জুমবাংলা ডেস্ক : সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির এনআইডি নম্বর সংগ্রহ। সেসব এনআইডি ব্যবহার করে কেনা হত সিম। পরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে জড়িতদের সহায়তায় খোলা হতো বিকাশ, নগদ, রকেটসহ মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট। আবার সেসব সিম থেকে প্রভাবশালী ব্যক্তির পরিচয় দিয়ে নানাজনকে ফোন করে প্রতারণা। আগাগোড়া জোচ্চোর এমন এক প্রতারক চক্রের সাত সদস্যকে ধরেছে পুলিশ।
আটককৃতরা হলেন— অনিক, মো. রবিউল হোসেন, সাব্বির করিম আহাম্মেদ, জোবায়ের আলম, মোক্তার হোসেন, অন্তু দে এবং ফজলুল করিম নাহিদ। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে পুলিশ।
এ সময়ে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর কোম্পানির ২১৪টি সিম, একটি ল্যাপটপ, স্মার্ট ফোন ৮টি, ট্যাব ২টি, বাটন ফোন ৫টি, ‘নগদ পকেট ডাক্তার’ সংবলিত ডিসকাউন্ট কার্ড ৫০০টি, ‘গ্রিন বাংলা আরকেআর’ লেখা সংবলিত কার্ড হ্যাঙ্গার, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, স্যালারি শিট ও টি শার্ট, বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তার সিল, ভুয়া পুলিশ কার্ড, ভুয়া সাংবাদিক কার্ড, নগদ ডাকবিভাগের ডিজিটাল লেনদেনের কার্ড, বিভিন্ন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়।
২০২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর মিরপুর মডেল থানার একটি মামলা তদন্তে বেরিয়ে আসে ভয়ঙ্কর এই চক্রের নাম।
৩ ধাপে প্রতারণা
মূলত এই প্রতারক চক্র তিন ধাপে প্রতারণার কাজ করে থাকে। প্রতিটি ধাপেই আলাদা আলাদা গ্রুপ কাজ করে। প্রথম ধাপে প্রথম গ্রুপ বিভিন্ন মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্র, আঙ্গুলের ছাপ সংগ্রহ করে। এই গ্রুপ তাদের এসব তথ্য দ্বিতীয় গ্রুপের কাছে বিক্রি করে দেয়। দ্বিতীয় ধাপে এই গ্রুপ এসব তথ্য দিয়ে এসব নামে সিম কেনে এবং বিকাশ ও নগদ অ্যাকাউন্ট খুলে। এরপর এসব সিম তারা উচ্চমূল্যে বিক্রি করে দেয় তৃতীয় গ্রুপের কাছে। তারা এসব সিম ব্যবহার করে কখনও জ্বিনের বাদশাহ, কখনো বিকাশ বা নগদ এজেন্ট সেজে, কখনো পুলিশ কর্মকর্তা সেজে আসামি ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে, কখনো সরকারি কর্মকর্তা সেজে সমস্যার সমাধান করে দেওয়ার কথা বলে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেন।
অরুণার মোবাইলই নেই, কিন্তু সিম আছে, বিকাশ-নগদ আছে!
বিকাশের মাধ্যমে প্রতারণার অভিযোগে ২০২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা করা হয়। সেই মামলা তদন্তে গিয়ে আটক করা হয় অরুণাকে। কিন্তু অরুণা জানান, তার কোনো মোবাইলই নেই। তিনি কোনো মোবাইলই ব্যবহার করেন না! তাই তার কাছে কোনো সিম নেই। কোনো বিকাশ কিংবা নগদ অ্যাকাউন্টও নেই। পরে প্রযুক্তির সহায়তায় নিশ্চিত হওয়া যায়, এই ঘটনার সঙ্গে অরুণার যোগসাজশ নেই। কারণ, অরুণা ঢাকায় থাকলেও সেই সিমের অবস্থান রাজশাহীতে! পরে অরুণাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সরকার স্বল্পমূল্যে চাল, ডাল, তেল দেবে বলে কিছুদিন আগে তাদের বাসায় কয়েকজন লোক আসেন। তারা এজন্য তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র, আইরিশ (চোখের ছাপ) ও আঙুলের ছাপ নিয়ে যান। কিন্তু এরপর তারা আর আসেননি। মূলত স্বল্পমূল্যে চাল, তেল দেওয়ার নাম করে তাদের তথ্য হাতিয়ে নিয়েছিল অনিকের গ্রুপ। তাদের যাতে মানুষ সন্দেহ না করে এজন্য তারা মাঝে মাঝে বিভিন্ন বাসায় আটার প্যাকেট, তেলের বোতলও সঙ্গে নিয়ে যেতেন! সবাই প্রতিষ্ঠানের লোগো সম্বলিত একই ধরনের টি শার্টও পরতেন।
প্রতারক চক্রে মোবাইল ব্যাংকিং কর্মকর্তাও!
ভয়ঙ্কর এই প্রতারক চক্রের দুই সদস্য চাকরি করেন মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান বিকাশেও। আটক জোবায়ের, সাব্বির, মোক্তার হোসেন ও অন্তু দে মোবাইল ব্যাংকিং ডিস্ট্রিবিউশনের নিয়োগকৃত কর্মকর্তা। তারা তাদের কাছে থাকা পাসওয়ার্ড এজেন্টের কাছে দিয়ে দেন। ফলে এজেন্ট সহজেই অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলতে পারেন। তাদের দাবি, প্রতিষ্ঠানের বেঁধে দেওয়া মাসিক টার্গেট পূরণের জন্যই তারা এভাবে এই প্রতারক চক্রকে ‘সহযোগিতা’ করেছেন।
৫০ টাকার সিম ৫ হাজার টাকা!
সাধারণত একটি সিমের দাম ৫০ টাকা। ক্ষেত্রবিশেষে কিছু সিম ১০০ টাকায়ও বিক্রি হয়। কিন্তু এ প্রতারক চক্রের সিমের দাম পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তারা যে সমস্ত সিম প্রতারণার মাধ্যমে সংগ্রহ করেন তা বিক্রি করেন অন্য প্রতারক চক্রের কাছে। যেহেতু এসব প্রতারক চক্র জ্বিনের বাদশাহ, বিকাশ-নগদ প্রতারণাসহ অন্যান্য প্রতারণার কাজে এসব সিম ব্যবহার করেন তাই তাদের কাছে এসব সিমের খুব চাহিদা। এসব সিম তারা এক হাজার থেকে শুরু করে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়ে কিনেন! পরে এসব সিম দিয়ে তারা বিভিন্ন মানুষকে ফোন করে টাকা হাতিয়ে নেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।