স্পোর্টস ডেস্ক : পনেরো মাস আগে অস্ট্রেলিয়ার একটি প্রাদেশিক স্টেডিয়ামে এসে ভিক্টোরিয়া রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ড্যানিয়েল অ্যান্ড্রুজ ২০২৬ সালের কমনওয়েলথ গেমসের আয়োজক হওয়ার ঘোষণা দেন। তখন গর্বসহকারেই তিনি বলেন, ভিক্টোরিয়া এমন একটি কমনওয়েলথ গেমস উপহার দেবে, যেটা আগে কেউ আয়োজন করে দেখাতে পারেনি।
মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে ২০২৬ সালের কমনওয়েলথ গেমসের আয়োজক হওয়া থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন ড্যানিয়েল অ্যান্ড্রুজ। বিপুল সংখ্যক সাংবাদিকের উপস্থিতিতে অল্প কয়েকটি বাক্যে কমনওয়েলথ গেমস আয়োজনের চুক্তি থেকে ভিক্টোরিয়া প্রদেশের বের হয়ে যাওয়ার কথা জানান। এর ফলে ২০২৬ কমনওয়েলথ গেমস আয়োজন নিয়ে আবারো অনিশ্চয়তা তৈরি হল।
পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, কমনওয়েলথ গেমস আয়োজনে এখন আর উৎসাহ দেখাচ্ছে না কেউ। ফলে অনেকেই কমনওয়েলথ গেমস যুগের অবসান দেখতে পাচ্ছেন। তাদেরই একজন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পোর্টস স্ট্যাডিজ বিভাগের প্রভাষক স্টিভ জর্জাকিস। তিনি বলেন, ‘স্বাগতিক হওয়া থেকে ভিক্টোরিয়ার নাম প্রত্যাহার কমনওয়েলথ গেমসের বিলুপ্তি ঘটাতে পারে।’ অস্ট্রেলিয়ার স্পোর্টস ইতিহাসবিদ ম্যাথু ক্লুগম্যান বলেন, ‘এ সিদ্ধান্ত (আয়োজন হওয়া থেকে ভিক্টোরিয়ার সরে দাঁড়ানো) কমনওয়েলথ গেমসের মৃত্যুঘণ্টা ডেকে আনতে পারে।’
মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে ভিক্টোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড্যানিয়েল অ্যান্ড্রুজ বলেন, ২০২৬ গেমসটি আয়োজনের জন্য সিজিএফ কর্মকর্তারা তাদের শরণাপণ্ন হয়েছিলেন। আর তাদেরকে গেমসটি আয়োজনের ব্যাপারে সাহায্য করতে পেরে প্রাথমিকভাবে তারা খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু ‘যেকোনো মূল্যে’ তাঁর সরকার গেমসটি আয়োজনে আগ্রহী নয়।’
ভিক্টোরিয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষ্য, কমনওয়েলথ গেমস আয়োজনে ভিক্টোরিয়া সরকার ২.৬ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার ব্যয়ের পরিকল্পনা নিয়েছিল। যেটা ভিক্টোরিয়ার আয়োজক শহরগুলোর জন্য অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতে ব্যাপক সুফল বয়ে আনতো। কিন্তু ১২ দিনের এই গেমসটি আয়োজনের সম্ভাব্য ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার। গেমস আয়োজনে সম্ভাব্য ব্যয় বিপুল বেড়ে যাওয়ায় ভিক্টোরিয়া সরকার শেষ পর্যন্ত ২০২৬ সালের গেমসের স্বাগতিক হওয়ার চিন্তা বাদ দিতে বাধ্য হয়। যদিও গেমস আয়োজনে ভিক্টোরিয়া সরকারের ব্যয়ের অনুমিত হিসেবের সঙ্গে একমত নয় সিজিএফ।
