জুমবাংলা ডেস্ক : বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ঘোড়া সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় ক্রেতা আকর্ষণের জন্য। পরে দিনভর দৌড়ঝাপসহ বোঝাবহনের ট্রায়ালের মাধ্যমে বিকিকিনি হয় ঘোড়া। ফলে দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে জামালপুরের ঘোড়ার হাট। সপ্তাহের বৃহস্পতিবার সদর উপজেলার তুলসীপুরে বসছে বিশাল এই হাট।
বিভিন্ন জাতের ও বাহারি রঙের শত শত ঘোড়ার পাশাপাশি এখানে বেচাকেনা হয় ঘোড়াগাড়ি ও লাগামসহ নানা সরঞ্জাম। দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকার ও সাধারণ মানুষ এ হাট থেকে ঘোড়া কিনে নিয়ে যান। অনেক কৌতূহলী মানুষও নানা জাতের ঘোড়া দেখতে ভিড় জমান এ হাটে। প্রশাসন বলছে হাটকে সমৃদ্ধি করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে।
স্থানীয় পাইকার কাদের মোল্লা বলেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহ ছাড়াও বগুড়া, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, রাজশাহী, চট্রগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট ও কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকার ও ঘোড়সওয়ার এ হাট থেকে ট্রায়াল দিয়ে পছন্দের ঘোড়াটি কিনে নেন। বিশেষ করে তরুণ ঘোড়সওয়াররা শখের ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতার জন্য চড়া দামে কিনে নেন আকর্ষণীয় তেজি ঘোড়া।
ঘোড়া কেনার জন্য হাটে ঘুরছেন ঢাকার খালেক। সদরঘাট-গুলিস্তান পথে চলে তার ঘোড়ার গাড়ি। সেই গাড়ির জন্য ঘোড়া কিনতে তুলসীপুর হাটে এসেছেন।
তিনি বলেন, এই হাটে বহু জাতের ঘোড়া পাওয়া যায়। বড় ও শক্তিশালী ঘোড়া পাওয়া যায় এখানে। দামও কম। তাই তিনি ঘোড়ার জন্য এই হাটে আসেন। এর আগে বহুবার তিনি এই হাট থেকে ঘোড়া কিনেছেন।
তিনি জানান, বাহাদুর নামের একটি ঘোড়া কিনতে চাইছেন। বিক্রেতা দাম হাঁকছেন ৮০ হাজার টাকা। তিনি ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত বলেছেন। কিন্তু বিক্রেতা এই দামে ঘোড়াটি ছাড়তে নারাজ। ঘোড়াটি কিনতে আরো অনেকে আগ্রহী। তাই শেষ পর্যন্ত এটি কিনতে পারব কি না, কে জানে!
ঘোড়া ব্যবসায়ী আলী আকবর জানান, দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে চলা এই ঘোড়ার হাটে ৫ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকার ঘোড়া পাওয়া যায়। দেশের নানা জায়গা থেকে এমনকি প্রবাসীরাও ভিডিও কলের মাধ্যমে এই হাট থেকে ঘোড়া কিনে থাকে। ঘোড়ার পাশাপাশি এখানে ৪ থেকে ৬ হাজার টাকায় পাওয়া যায় ঘোড়ার গাড়িও।
শাহজাদপুর থেকে আসা ঘোড়া ক্রেতা রমজান আলী বলেন, দেশের আর কোথাও ঘোড়ার হাট আছে কিনা আমার জানা নেই। এই হাটে দেশি, তাজী, ভুইটা, ক্রস এমনকি গাধা সাইজের ঘোড়াও পাওয়া যায়। তাই দূরের জেলা থেকেও গাড়ি ট্রাক বোঝাই করে ঘোড়া নিয়ে অনেকেই এ হাটে আসেন। তবে রাতযাপনে নিরাপত্তা নিয়ে তাদের অনেকটা শঙ্কায় থাকতে হয়।
ঘোড়া ব্যবসায়ী হাসেম আলী বলেন, এই ঘোড়ার হাটে ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকা নিয়ে ঘোড়া কিনতে আসে। এখানে নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ইচ্ছা ও প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও অনেকেই আসতে সাহস করেন না।
হাটের ইজারাদার মোহাম্মদ আব্দুল কুদ্দুস বলেন, প্রতি মৌসুমে এ হাটে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘোড়া বেচাকেনা হয়েছে। করোনাসহ নানা প্রতিকূলতার কারণে বেচাকেনা কমে গিয়েছিল। এখন আবার পুরোদমে জমতে শুরু করেছে। হাটে সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে।
জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিটুস লরেন্স চিরান বলেন, জেলার ঐতিহ্যবহনকারী এ ঘোড়ার হাট সমৃদ্ধ করতে উপজেলা প্রশাসন তৎপর রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।