানীয়দের তোপের মুখে নিজের অপকর্মের সব অভিযোগ স্বীকার করে জেলার সিভিল সার্জন(সদ্য ওএসডি হওয়া) ডাঃ মোঃ মকছেদুল মোমিনের উপস্থিতিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার পদ থেকে অব্যাহতি নিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করেন।
তবে ডাঃ ফজলে বারীর অব্যাহতি নেওয়ার পরে তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি ও নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগের বিষয়ে মানিকগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে কোন তদন্ত কমিটি গঠন না করে স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বারবার অভিযোগের বিষয়ে লিখিতভাবে জানিয়েছেন সদ্য ওএসডি হওয়ার সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মকছেদুল মোমিন। শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দায়িত্বরত একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করা হলে অদৃশ্য কারণে ডাঃ ফজলে বারীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করেননি সিভিল সার্জন। এতে হাসপাতালের কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ জনমনে নান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে ২০২৩ সালে যোগদান করেন ডাঃ ফজলে বারী। এর পর থেকে হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তার এসব কাজে সহযোগিতা করতো হাসপাতালে প্রধান সহকারী আশরাফুজ্জামান ফরিদ। গত ৫ আগস্টে স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর শিবালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র ও স্থানীয়রা তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ করেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের তোপের মুখে অবশেষে এসব অভিযোগ স্বীকার করে নিজে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার পদ থেকে অব্যাহতি নিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করেন তিনি।
অনুসন্ধান বলছে, গেলো বছরের ২০ আগস্ট শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার পদ থেকে নিজে অব্যাহতি নিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করেন সাবেক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ ফজলে বারী। অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে তিনিসহ হাসপাতালের একাধিক দায়িত্বরত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে। তবে সদ্য ওএসডি হওয়া মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাঃ মকছেদুল মোমিন ডাঃ ফজলে বারী বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত না করে স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে কাছে লিখিতভাবে অভিযোগে বিষয়ে অবগত করেন। কিন্তু হাসপাতালের একাধিক দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছিলেন। বর্তমানের ডাঃ ফজলে বারী রাজধানী ঢাকার কামরাঙ্গীরচর ৩১ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ওই সময়ে ডাঃ ফজলে বারী বিরুদ্ধে হাসপাতালের নানা অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নজরী কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ গুলোর মধ্য- শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফজলে বারী যোগদানের পর থেকে অপকর্মের মাধ্যমে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পরেন। আর তার অনিয়ম ও দুর্নীতিতে সার্বিক সহযোগিতা করেন হাসপাতালের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান অফিস সহকারী আশরাফুজ্জামান ফরিদ। তাদের দুইজনের যোগসাজশে ২০২২-২৩ অর্থ বছরের এমএইচভিদের বেতন থেকে প্রায় ৩ লাখ টাকা, হাসপাতালের জিপ গাড়ির জ্বালানি বাবদ দুই বছরে লক্ষাধিক টাকা, হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাজ বাবদ গত দুই বছরে ২ লাখ টাকা, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর বিভিন্ন বরাদ্দে থেকে ৩ লাখ টাকা, এমএসআর টেন্ডার বাবদ ২০ লাখ টাকাসহ বিভিন্ন বরাদ্দ থেকে লাখ লাখ টাকা লোপাট। এ ছাড়া উপজেলার ২২টি কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য বাৎসরিক ১২ হাজার টাকা বরাদ্দে অনিয়ম। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে বারীর যোগসাজশে স্থানীয় সাবেক এমপি সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদের নাম ভাঙিয়ে এসব অনিময়-দুর্নীতি করেছেন। গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর হাসপাতালের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়গুলো জনসম্মুখে প্রকাশ পায়।
সুশাসনের জন্য নাগরিক(সুজন) মানিকগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস বলেন, ‘যে কোন অভিযোগের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে তদন্ত হওয়া উচিত। অভিযোগের পর তদন্তে যদি দোষ প্রমাণিত হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তা না হলে যারা অন্যায় ও অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তাদেরকে আরও উৎসাহিত করা হয়। আর তদন্তে দোষী না হলে তার সম্মান যেন ক্ষুন্ন না হয় সেই দিকেও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।
জানতে চাইলে এ বিষয়ে ডাঃ ফজলে বারী বলেন, মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। দেশের পরবর্তী পরিস্থিতি ওই সময়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ গুলো সত্য ছিল না। ওই সময় সিভিল সার্জনের নির্দেশেই আমি অব্যাহতি নিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করেছি। অভিযোগের বিষয়ে পরে সিভিল সার্জন কার্যালয় অথবা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে তদন্ত হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। আর আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য নয় বলেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আস্থা রেখে আমাকে ঢাকার কামরাঙ্গীরচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে পদায়ন করেছে।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের সদ্য ওএসডি হওয়া সিভিল সার্জন ডাঃ মকছেদুল মোমিন বলেন, ‘শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাবেক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ ফজলে বারী আমার উপস্থিতিতেই পদ থেকে নিজে অব্যাহতি নিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করেন। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে আমি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়েছি। আমি তো তাকে নিয়োগ দেয়নি বা সরাসরি তার নিয়োগ কর্তৃপক্ষ নই। কাজেই অভিযোগের বিষয়ে আমি তদন্ত করতে পারি না। আমি তার চাকরি তো খাইতে পারবো না। এখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কেন তার অভিযোগের বিরুদ্ধে তদন্ত করেনি বা ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি সেটা আমি বলতে পারবো না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।