লাইফস্টাইল ডেস্ক : নতুন বছর মানেই পুরোনো সব জঞ্জালকে পেছনে ফেলে নতুন করে সুন্দর জীবনের স্বপ্ন আঁকা। আর ইংরেজি নববর্ষ তো বিশ্বজুড়েই পালিত হয়। ৩১ ডিসেম্বর মধ্যরাতে নিউ ইয়ার সেলিব্রেশনে কাউন্টডাউন আর আতশবাজির আলোঝলমলে আনন্দে মেতে ওঠে পুরো পৃথিবীর মানুষ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাঁকজমক আয়োজনে বরণ করা হয়ে এদিনটি।
নিউ ইয়ার ইভের পার্টিতে থাকে ঐতিহ্যবাহী খাবারের আয়োজন। প্রচলিত রীতি-রেওয়াজ মেনে নতুন বছরে সৌভাগ্য কামনায় পরিবেশন করা হয় নানা পদের খাবার।
চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন দেশ কোন খাবার খেয়ে শুরু হয় নতুন বছরের যাত্রা–
যুক্তরাষ্ট্র
আমেরিকানরা প্রথাগতভাবে নতুন বছরের প্রথম দিনে ব্ল্যাক–আইড পিজ নামের একধরনের বিনস বা ডালজাতীয় খাবার খেয়ে থাকেন। আমেরিকার স্বাধীনতাসংগ্রামের সময় তাদের ইউনিয়ন সৈন্যরা এ বিনস খেয়ে দিনাতিপাত করেছেন বলে বিশ্বাস করে আমেরিকানরা। এ ছাড়া মনে করা হয়, এই খাবার নতুন বছরে সবার জন্য সাফল্য, সচ্ছলতা, উন্নতি নিয়ে আসবে।
নতুন বছরের প্রথম দিন ব্ল্যাক আইড পিজের সাথে স্মোকড মিট এবং রাইস দিয়ে তৈরি ঐতিহ্যবাহী খাবার হপিন জন পরিবেশন করা হয়। মনে করা হয়, এই খাবার নতুন বছরে সবার জন্য সাফল্য, সচ্ছলতা, উন্নতি নিয়ে আসবে। আবার ভাঁজ করা টাকার আদলে সাজানো কলার্ড অথবা শর্ষের শাক থাকে আমেরিকানদের নৈশভোজের টেবিলে। নতুন বছরে সম্পদের প্রাচুর্য আসার প্রার্থনাতেই এই খাবারের সাথে শুরু হয় তাদের নতুন বছর। সেই সঙ্গে তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী, জীবনে উন্নতির প্রতীক শূকরের মাংস আর সোনালি রঙের কর্ন ব্রেড বা ভুট্টার আটা দিয়ে বানানো রুটি খেয়ে সবাই প্রার্থনা করেন নতুন বছরের সোনালি দিনের আশা।
মেক্সিকো
কলাপাতায় মোড়া এক বিশেষ ধরনের খাবার খেয়ে মেক্সিকোতে শুরু হয় বর্ষবরণ উৎসব। ‘টামালেস’ নামের এই খাবারে থাকে কর্ন, মাংস, পনিরসহ আরও কিছু আইটেম। এক ধরনের স্যুপের সঙ্গে পরিবেশন করা হয় এই খাবার।
মেক্সিকোর নববর্ষ উদযাপনের আরেকটি ঐতিহ্যবাহী খাবার হচ্ছে রোসকা ডি রেস নামের এক ধরনের কেক বা রুটি। এতে বিভিন্ন ফলের মোরব্বা, গুঁড়া করা চিনি ও কিশমিশ দেওয়া থাকে।
ব্রাজিল
