জুমবাংলা ডেস্ক : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের জন্য সার্ভিস প্রোভাইডার/অপারেটর হিসেবে টানেলটি নির্মাতা সংস্থা চীন সরকারের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশনস কন্সট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) নিয়োগ পাচ্ছে।
সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, টানেল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিসিসিসি’র প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এবং তাদের পূর্বঅভিজ্ঞতার আলোকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়োগ দিতে যাচ্ছে সরকার। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করা হবে।
‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ (কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহুলেন সড়ক টানেল নির্মাণ প্রকল্প) দক্ষিণ এশিয়ার নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন প্রথম টানেল। চীনা প্রতিষ্ঠান সিসিসিসি প্রকল্পটি জি-টু-জি ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর নাগাদ এই টানেল যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে বলে সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ৩.৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই টানেল চালু হলে চট্টগ্রাম শহরের পশ্চিম অংশের সঙ্গে কর্ণফুলী নদীর পূর্ব অংশের সড়ক যোগাযোগ স্থাপন, চট্টগ্রাম শহরের যানজট নিরসন এবং ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ আরও উন্নত হবে। তাছাড়া এটি এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে পণ্য পরিবহন সহজ হবে। এই টানেল জাতীয় জিডিপি প্রবৃদ্ধির বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
টানেলে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার আগে রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায় কাজের জন্য সার্ভিস প্রোভাইডার/অপারেটর নিয়োগ প্রয়োজন।
টানেল রক্ষণাবেক্ষণের উল্লেখযোগ্য কাজগুলো হলো- টানেল মেইনটেন্যান্স, ব্রিজ/ভাইয়াডাক্ট মেইনটেন্যান্স, উভয় পাশের অ্যাপ্রোচ রোড মেইনটেন্যান্স, ইনস্টল অ্যান্ড মেইনটেনিং টানেল হেলথ মনিটরিং সিস্টেম, পেট্রোল অ্যান্ড রেসকিউ, অটোমেটিক ওয়ে স্কেল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টোল কালেকশন, ইন্টিলিজেন্ট ট্রাফিক সিস্টেম (আইটিএস) সার্ভিল্যান্স সিস্টেম, টানেল ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড ড্রেইনেজ সিস্টেম, টানেল ফায়ার রেসকিউ সিস্টেম, টানেল এয়ার ভেন্টিলেশন অ্যান্ড লাইটিং সিস্টেম অ্যান্ড লাইটিং সিস্টেম উল্লেখ যোগ্য।
সূত্র জানায়, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ নির্মাণে নিয়োজিত ঠিকাদারী সিসিসিসি টানেলের রক্ষাণাবেক্ষণ ও টোল আদায় কাজের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে একটি প্রস্তাব দাখিল করেছে। সিসিসিসি চীনের একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং এই প্রতিষ্ঠানের মোট জনবল ১,১২,৭১৯ জন।
প্রতিষ্ঠানটি পরিবহন খাতে কাজ করে। ইতোমধ্যে চীনসহ অন্যান্য দেশে সড়ক ও রেল সেতু, হাই স্পিড রেলওয়ে, টানেল এবং বন্দর ইত্যাদি নির্মাণ করেছে। সিসিসিসি চীন ও চীনের বাইরে এক্সপ্রেসওয়ে, সেতু ও টানেল রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায় কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এরমধ্যে টানেলসহ ১৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ নমপেন-সিহানুকভিলে এক্সপ্রেসওয়ে, ২৫৫ কিলেমিটার দীর্ঘ ডাওঝেন-ওয়েংঅ্যান এক্সপ্রেসওয়ে, ১০৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ফুলিং-ফেংডু-সিঝু এক্সপ্রেসওয়ে, ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ নান ঝিং ইয়াংঝি রিভার টানেল অন্যতম।
সূত্র জানায়, টানেলের রক্ষণাবেক্ষণে পারফরম্যান্স বেজড মেইনটেইন্যান্স পদ্ধতি অনুসরণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে আধুনিক প্রযুক্তি অর্থাৎ টানেলের বিভিন্ন অংশে সেন্সর ব্যবহারের মাধ্যমে স্ট্রাকচারাল হেলথ মনিটরিং সিস্টেম চালু করা হবে। এর ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টানেলের বর্তমান অবস্থা মূল্যায়ন করে রক্ষণাবেক্ষণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সে অনুযায়ী রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থা টানেল বা এর আওতাধীন অন্য যে কোনো অবস্থানে বিদ্যমান যানবাহন সংক্রান্ত তথ্যাদি স্বয়ংক্রিয়ভাবে মোবাইল, বেতার বা অন্য কোনো ডিভাইসের মাধ্যমে জানার লক্ষ্যে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ট্রাফিক ইনফরমেশন অ্যাপ্লিকেশন চালু করবে।
স্বয়ংক্রিয়ভাবে পেভমেন্টের ক্ষতির পরিমাণ ও অবস্থান জানার জন্য রেয়াল টাইম রোড পেভমেন্ট ড্যামেজ ডিক্টেশন সিস্টেম চালু এবং স্বয়ংক্রিয় ওজন নিয়ন্ত্রণ ও ইলেক্ট্রনিক টোল কালেকশন (ইটিসি) সিস্টেম চালু করা হবে। টানেলের রক্ষাণাবেক্ষণে সিসিসিসি কর্তৃক দেশীয় জনবল সমন্বয়ে গঠিত টিমকে টানেল রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেবে। ওই টিম ভবিষ্যতে টানেলের রক্ষাণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।