ক্লাসেনের টর্নেডো গতির সেঞ্চুরি, দক্ষিণ আফ্রিকার রানের পাহাড়

ক্লাসেন

স্পোর্টস ডেস্ক : ওস্তাদের মার শেষ রাতে! বাংলা এই প্রবাদটার একদম যথার্থ প্রয়োগ যেন ঘটালেন হেনরিখ ক্লাসেন। বিশ্বকাপে দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে শেষ দিকে দলের সবচেয়ে প্রয়োজনের মুহূর্তে জ্বলে উঠলেন ক্লাসেন। হাঁকালেন ঝড়ো এক সেঞ্চুরি। আর সেই সেঞ্চুরিতে ভর করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৯৯ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করাল দক্ষিণ আফ্রিকা। 

ক্লাসেন

মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে টসে জিতে আগে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় ইংল্যান্ড। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে এই ম্যাচে চোটের কারণে মাঠে নামতে পারেননি অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। ফলে অধিনায়কত্ব করছেন এইডেন মারক্রাম। ওপেনিংয়ে কুইন্টন ডি ককের সাথে নামেন রেজা হেনড্রিক্স। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ডি ককের উইকেট হারিয়ে ফেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। ২ বলে ৪ রান করে সাজঘরে ফেরেন ফর্মে থাকা এই ওপেনার।

তবে হুট করেই ওপেনিংয়ে সুযোগ পেয়ে তা দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন হেনড্রিক্স। তিনে নামা র‍্যাসি ভ্যান ডার ডুসেনকে সাথে নিয়ে প্রতিরোধ গড়তে থাকেন হেনড্রিক্স। দুজনই ছিলেন বেশ মারমুখি। ইংলিশ বোলারদের কচুকাটা করে দলের বোর্ডে রান তুলতে থাকেন দুজন। তাদের সাবলীল ব্যাটিংয়ে চাঙ্গা হয়ে ওঠে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস।

ফিফটি তুলে নিয়েছেন দুজনই। হেনড্রিক্স ফিফটি পেরিয়ে আরও বড় কিছুর দিকে ছুটতে থাকেন। ডুসেন অবশ্য ফিফটি ছুঁয়ে আর খুব বেশি দূর আগাতে পারেননি। ৬১ বলে ৬০ রান করে দলের ১২৫ রানের মাথায় থামেন ডুসেন। হেনড্রিক্স অবশ্য সেঞ্চুরির খুব কাছে চলে গিয়েছিলেন। তবে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারটা শেষমেশ ছুঁতে পারেননি তিনি। ৭৫ বলে ৮৫ রানের ইনিংস খেলে দলের ১৬৪ রানের মাথায় আউট হন হেনড্রিক্স।

মাঝে চারে নেমে মাঝারি একটি ইনিংস খেলেন অধিনায়ক এইডেন মারক্রাম। ৪৪ বলে ৪২ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। আউট হয়েছেন দলীয় ২৩৩ রানের মাথায়। তবে আসল খেলা তখনও ঢের বাকি ছিল। হেনরিখ ক্লাসেন যে শেষ বেলায় সবকিছু তছনছ করে দেওয়ার প্রতিজ্ঞায় টিকে ছিলেন ক্রিজে!

প্রোটিয়াদের ইনিংসের শেষ দিকে ঝড় তোলেন ক্লাসেন। তার ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন ইংলিশ বোলাররা। সবাইকে পিটিয়ে লাল করে দিয়ে রান তুলতে থাকেন ক্লাসেন। আরেক প্রান্ত থেকে তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছিলেন মার্কো ইয়ানসেন।

সময়ের সাথে সাথে বেড়েছে ক্লাসেনের রানের গতি। বাউন্ডারির ফুলঝুরি ছুটিয়ে রান তুলতে থাকেন ক্লাসেন। নিজে ছুঁয়ে ফেলেন ফিফটি। দলও পার করে ফেলে ৩০০ রানের কোটা।

ফিফটি পেরিয়েও ছুটতে থাকে ক্লাসেনের উইলো। তার টর্নেডো গতির ব্যাটিংয়ে ক্রমশই বড় হচ্ছিল প্রোটিয়াদের ইনিংস। মারমুখি ব্যাটিংয়ে ইংলিশ বোলারদের চোখের পানি আর নাকের পানি এক করে ছেড়েছেন ক্লাসেন। শেষমেশ কাঙ্ক্ষিত সেঞ্চুরিটাও ছুঁয়ে ফেলেছেন ক্লাসেন। মাত্র ৬২ বলে সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন তিনি। অসাধারণ এক ইনিংসই বটে! 

‘রোনালদিনহোর সঙ্গে সাক্ষাৎটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে’

ক্লাসেনের সাথে কম যাননি ইয়ানসেনও। সুযোগ বুঝে ইংলিশ বোলারদের ওপর চড়াও হয়েছেন তিনিও। মারমার কাটাকাট ব্যাটিংয়ে দারুণ এক ফিফটিও তুলে নেন তিনি। অন্যদিকে ইনিংসের একদম শেষ ওভারে আউট হয়েছেন ক্লাসেন। সাজঘরে ফেরার আগে খেলেছেন ৬৭ বলে ১০৯ রানের অনবদ্য এক ইনিংস। ইনিংসের শেষ পর্যন্ত টিকে থেকে ৪২ বলে ৭৫ রান করেন ইয়ানসেন। নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ৩৯৯ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায় দক্ষিণ আফ্রিকা। 

ইংল্যান্ডের হয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন রিস টোপলি। এছাড়া ২টি করে উইকেট নেন আদিল রশিদ এবং গাস আটকিনসন।