জুমবাংলা ডেস্ক : নিয়ন্ত্রণহীন ভোগ্যপণ্যের বাজার। চাহিদা বিবেচনায় বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন। রমজান মাসের পণ্যের মধ্যে চিনি, ছোলা, খেজুর, আপেলের দাম কয়েক দিন ধরেই বাড়ছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নিত্যপণ্যের সরবরাহে ঘাটতি নেই। দাম স্থিতিশীল থাকবে। কেউ বাজার অস্থির করলেই ব্যবস্থা। তার পরও সপ্তাহের ব্যবধানে আমদানি করা পণ্যের সঙ্গে দেশে উৎপাদিত বেগুন, শসা, লেবু ও কাঁচামরিচের দাম বেড়ে গেছে। মাংসের দামও ঠেকানো যায়নি। কেজিতে ২০-৫০ টাকা বেড়ে গেছে। ভরা মৌসুমেও কমেনি পেঁয়াজের দাম।
নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি প্রথম রমজান। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা এ রোজা ঘিরে অস্থির করে তুলছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে। এরই মধ্যে দেশের সার্বিক অর্থনীতি পরিস্থিতি পর্যালোচনায় অর্থমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। সেখানেও আলোচনায় উঠে আসে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে মঙ্গলবার থেকে বাংলাদেশে শুরু হচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান। এর আগেই বাজারে সব পণ্যের দাম বেড়েছে। প্রতি বছরের মতো লেবু, শসা, বেগুনের দাম বেড়ে গেছে।খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম বাড়ার কারণ জানি না। পাইকারিতে বেশি দাম। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন মোকামে বেশি। করার কিছু নেই। এভাবে ভোক্তাদের পকেট থেকে বাড়তি টাকা বের হলেও কেউ দায় নিচ্ছে না। সরেজমিনে বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও সংশ্লিষ্ট বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে।
রমজান মাসে অভিজাত শ্রেণি থেকে শুরু করে নিম্নবিত্তের মানুষও ইফতারি করার জন্য খেজুর, বেগুনি, শরবত, ছোলার ব্যবস্থা করেন। এ জন্য প্রতিবছর রমজানে এসব পণ্যের চাহিদাও বেড়ে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। কয়েক মাস ধরেই বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। সরকার কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করার পরও ঠেকানো যাচ্ছে না। শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারাও দফায় দফায় মিটিং করে বলেছেন, রমজানে বাড়ানো যাবে না দাম। তার পরও ভোক্তাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে রমজানের পণ্য। সরকার তেল আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেওয়ায় সপ্তাহের ব্যবধানে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ টাকা কমেছে। তবে অন্য সব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে।
ইফতারের অন্যতম একটি খাবার হচ্ছে খেজুর। সবাই এটি কিনে থাকেন। এর দামের ব্যাপারে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর টাউনহল বাজারের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল স্টোরের শফিক বলেন, দাম অনেক বেশি। আজোয়া, মরিয়ম, তিউনিশিয়াসহ সব খেজুরের দাম বেড়েই যাচ্ছে। গত সপ্তাহে তিউনিশিয়া খেজুর ছিল ৫৫০-৬৫০ টাকা কেজি। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০০-২০০ টাকা বেড়ে ৬৫০-৮৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। অন্য খেজুরের দামও বেড়েছে এবং তা কেজিতে ২ হাজার ১০০ টাকা পর্যন্ত। বাড়তি দামের ব্যাপারে খুচরা বিক্রেতারা জানান, মোকামে বাড়তি। অন্য বাজারের খুচরা বিক্রেতারাও বলছেন, মোকামে বাড়ছে দাম। তাই আমাদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
