জুমবাংলা ডেস্ক : চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশব্যাপী জ্বালানি তেল পরিবহন নিয়ে শঙ্কায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। শীতে বোরো মৌসুমে সেচের জন্য ডিজেলের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এ সময়ে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিপণনকারী কোম্পানিগুলোর চ্যালেঞ্জ বেড়েছে। সারাদেশে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি তেল সরবরাহের জন্য বর্তমানে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার গুপ্তখাল এলাকায় প্রধান স্থাপনাসহ ১১টি নৌভিত্তিক ডিপো, সাতটি রেল-হেড ডিপো, দুটি বার্জ ডিপো, একটি গ্যাস ফিল্ড ডিপো এবং তিনটি এভিয়েশন ডিপোসহ বিপিসির মোট ২৪টি ডিপো রয়েছে।
এখানকার প্রায় ৮২ শতাংশ জ্বালানি তেল নৌপথে, ১০ শতাংশ রেলপথে এবং প্রায় ৮ শতাংশ সড়কপথে পরিবহন করা হয়। নৌপথ ও রেলপথ জ্বালানি পরিবহনের জন্য অনেকাংশে নিরাপদ হলেও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় সড়কপথে জ্বালানি পরিবহন অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। জেট ফুয়েলসহ জ্বালানি পরিবহনে পুলিশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট বিপণনকারী কোম্পানিগুলো পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পতেঙ্গার গুপ্তখাল ছাড়াও গোদনাইল, দৌলতপুর, বাঘাবাড়ী, বরিশাল, চাঁদপুর, ঝালকাঠি, ভৈরব, আশুগঞ্জ, সাচনা বাজার, মোংলা ও চিলমারীর ডিপোগুলো নদীকেন্দ্রিক। পার্বতীপুর, রংপুর, রাজশাহীর হরিয়ান, নাটোর, সিলেটের মোগলাবাজার, শ্রীমঙ্গল ও ইপিওএল ডিপো রেল-হেড। নৌপথে ডিপো এলাকায় পরিবহনের পর মূলত ভোক্তা পর্যায়ের স্থাপনায় (ফিলিং স্টেশন, এজেন্ট, বিমানবন্দর ডিপো ইত্যাদি) জ্বালানি পরিবহন করা হয় ট্যাংক-লরির মাধ্যমে।
সড়কপথে দূরপাল্লার ট্যাংক-লরিতে জ্বালানি পরিবহন ছাড়াও ডিপো থেকে স্বল্প দূরত্বের স্থাপনায় জ্বালানি পরিবহনও সাম্প্রতিক সময়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান। সূত্র জানায়, বিপিসি ও বিভিন্ন কোম্পানির (পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল) অধীনে ফিলিং স্টেশন আছে ২ হাজার ৭০০টি, এজেন্ট বা ডিস্ট্রিবিউটর ২ হাজার ৯০০ এবং প্যাকড পয়েন্ট ডিলার আছে ৭৩৬টি। এ ছাড়া এলপিজি ডিলার রয়েছে প্রায় ৩ হাজার এবং মেরিন ডিলার প্রায় ১১০টি।
এসব ডিলারের মাধ্যমে প্রতিদিন বিভিন্ন মাধ্যমে ডিপোগুলো থেকে জ্বালানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এসব ডিপোর মজুদ সক্ষমতা কম থাকায় একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর জ্বালানি পরিবহন করা হয়। কিন্তু যানবাহনে নাশকতার ঘটনায় দেশব্যাপী সুষ্ঠুভাবে জ্বালানি পরিবহন বিপিসি ও এর বিতরণকারী কোম্পানিগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে ওঠায় হরতাল-অবরোধের কারণে জ্বালানি পরিবহনে বাধা আসতে পারে বলে আশঙ্কা জানিয়ে গত ৩০ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে বিপিসি।
সংস্থাটির চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে সড়কপথে বিমানের জ্বালানিসহ সব ধরনের পেট্রোলিয়াম পরিবাহী ট্যাংকলরি নির্বিঘ্নে চলাচলে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিতে অনুরোধ করা হয়। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব ইসরাত জাহান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর পেট্রোলিয়াম পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রদানের নির্দেশনা দেয়া হয়।
