কমান্ডো স্টাইলে প্রকাশ্যে গুলি করে ব্যবসায়ী আবদুল হাকিমকে হত্যার ঘটনায় স্তম্ভিত ও আতঙ্কিত চট্টগ্রামের রাউজানবাসী। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নিহত হাকিম বিএনপির কর্মী নন বলে দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও, স্থানীয়দের অভিযোগ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জেরেই এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। গত ১৪ মাসে রাউজানে এটি ১৩তম হত্যাকাণ্ড।
গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে আবদুল হাকিমের গাড়ি। পুরো গাড়িতে ২০টির বেশি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে, যার মধ্যে ১২টির বেশি বুলেটের ক্ষত ছিল হাকিমের বসার সিটে। যা স্পষ্ট করে যে, তাকে টার্গেট করেই হত্যা করা হয়েছে।
ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, হেলমেট পরিহিত কয়েকজন যুবক উপর্যুপরি গুলি চালাচ্ছে গাড়িটির দিকে। গাড়িটিতে হাকিমের ফুফাতো ভাই শুক্কুরও ছিলেন। তিনি গাড়ির পেছনের সিটে বসা থাকায় কোনোমতে বেঁচে গেলেও, গুলিবিদ্ধ হয়েছেন চালক।
শুক্কুর বলেন, আমি সঙ্গে সঙ্গে সিটের নিচে লুকিয়ে যাই। সামনের সিটে গুলি চালিয়ে তারা চলে যায়।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যার কিছু আগে হাটহাজারীর মদুনঘাট পানি শোধনাগারের মূল ফটকের সামনে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। ঘটনার পরদিনও এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, কেউ ভাবতেই পারেনি চলন্ত গাড়িতে এভাবে এসে গুলি করে হত্যা করা হবে। আরেকজন বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে হাটহাজারিতে আছি, এমন ভয়াবহ ঘটনা কখনও দেখিনি। আরও একজন বলেন, এ ঘটনায় পুরো এলাকার মানুষ আতঙ্কে আছে।
আবদুল হাকিমের বাড়ি রাউজানের বাগোয়ান ইউনিয়নের পাঁচখাইন এলাকায়। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। স্থানীয়দের বিপদে-আপদে পাশে থাকতেন হাকিম। তার এমন নৃশংস মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না কেউ। স্বজন ও স্থানীয়রা হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, উনি সবসময় মানুষকে সাহায্য করতেন। আমি বিদেশে গিয়েছিলাম, সেখানেও উনি সাহায্য করেছিলেন। আরেকজন বলেন, ওনার মতো মানুষ হয় না। আমরা সবাই ভয়ে আছি। আরও একজন বলেন, আমার ভাইকে যারা প্রকাশ্যে হত্যা করল, আমি তাদের কঠোর শাস্তি চাই।
এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রাউজানের নোয়াপাড়ায় বিক্ষোভ করেছে বিএনপির একাংশ। তাদের দাবি, নিহত হাকিম বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী ছিলেন, সে কারণেই তাকে খুন করা হয়েছে।
স্থানীয় এক নেতা বলেন, মানিক হত্যা, ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হত্যার সুষ্ঠু বিচার হলে হয়তো হাকিম ভাইকেও আজ হারাতে হতো না। আরেকজন বলেন, একটার পর একটা করে ১৫টি হত্যাকাণ্ড ঘটলেও এখনো কোনো কটিরই সুষ্ঠু তদন্ত বা বিচার হয়নি। আরও একজন বলেন, আবদুল হাকিমকে যেভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে, আমরা গভীরভাবে মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ।
চট্টগ্রাম হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, ভিকটিমের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ব্যবসায়িক, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত বিরোধ সবকিছুই আমরা তদন্তের আওতায় এনেছি। প্রতিটি দিক থেকেই খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে রাউজানে মোট ১৩টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ১০টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বলে জানা গেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।