হাসিন আরমান : প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর পেরিয়ে গেলেও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনায় এখনও স্থায়ী কর্মকর্তার অভাব কাটেনি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ৩টি দপ্তরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, দুইটি দপ্তরে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পরিচালক পদ শূন্য রেখে দপ্তর প্রধানের মাধ্যমে এবং রেজিস্ট্রার ও জনসংযোগ দপ্তর অতিরিক্ত দায়িত্বে পরিচালিত হচ্ছে।

রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তর, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তর, আইসিটি সেল, জনসংযোগ দপ্তর, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ও রেজিস্টার দপ্তরসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে স্থায়ী কর্মকর্তা না থাকায় ভারপ্রাপ্ত ও অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে নিয়মিত কার্যক্রম।
বর্তমানে এসব দপ্তরে দায়িত্বে রয়েছেন— অর্থ ও হিসাব দপ্তরে কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া, যিনি ২৯ মে ২০১৮ থেকে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে মোহাম্মদ নুরুল করিম চৌধুরী, যিনি ৯ অক্টোবর ২০১৮ থেকে ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে দায়িত্বে আছেন। আইসিটি সেলে আইসিটি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ মেহেদী হাসান, যিনি গত ০৮ সেপ্টেম্বর থেকে ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের দায়িত্ব পেয়েছেন। জনসংযোগ দপ্তরে মোহাম্মদ এমদাদুল হক, যিনি ২০১৭ সালের ২৯ নভেম্বর থেকে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে আসছেন। পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরে ড. মো. শাহাবুদ্দীন, যিনি গত ০৬ অক্টোবর থেকে দপ্তরপ্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন এবং লাইব্রেরিতে মোঃ মুহিউদ্দীন আলম, যিনি গত বছরের ০২ অক্টোবর থেকে পরিচালকের শূন্য পদে দপ্তরপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়া রেজিস্ট্রার দপ্তরের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।
রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে আরও জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু দপ্তর গত ৭ থেকে ৮ বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত ও অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে।
ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান মোঃ মুহিউদ্দীন আলম বলেন, ‘আমি ১২ বছর ধরে ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। কাজের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হচ্ছে না, তবে আমার কোনো হেল্পিং হ্যান্ড না থাকায় পরামর্শ বা প্রশাসনিক কাজে সব একাই করতে হয়। প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছি।’
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ নুরুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আমি দপ্তরের শুরু থেকেই আছি, প্রায় ৭ বছরের বেশি সময় ধরে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। কাজের দিক থেকে সমস্যা নেই, তবে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। স্থায়ী পরিচালক নিয়োগ দিলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও উপকারী হবে।’
দপ্তর প্রধান (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) উপ-পরিচালক ড. মোঃ শাহাবুদ্দীন বলেন, ‘কাজে কোনো সমস্যা হচ্ছে না, তবে পরিচালক পদে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি হলেও এখনো তা কার্যকর হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণতা আনতে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।’
ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি ৩২ বছরের বেশি সময় ধরে অর্থ ও হিসাব বিভাগে কাজ করছি। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ বছরের বেশি সময় ধরে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি এবং অতিরিক্তভাবে রেজিস্ট্রারের দায়িত্বও পালন করছি। অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও এখনো স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়নি।’
আইসিটি সেলের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক ড. মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমি কয়েক মাস হলো দায়িত্ব পেয়েছি। সব কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের চেষ্টা করছি।’
জনসংযোগ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ এমদাদুল হক বলেন, ‘আমি উপাচার্য দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্বে আছি, পাশাপাশি জনসংযোগ দপ্তরের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি। এককভাবে সব কাজ করতে হচ্ছে, এমনকি ছুটির দিনেও কাজ করতে হয়। যদি এখানে জনসংযোগ ও তথ্য কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়, তাহলে আমি আমার কাজে ফিরে যেত পারব।’
এই বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, ‘আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে এবং এই কাজগুলো কঠিন; তবুও আমরা চেষ্টা করছি শীঘ্রই চারটি দপ্তরে নিয়োগ দেওয়ার জন্য। কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে, তবে নিশ্চিত করে বলতে পারছি না কতটুকু করতে পারব। ২০ বছর ধরে পরিচালক নেই তারাও পারেনি; কিছু জটিলতা আছে। লাইব্রেরিয়ান নিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক শর্ত থাকে, যেগুলো পূরণ করে এমন কাউকে পাওয়া যায় না। তাই এখানে এখনো নিয়োগ হয়নি।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



