জুমবাংলা ডেস্ক : ঢাকাসহ প্রায় সারা দেশে একদিনের ব্যবধানে ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমেছে। গতকাল সোমবার চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে নওগাঁর বদলগাছিতে ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, আজ মঙ্গলবার থেকে তাপমাত্রা আরো কিছুটা কমতে থাকবে। এরপর ১৪ ডিসেম্বর থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বেশ কিছু এলাকার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইতে শুরু করতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘বিচ্ছিন্নভাবে সোমবার কোনো কোনো জায়গায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসতে পারে। সোমবার থেকে পরের তিন দিনের মধ্যে বদলগাছিতে তাপমাত্রা থাকবে সবচেয়ে কম। একইভাবে রাজশাহী, রংপুর, খুলনা বিভাগের যশোর, কুষ্টিয়া, সিলেটের শ্রীমঙ্গল, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়। এসব এলাকার কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যেতে পারে, তখন শুরু হবে শৈত্যপ্রবাহ। শীতের তীব্রতা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকবে। তখন উত্তরাঞ্চলে শীতের হিমেল কনকনে বাতাস বইতে শুরু করবে।’ বাংলা ট্রিবিউন।
গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীতে সূর্যের দেখা পাওয়া গেলেও দুপুরের পর হুট করে বইতে শুরু করে উত্তর থেকে আসা শীতের হাওয়া। তাপমাত্রাও নেমে যেতে শুরু করে। ঘরের বাইরে থাকা অনেকেই হঠাৎ ঠাণ্ডায় বিপদে পড়ে যান। বিশেষ করে রাস্তার শ্রমজীবী মানুষের ভোগান্তি বেড়ে যায়। রাজধানীর বাংলামোটরে রিকশাচালক রমিজ মিয়া বলেন, ‘গত রাতে ঠাণ্ডা বাড়ছিল। রিকশা না চালিয়ে বাসায় চলে গেছিলাম। সকালে উঠে রোদ দেখে বের হইছিলাম। দুপুর পর্যন্ত ভালোই ছিলাম। দুপুরের পর হঠাৎ শীতটা বেশি লাগতেছে। গরমের কাপড়ও কিনি নাই। কষ্ট হইতেছে রিকশা চালাইতে।’
একই অবস্থা রাস্তার পাশে বসা হকারদেরও। পল্টনের এক হকার আশিক বলেন, ‘সকালে রোদ ওঠায় আরামে ছিলাম। দুপুরের পর শীতের বাতাসটা বাড়ছে। এখন খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। নাক-মুখ ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে।’
এদিকে অফিস ফেরত মানুষের মাঝেও অনেকে আজ সকালে রোদের দেখা পেয়ে তেমন একটা ভারী কাপড় নিয়ে বের হননি। কিন্তু বিকালে অফিস থেকে বের হয়ে বিপাকে পড়ে যান। হঠাৎ ঠাণ্ডা বাতাসে জুবুথুবু অবস্থা হয়ে যায়। অনেক নিম্নবিত্ত মানুষকে একটু তাপের আশায় রাস্তার পাশে থাকা হকারদের পিঠা বা রুটির ভাজার চুলার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
ঢাকায় গতকালকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিও চলতি মৌসুমে ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগে গত ৯ ডিসেম্বর ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৯ দশমিক ৫, অর্থাৎ একদিনের ব্যবধানে প্রায় ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমে গেছে। একইভাবে রাজশাহীতে শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৮ দশমিক ৮, যা সোমবার ৬ ডিগ্রি কমে ১২ দশমিক ৩, রংপুরে গতকাল ৩ ডিগ্রি কমে ১৫ দশমিক ৫, ময়মনসিংহে শনিবার ছিল ১৯ দশমিক ৩, সোমবার তা ৪ ডিগ্রি কমে ১৫ দশমিক ৩, তবে সিলেটে তাপমাত্রা কমেছে কম। সেখানে শনিবার ছিল ১৯ দশমিক ৮, গতকাল ১ ডিগ্রি কমে দাঁড়িয়েছে ১৮। চট্টগ্রামে শনিবার ছিল ২৩ দশমিক ৩, আজ তা ৫ ডিগ্রি কমে ১৮ দশমিক ২, খুলনায় শনিবার ছিল ২০ ডিগ্রি, ৫ ডিগ্রি কমে গতকাল ১৫ এবং বরিশালে শনিবার ছিল ১৯ দশমিক ৮, গতকাল তাপমাত্রা প্রায় ৫ ডিগ্রি কমে ১৪ দশমিক ৭ ডিগ্রিতে নেমে গেছে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বিহার ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চলে ও নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
মঙ্গলবারের পূর্বাভাসে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চলে ও নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্য এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
নীলফামারীতে ৩ দিন ধরে কনকনে ঠাণ্ডা
নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, তিন দিন ধরে কনকনে ঠাণ্ডা বিরাজ করছে উত্তরের জেলা নীলফামারীতে। সেই সাথে ঘন কুয়াশার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছে এ জেলার দরিদ্র মানুষজন। মেঘলা আকাশ আর কুয়াশার কারণে গতকাল দুপুর ১টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি এই জেলায়। দিনের বেলায় হেড লাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় খেটে খাওয়া ও নি¤œ আয়ের মানুষজন বাইরে বের হতে না পেরে পড়েছেন দুর্ভোগে। বিশেষ করে ডিমলা উপজেলার তিস্তা নদীর কোল ঘেঁষা গ্রাম ও চরের মানুষজন সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছেন। শীত নিবারণ করতে গরম কাপড় সংগ্রহে নিম্ন আয়ের মানুষরা পৌরসভা মাঠের পুরনো কাপড়ের বাজারে ভিড় করছেন।
এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে সোমবার সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সৈয়দপুর বিমানবন্দরে ফ্লাইট উঠা-নামা বন্ধ ছিল। ১০টার পর দৃষ্টিসীমা বাড়লে ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক হয়।
সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ লোকমান হোসেন জানান, সোমবার সকালে নীলফামারীর সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কুড়িগ্রামে নিম্নগামী তাপমাত্রা
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, কুড়িগ্রামে গত রোববারের তুলনায় কুয়াশা কিছুটা কমলেও নিম্নগামী হয়ে পড়েছে তাপমাত্রা। কৃষি আবহাওয়া অফিস জানায়, গতকাল সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর গত রোববার ছিল- ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে হঠাৎ করে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় ব্যাহত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক কাজকর্ম। ঠাণ্ডার প্রকোপে দুর্ভোগে পড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষজন। অনেকের প্রয়োজনীয় গরম কাপড় না থাকায় সময়মতো কাজে যেতে পারছেন না।
স্থানীয়রা জানান, কুয়াশার দাপট কিছুটা কমলে উত্তরীয় হিমেল হাওয়া কনকনে ঠাণ্ডার মাত্রা অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার উমরমজিদ ইউনিয়নের হযরত আলী জানান, আজ সকাল থেকে শীত একটু কম কিন্তু ঠাণ্ডা বাতাস হাতপা ধরে আসছে। আমরা কাজে যেতে পারছি না।
কুড়িগ্রাম আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবলচন্দ্র সরকার জানান, আজ সোমবার সকালে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে-১৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রতিদিন তাপমাত্রা আরো কমতে থাকবে। আগামী ২০ তারিখের পরে এ অঞ্চলের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্য প্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, শীতপ্রবণ এ জেলায় শীতের শুরুতেই হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষের মাঝে সরকারিভাবে ৪৫ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আরো বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।