কমনওয়েলথ গেমস আয়োজনে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব কী করে হলো। সেটা বুঝতে হলে কয়েক বছর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে। দ্য কমনওয়েলথ গেমস ফেডারেশন (সিজিএফ) ২০১৯ সালেই ২০২৬ সালের গেমসের স্বাগতিকের নাম ঘোষণার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু গেমসটি আয়োজনে বিপুল ব্যয়ের কারণে সম্ভাব্য আয়োজকেরা তখন একে একে পিছু হটেন। আগ্রহী কাউকে না পাওয়ায় পরবর্তী তিন বছর ধরে স্বাগতিক দেশ খুঁজতে বেড়াতে হয় সিজিএফকে।
২০২২ সালের গেমসের আয়োজক পেতেও কম ভোগান্তি পোহাতে হয়নি সিজিএফকে। আফ্রিকার প্রথম শহর হিসেবে ২০২২ সালের কমনওয়েলথ গেমসে ডারবানে আয়োজনের কথা ছিল। কিন্তু আর্থিক সংকট ও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনেকগুলো অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করতে না পারায় ২০১৭ সালে ডারবান থেকে কমনওয়েলথ গেমস সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সিজিএফ। এর ৯ মাস পরে গেমসটি আয়োজনে এগিয়ে আসে বার্মিংহ্যাম ও ব্রিটিশ সরকার। ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি ব্যয় পরে গেমসটি আয়োজন করে তারা। যেটা এ যাবতকালের সেরা গেমস আয়োজনের স্বীকৃতি পেয়েছে। যে আসরটিতে রেকর্ড পরিমাণ অ্যাথলেট অংশগ্রহন করেন।
এদিকে ২০২৬ সালের গেমসটি আয়োজনের জন্য মাত্র ৩ বছরের মতো সময় হাতে আছে। এত অল্প সময়ে কমনওয়েলথ গেমসের মতো বিশাল একটি ইভেন্টের স্বাগতিক খুঁজে পেতে গলদঘর্ম হচ্ছেন সিজিএফ কর্মকর্তারা। স্বাগতিক হওয়ার প্রস্তাব নিয়ে এরইমধ্যে অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য প্রাদেশিক সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন আয়োজকরা। কিন্তু কেউই এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী রজার কুক তো বলেই ফেলেছেন, কমনওয়েলথ গেমস আয়োজনে তার প্রদেশের অভিজ্ঞতা নেই। এটির আয়োজন নিজেদের নিঃস্ব করে দেওয়ার মতো ব্যয়বহুল।
২০২৬ কমনওয়েলথ গেমসে আয়োজনে নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যকে সেরা বিকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে। কিন্তু গেমস আয়োজনের মতো সক্ষমতা ও বিপুল ক্রীড়া অবকাঠামো সত্ত্বেও রাজ্যটির প্রধানমন্ত্রী ক্রিস মিনস বলেন, ‘কমনওয়েলথ গেমস আয়োজন করতে পারাটা ভাল কিছু হতো। কিন্তু তার চেয়ে জরুরী স্কুল ও হাসপাতাল নির্মাণ ও পরিচালনা। অপরদিকে ২০১৮ সালের স্বাগতিক গোল্ড কোস্ট নগর কর্তৃপক্ষ জানায়, এত অল্প সময়ের মধ্যে কমনওয়েলথ গেমস আয়োজনে এগিয়ে আসার বিষয়টি একটি অসম্ভব চিন্তা।
ধীরে ধীরে কমনওয়েলথ গেমস যুগের যে অবসান ঘটতে যাচ্ছে সেটা বোঝার জন্য একটি পরিসংখ্যানই যথেষ্ট। সবশেষ গত ২০ বছরে মাত্র একবারই গেমসটি যুক্তরাজ্য বা অস্ট্রেলিয়ার বাইরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১০ সালের স্বাগতিক হয়েছিল ভারতের নয়াদিল্লী। যে আসরটির জন্য প্রাথমিকভাবে ২৭০ মিলিয়ন ডলার খরচের পরিকল্পনা থাকলেও ভারত সরকারকে প্রকৃতপক্ষে ব্যয় করতে হয় ৪.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এত বিপুল ব্যয়ের কারণে যুক্তরাজ্যের সাবেক কোনো উপনিবেশই গেমসটি আয়োজনে আগ্রহী নয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।