সূত্র আরও জানায়, দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে সড়কপথে জ্বালানি পরিবহন অব্যাহত রাখতে অনেক আগেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিপিসির পাশাপাশি বিপণনকারী কোম্পানিগুলোও আলাদাভাবে পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছে সড়কপথে জ্বালানি পরিবহনে নিরাপত্তা চেয়ে চিঠি দিয়েছে। পুলিশ প্রশাসন সার্বিকভাবে সহায়তা করছে। তবে হরতাল-অবরোধ যেহেতু চলমান আছে সেজন্য কিছুটা আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে বিপিসিসহ বিপণনকারী কোম্পানিগুলোকে। এ কারণে হরতাল ও অবরোধহীন দিনগুলোয় জ্বালানি পরিবহনের ওপর জোর দেয়া হয়েছে।
এদিকে দেশে এভিয়েশন খাতের জ্বালানি (জেট-এ-১) সরবরাহ করে একমাত্র পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড। এ প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থিত কুর্মিটোলায় পদ্মা অয়েলের ডিপো থেকে জেট-এ-১ ফুয়েল সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে পাঠানোর জন্য নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছে আবেদন করেছে।
গত ২০ নভেম্বর দেয়া ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কুর্মিটোলায় পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ডিপো থেকে প্রতিদিন ১০-১২টি ট্যাংকলরিতে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জেট-এ-১ পরিবহন করা হয়। রাষ্ট্রীয় সেবা নিশ্চিতকল্পে বিমানের জ্বালানি তেল নিরবচ্ছিন্নভাবে সরবরাহে পরিবহন বন্ধ রাখার কোনো সুযোগ নেই। সাম্প্রতিক সময়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কতিপয় রাজনৈতিক দলের হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচির কারণে বিশেষত জেট ফুয়েল-এ-১ পরিবহন সংকটের আশঙ্কা করছেন পদ্মা অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড এভিয়েশন খাতে ৪ লাখ ৭১ হাজার ৫৩৫ টন জ্বালানি সরবরাহ করেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে জেট-এ-১ সরবরাহ করেছে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৯৭৬ টন। জেট ফুয়েল পরিবহনের ক্ষেত্রে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলায় সড়কপথে জ্বালানি পরিবহন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া সেচ মৌসুমে (নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত) সারাদেশে ১৪ থেকে ১৫ লাখ টন ডিজেলের চাহিদা থাকে।
রাজনৈতিক অস্থিরতায় কৃষিকাজে সেচের জন্য বিপুল এ জ্বালানি পরিবহন বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় বিশেষ নিরাপত্তা চাইছে বিপণনকারী কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড। অন্যদিকে এ বিষয়ে বিপিসির বিপণন বিভাগের পরিচালক ও যুগ্ম সচিব অনুপম বড়ুয়া জানান, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা যখন শুরু হয় তখনই বিপিসির জ্বালানি পরিবহনে যাতে কোনো অসুবিধা তৈরি না হয় সেজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিরাপত্তা চেয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এছাড়া জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। কোম্পানিগুলো পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ করছে। মূলত প্রতিদিন জেট ফুয়েল পরিবহন করতে হচ্ছে। সেখানে পাঁচ-ছয়টি ট্যাংক-লরিকে একসঙ্গে এসকর্ট সার্ভিস দিয়ে পুলিশ নিরাপদে দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দর বা এভিয়েশন ডিপোতে পৌঁছে দিচ্ছে। অন্যান্য জ্বালানি পরিবহনেও পুলিশ সহায়তা করছে। এখন পর্যন্ত কোনো সংকট তৈরি হয়নি। সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেও সারা দেশে জ্বালানির সংকট হবে না। আর সেজন্য সরকারি সংস্থাগুলো একযোগে কাজ করছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।