সকালে ঢাকার আকাশে ছিল ঘন কুয়াশা। তবে সাধারণ কুয়াশার মতো শুধু দৃষ্টিসীমা কমে যাওয়ার দৃশ্য নয় অনেকেই লক্ষ্য করেছেন, আকাশ থেকে হালকা বৃষ্টির মতো পানি ঝরছে। রাস্তা ভিজে যাচ্ছে, গাড়ির কাচে পানি জমছে। এই দৃশ্য অনেকের কাছেই বিভ্রান্তিকর মনে হয়েছে। একে বলা হয় ফগ ড্রিপ বা মিস্ট রেইন।

কুয়াশা হলো মাটির কাছাকাছি তৈরি হওয়া এক ধরনের মেঘ। বাতাসে থাকা জলীয় বাষ্প যখন অতিরিক্ত ঠান্ডায় ক্ষুদ্র জলকণায় পরিণত হয়, তখন তা বাতাসে ভেসে থাকে। এই কণাগুলো এত ছোট যে সাধারণত এগুলো বৃষ্টির মতো নিচে পড়ে না বরং বাতাসে স্থির হয়ে কুয়াশা তৈরি করে।
কিন্তু কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে কুয়াশার জলকণাগুলো একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটু বড় হয়ে যায়। তখন সেগুলো বাতাসে ভেসে থাকতে পারে না এবং ধীরে ধীরে নিচে ঝরে পড়ে। এই ঘটনাকে আবহাওয়াবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ড্রিজল বাংলায় যাকে হালকা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি বলা যায়।
অতিরিক্ত ঠান্ডা হলে কেন এমন হয়
অতিরিক্ত ঠান্ডা ও আর্দ্র আবহাওয়ায় বাতাস প্রায় সম্পূর্ণ জলীয় বাষ্পে পরিপূর্ণ থাকে। একে বলা হয় স্যাচুরেটেড এয়ার। এই অবস্থায় কুয়াশার কণাগুলো দ্রুত বড় হতে থাকে। বিশেষ করে রাত বা ভোরের দিকে, যখন তাপমাত্রা সবচেয়ে কম থাকে, তখন এই প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হয়। ফলে কুয়াশা থেকেই বৃষ্টির মতো পানি ঝরতে দেখা যায়। তবে এটি সাধারণ বৃষ্টি নয়। সাধারণ বৃষ্টি হয় উঁচু মেঘ থেকে, যেখানে বড় বড় জলকণা তৈরি হয় এবং মাধ্যাকর্ষণের টানে নিচে পড়ে। কিন্তু কুয়াশা থেকে ঝরা এই পানি আসে মাটির খুব কাছাকাছি স্তর থেকে এবং এর ফোঁটাগুলো খুবই ছোট। তাই অনেক সময় এটি বৃষ্টি না বলে ফগ ড্রিজল বা মিস্টি ড্রিপ হিসেবেও পরিচিত।
ঢাকার মতো বড় শহরে এই ধরনের ঘটনা তুলনামূলক বেশি দেখা যায়। কারণ বাতাসে ধুলা, ধোঁয়া ও দূষণকণা বেশি থাকায় জলীয় বাষ্প সহজে এসব কণার চারপাশে জমে। ফলে কুয়াশা ঘন হয় এবং সেখান থেকে ড্রিজল হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে।
কুয়াশা, মিস্ট ও ড্রিজলের পার্থক্য
আন্তর্জাতিকভাবে দৃষ্টিসীমা এক কিলোমিটারের কম হলে তাকে বলা হয় কুয়াশা। এক কিলোমিটারের বেশি কিন্তু আট কিলোমিটারের কম হলে সেটি মিস্ট। আর কুয়াশার ভেতর থেকে যখন হালকা পানি ঝরে পড়ে, তখন সেটিই ড্রিজল। আজ ঢাকায় মূলত এই ড্রিজলই দেখা গেছে।
এই ধরনের কুয়াশা–ড্রিজল সরাসরি বিপজ্জনক না হলেও যান চলাচলে ঝুঁকি বাড়ায়। রাস্তা ভিজে পিচ্ছিল হয়ে যায়, দৃশ্যমানতা কমে যায়। তাই চালকদের সতর্ক থাকা জরুরি, বিশেষ করে ভোর ও সকালের দিকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতকালে এমন ঘটনা তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার ভারসাম্য বদলের ইঙ্গিত দেয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়ার এই ধরনের অস্বাভাবিক আচরণ ভবিষ্যতে আরও ঘন ঘন দেখা যেতে পারে।
সূত্র: বিবিসি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফি ও ব্রিটানিকা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।


