জুমবাংলা ডেস্ক : সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নারীর অধিকার নিয়ে গঠিত ‘নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন’ বাতিলসহ চার দফা দাবিতে ঢাকায় বিশাল মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। এই ঘোষণাটি ইসলামপন্থী কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অবস্থানকে আবারো আলোচনায় এনেছে। মূল দাবি হিসেবে উঠে এসেছে নারী কমিশনের কিছু প্রস্তাব যেগুলো ইসলামী বিধানের পরিপন্থী বলে দাবি করেছে সংগঠনটি।
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন ও হেফাজতের আপত্তি
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠনের পেছনে সরকারের উদ্দেশ্য ছিল নারীর অধিকার, সমতা এবং সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির পথে একটি প্রগতিশীল আইনি কাঠামো তৈরি করা। এই কমিশনের রিপোর্টে উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারীর অধিকার পুনর্বিন্যাসের প্রস্তাবসহ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। হেফাজতে ইসলামের নেতারা দাবি করছেন, এইসব প্রস্তাব ইসলামি শরিয়ার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
মামুনুল হক, সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব, বলেন, “নারী কমিশন উত্তরাধিকার আইন পরিবর্তনের প্রস্তাব করছে, যেখানে ছেলের তুলনায় মেয়ের সম্পত্তির ভাগ সমান করার কথা বলা হয়েছে। এটি স্পষ্টভাবে কোরআনবিরোধী।” এছাড়া পতিতাবৃত্তিকে শ্রমের স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাবকেও ইসলামবিরোধী উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান ও কমিশন বাতিলের দাবি জানানো হয়।
চার দফা দাবির পেছনের কারণ ও হেফাজতের উদ্দেশ্য
হেফাজতের এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য চারটি দাবির ভিত্তিতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। দাবিগুলো হলো:
- নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন ও প্রতিবেদন বাতিল
- সংবিধানে ‘আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন
- হেফাজতের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার ও শাপলা চত্বরে ‘গণহত্যার’ বিচার
- ফিলিস্তিন ও ভারতে মুসলমানদের নিপীড়নের প্রতিবাদ
আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে মামলা রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার হতে পারে। তাই এখনই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হচ্ছে।” তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, আগামী সরকার মামলাগুলোকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।
কমিশনের পাল্টা বক্তব্য ও মনস্তাত্ত্বিক চাপের অভিযোগ
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য ফাওজিয়া করিম ফিরোজ বলেন, “আমরা কোনো ধর্মীয় বিধান পরিবর্তনের প্রস্তাব দেইনি। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল সিভিল আইন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করা।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের বিরোধিতা একাডেমিকভাবে করা যেতে পারে, কিন্তু জনসমাবেশের মাধ্যমে ভীতি তৈরি করা অনুচিত।”
কমিশনের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয় যে, এই রিপোর্ট কোনো বাধ্যতামূলক আইন নয়, এটি কেবল একটি পরামর্শমূলক প্রতিবেদন। কিন্তু হেফাজতের নেতারা মনে করছেন, এই রিপোর্টের সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়িত হতে পারে, যা ইসলামী সমাজ কাঠামোর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
সারাদেশজুড়ে প্রচারণা ও মাঠে প্রস্তুতি
হেফাজতে ইসলামের নেতারা ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলার কওমী মাদ্রাসাগুলো সফর করেছেন এবং সমাবেশে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেছেন। এই কর্মসূচিকে ঘিরে সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রচার-প্রচারণা জোরদার করা হয়েছে। মাঠপর্যায়ে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়।
এই আয়োজনের মাধ্যমে একটি বৃহৎ সামাজিক ও রাজনৈতিক বার্তা দিতে চাইছে হেফাজত। কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক দাবির কৌশল, যার মাধ্যমে ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগিয়ে হেফাজত তাদের অবস্থান দৃঢ় করতে চাইছে।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আরও পড়ুন:
বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
হেফাজতের দাবির মধ্যে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দুটি মাত্রা স্পষ্ট। তাদের আশঙ্কা হলো, ইসলামী বিধানের পরিবর্তন হলে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হবে। অন্যদিকে সরকার পক্ষ চাইছে নারী অধিকার বিষয়ে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে। এই দ্বন্দ্ব দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনার পথ তৈরি করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমাজের যে কোনো পরিবর্তনের পূর্বে জনগণের মতামত ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে সম্মান জানানো উচিত। একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত সমাজে বিভাজন তৈরি করতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন সম্পর্কে জাতীয় পর্যায়ে আরও গণআলোচনা হওয়া প্রয়োজন। এই আলোচনার মাধ্যমে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব।
FAQs
- নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন কী?
এটি একটি সরকারি কমিশন যা নারীর অধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আইনগত সুপারিশ প্রদান করে। - হেফাজতের দাবি কী?
নারী কমিশন বাতিল, ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রীয় আস্থা পুনঃস্থাপন, মামলা প্রত্যাহার ও মুসলিম নিপীড়নের প্রতিবাদ। - কমিশনের প্রস্তাব কিসের উপর ভিত্তি করে?
প্রস্তাবগুলো নারীর অধিকার, সিভিল ল এবং সামাজিক ভারসাম্য বজায় রাখার চিন্তা থেকে এসেছে। - এই প্রতিবেদন বাধ্যতামূলক কি?
না, এটি কেবল একটি সুপারিশমূলক প্রতিবেদন যা সরকার চাইলে বিবেচনায় নিতে পারে। - হেফাজতের আন্দোলনের রাজনৈতিক প্রভাব কতটুকু?
এটি সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারে এবং ধর্মীয় দলগুলোর রাজনৈতিক ভূমিকা বাড়াতে পারে।
Get the latest News first— Follow us on Zoombangla Google News, Zoombangla X(Twitter) , Zoombangla Facebook, Zoombangla Telegram and subscribe to our Zoombangla Youtube Channel.