জুমবাংলা ডেস্ক : দেশি মৎসভাণ্ডার খ্যাত চলনবিলের উজানের বিস্তীর্ণ মাঠের পানি নেমে গেছে। এখন বিলের নিচু অঞ্চল ও খাল এবং নদীতে পানি রয়েছে। এতে ভরা মৌসুমে কোথাও মাছের দেখা মিলছে না। ফলে শুঁটকি উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
শুক্রবার (৭ নভেম্বর) সরেজমিনে দেখা গেছে, চলনবিল অধ্যূষিত তাড়াশ উপজেলার মহিষলুটি এলাকার শুঁটকির চাতালের প্রায় সব বাঁশের চাটাই খালি পড়ে আছে। ১০ জন ব্যবসায়ীর একটি বড় চাতালে মাত্র তিনটি চাটাইয়ে সামান্য কিছু পুঁটি মাছের শুঁটকি রোদে শুকানোর কাজ করছেন দুইজন নারী শ্রমিক।
মাগুড়াবিনোদ ইউনিয়নের ললুয়াকান্দি গ্রামের মাজেদা খাতুন ও নওগাঁ ইউনিয়নের নওগাঁ গ্রামের মাফিয়া খাতুন নামে এক নারী বলেন, গত বছরও ৫টি শুঁটকির চাতালে কমপক্ষে ২৫ জন নারী শ্রমিক কাছ করেছেন। এ বছর তিনজন কাজ করছি। তাও ভাদ্র মাসের শেষের দিকে এসে দেড়মাস কাজ বন্ধ ছিল। আমরা খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছি।
শুঁটকির ব্যবসায়ী দেলবর হোসেন, সুজন, গফুর, নান্নু, আলম, জিল্লুর ও মান্নান জানান, চলনবিল অধ্যূষিত তাড়াশ উপজেলার মহিষলুটি বাজার ও মৎস্য আড়তের আশপাশে ২৫টি শুঁটকির চাতাল ছিলো। গত বছরও ৫টি চাতালে শুঁটকি উৎপাদন করা হয়েছে। এ বছর কাঁচা মাছের সংকটে ১০ জন ব্যবসায়ী এক হয়ে মাত্র একটি চাতালে শুঁটকি উৎপাদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ মৎস্য আড়ত ও স্থানীয় হাট-বাজার ঘুরেও মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এই কারণে দেড় মাস ধরে শুঁটকি উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। গত বছর ৫ জন ব্যবসায়ী প্রত্যেকে ৫০ লাখ টাকার টাকার শুঁটকি বিক্রি করেছিলেন বর্ষার এই সময়ের মধ্যে। অথচ এ বছর ১০ জন ব্যবসায়ী এখন পর্যন্ত মাত্র ২২ লাখ টাকা বিক্রি করেছেন বলে তারা জানিয়েছেন।
তাড়াশের সগুনা ইউনিয়নের কুন্দইল গ্রামের জেলে ফরহাদ আলী, মতিন, জয়নাল ও মাকড়শন গ্রামের মোকছেদ এবং তেতুলিয়া গ্রামের আজগর আলী জানান, মূলত বর্ষার কয়েক মাস মাছ ধরে তাদের সংসার চলে। চলনবিলে এই বছর তিনবার বন্যার পানি আসে। ভাদ্র মাসের প্রথম বন্যার পানিতে কিছু পাছ পাওয়া গেছে। আশ্বিন ও কার্তিক মাসের বন্যার পানিতে জাল ফেলে কোনো মাছ ধরা পড়ছে না। অমরা কর্মহীন দিন পার করছেন। আগে বিল থেকে পানি নামার সময় প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। এই বছর উঁচু এলাকা থেকে পানি নেমে বিস্তীর্ণ মাঠ জেগে উঠেছে। কিন্তু মাছের দেখা মিলছে না।
তাড়াশ ডিগ্রি কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মর্জিনা ইসলাম বলেন, চায়না দুয়ারী জাল পেতে মা মাছ ও পোনা মাছ নিধন করায় চলনবিলের মাছ আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এই জালে ধরা পড়ছে সাপ, কুইচা, কাঁকড়া, ব্যাঙ, শামুক, ঝিনুকসহ অধিকাংশ জলজ প্রাণী। জেলেরা মাছ ও কুইচা বিক্রি করে অন্যান্য জলজ প্রাণী মেরে ফেলছেন। এতে চলবিলের জীববৈচিত্র মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।
চলনবিল রক্ষা আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক রাজু বলেন, চলনবিল থেকে চায়না দুয়ারী জালসহ সব নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার বন্ধ করা না গেলে ভবিষ্যতে বিলের পানিতে মাছ খুঁজে পাওয়া যাবে না। সর্বপরি কোনো জলজ প্রাণী বংশ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারবে না।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মসগুল আজাদ দৈনিক ইত্তেফাককে বলেন, এখনো বিলে যে পরিমাণ পানি রয়েছে তাতে আশা করা যায় শেষের দিকে বেশ মাছ পাওয়া যাবে। অভিযান পরিচালনা করা হলেও চায়না দুয়ারী জাল রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশাল বিলের সব এলাকাতেই এ জাল পেতে রাতভর মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী নিধন করা হয়। কেবল জনসচেনতাই পারে চলনবিলের জীববৈচিত্র রক্ষা করতে।
ডিমেরিট পয়েন্ট পেয়েছে বাংলাদেশ-ভারত কানপুর টেস্টের আউট ফিল্ড
চলনবিলের মিঠা পানির পূঁটি, খৈলসা, চান্দা, মলা, ইচা, টেংড়া, গুচি, ক্যাকিলা, টাকি, শোল ও বোয়াল মাছের সুস্বাদু শুঁটকির বেশ কদর রয়েছে দেশ জুড়ে। তাছাড়া বিদেশে বসবাসরত বাঙালিদের মধ্যেও এ বিলের মাছের শুঁটকির ব্যাপক সমাদর রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।