ব্রাজিলে সামাজিকভাবে ইউরোপীয় প্রভাব অনেকটাই বেশি। স্প্যানিশ ও পর্তুগিজদের মতো তাই এখানেও নববর্ষের ১২টি ঘণ্টাধ্বনির সঙ্গে ১২টি আঙুর বা আনারদানা খাওয়া হয়। এ ছাড়া নববর্ষের দিন চাল-ডাল থাকে সবার খাবার টেবিলে। স্প্যানিশ ও পর্তুগিজদের মতো তাই ব্রাজিলেও নববর্ষে আঙুর খাওয়া হয়
কারণ, তাঁদের ধারণা, চাল ও ডাল অর্থনৈতিক উন্নতির প্রতীক। এ ছাড়া এদিন সন্ধ্যায় সবাই মিলে বিভিন্ন রকমের ফলের রস দিয়ে তৈরি ককটেলসহ পানীয় পান করা হয় সাম্বা নাচের তালে তালে সমুদ্রসৈকতে।
ইতালি
ইতালিতে মসুর ডালকে বলা হয় সৌভাগ্যের খাবার। এখানে মিষ্টি আলু ও ডালের স্টু পরিবেশন করা হয় থার্টি ফাস্টের ডিনারে। এছাড়া কোটেচিনো নামের এক ধরনের সুস্বাদু সসেজ মসুর ডালের সাথে পরিবেশন করা হয়।
জাপান
জাপানের নিউ ইয়ার পার্টিতে যে খাবারটি অবশ্যই থাকে তার নাম হচ্ছে ‘সোবা নুডলস।’ জাপানি ঐতিহ্য অনুযায়ী এই খাবারকে বছর শেষের বিশেষ খাবারও বলা হয়। লম্বা সোবা নুডলস খেয়ে লম্বা ও সুখী জীবনের প্রত্যাশা জানানো হয়।
আর্জেন্টিনা
আর্জেন্টিনার খাদ্যতালিকায় এমনিতেও বিনস বা বিভিন্ন ডালজাতীয় খাবারের প্রাধান্য রয়েছে। অর্থকরী রবিশস্য হিসেবে আর্জেন্টাইন সমাজে তাই বিনসের আছে আলাদা কদর।
নববর্ষের দিনে আর্জেন্টিনার সবাই বিনস–জাতীয় খাবার শখ করে খান। তারা বিশ্বাস করেন, এতে তাদের জীবন ও জীবিকায় আসবে উন্নতি, আসবে প্রাচুর্য।
জার্মানি
চিনি ও বাদাম দিয়ে তৈরি ‘সুগার পিগস’ খেয়ে নতুন বছরকে বরণ করে জার্মানির অধিবাসীরা।
গ্রীস
গ্রীক নববর্ষে ভাসিলোপিটা নামের এক ধরনের কেক পরিবেশন করা হয়। কেকটি শুধুমাত্র সুস্বাদু নয়, এটি একটি বিশেষ ঐতিহ্যও বহন করে। নতুন বছরের জন্য তৈরি করা কেকের মধ্যে একটি মুদ্রা লুকানো থাকে এবং যে ব্যক্তি এটি খুঁজে পায় তার জন্য বছরটি অত্যন্ত সৌভাগ্যের হয় এটি বিশ্বাস করা হয়।
কোরিয়া
কোরিয়ায় চালের গুঁড়া দিয়ে ভাপে বানানো হয় রাইস কেক। এই রাইস কেক মাংস, ডিম, সামুদ্রিক শেওলা ও সবজি দিয়ে বানানো সুস্বাদু তেওকগুক স্যুপ নববর্ষের দিন পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে খাওয়াটাই কোরীয় রীতি।
স্পেন
স্পেনে বারোটি আঙুর খেয়ে নতুন বছর শুরু করার ঐতিহ্য রয়েছে। থার্টি ফার্স্টে টাইম স্কয়ারের সামনে বিশাল জনসমাগম হয়। রাত ঠিক বারোটার সময় ১২ বার ঘড়ির ঘণ্টাধ্বনি শোনা যায়। প্রতিটি ঘণ্টাধ্বনির সঙ্গে সঙ্গে একটি করে আঙুর খেয়ে নতুন বছর শুরু করে স্পেনের নাগরিকরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।