ফলের মোকাম হচ্ছে বাদামতলী বাজার। এই ফল ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুট ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বাজেটে এটিকে বিলাসী পণ্য বিবেচনা করে ১৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। অন্য পণ্যের সঙ্গে এর শুল্ক কমানোর পর ৩০ শতাংশ কমেছে। এ জন্য বাড়ছে দাম। বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়ার পরও শুল্ক কমিয়ে আগের মতো আনেনি। এ জন্য বাড়ছে দাম। অনেকের পাতে এবার খেজুর জুটবে না। এটি খুবই দুঃখজনক। সরকার শুল্ক না কমালে ভোক্তারাও কম দামে খেজুর খেতে পারবেন না।
রমজান মাস ঘনিয়ে আসায় ছোলার দামও বাড়ছে। গত সপ্তাহে ১০০-১০৫ টাকা কেজি বিক্রি করা হলেও গতকাল ১১০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে বলে কৃষি মার্কেট, কারওয়ান বাজারসহ অন্য বাজারের বিক্রেতারা জানান। তারা বলছেন চাহিদা বাড়ছে, এ জন্য দামও বাড়ছে। কম দামে কেনা হলে কম দামে বিক্রি করতাম।
সরকার সয়াবিন তেলে শুল্ক কমায় সপ্তাহের ব্যবধানে লিটারে ১০ টাকা কমেছে। আগে ১৭৩ টাকা লিটার বিক্রি হলেও গতকাল বিভিন্ন বাজারে ১৬৩ টাকা লিটারে বিক্রি হচ্ছে। আগে পাঁচ লিটার ৮০০-৮১০ টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে ৭৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দামের ব্যাপারে কারওয়ান বাজারের ইউসুফ স্টোরের ইউসুফ ও টাউনহল বাজারের দিপক স্টোরের দিপক বলেন, তেলের দাম লিটারে ১০ টাকা কমেছে। প্রতি লিটার ১৬৩ টাকা ও পাঁচ লিটার ৭৯০ টাকা।
এখন পেঁয়াজের ভরা মৌসুম শুরু হয়েছে। তার পরও কমছে না দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতের পেঁয়াজ না আসায় কমছে না দাম। এ ব্যাপারে শ্যামবাজার কৃষিপণ্য আড়ত মালিক সমিতির সহসভাপতি মো. মাজেদ জানান, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় ভারত থেকে আসছে পেঁয়াজ। এই ঘোষণায় কৃষকরা খেত থেকে পেঁয়াজ তোলায় দাম কিছুটা কমে। গত সপ্তাহে শ্যামবাজারেও কমে। সেই পেঁয়াজ বিভিন্ন খুচরা বাজারে ১১০-১২০ টাকা কেজি ছিল। কিন্তু এখনো আসেনি। এ জন্য কমছে না দাম। গতকালও আড়তে ৭০-৮২ টাকায় কেজি বিক্রি হয়েছে। কিন্তু খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কমেনি।
টাউনহল বাজারের খুচরা বিক্রেতা অলি ইসলাম বলেন, পাইকারিতে দাম বেশি। বেশি দরে কেনা। তাই ১১০-১২০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। অন্য বাজারের বিক্রেতারাও জানান, ভারতের পেঁয়াজ না এলে কমবে না দাম। ১১০-১২০ টাকায় কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। আগের মতোই আদা ২২০-২৮০ টাকা কেজি, দেশি রসুন ১৭০ টাকা ও আমদানি করা রসুন ২২০-২৪০ টাকা কেজি।
রমজান মাস ঘনিয়ে আসায় বেগুনের দামও বাড়তে শুরু করেছে। গত সপ্তাহে বেগুন ৭০-১০০ টাকা কেজি থাকলেও আজ বিভিন্ন বাজারে ৮০-১২০ টাকা কেজি হয়ে গেছে। এত দাম কেন জানতে চাইলে সবজি বিক্রেতা কালু বলেন, সামনে রমজান আসছে। চাহিদা বাড়ছে। এ জন্য দাম বেশি, ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজি।
রমজান মাসে শসার চাহিদাও বেড়ে যায়। গত সপ্তাহে কেজি ৭০-১০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। গতকাল তা ৮০-১২০ টাকা হয়ে গেছে। ক্ষীরার কেজিতেও ১০ টাকা বেড়ে গেছে। আগের ৫০-৬০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ৬০-৭০ টাকা কেজি।
রমজান মাসে মরিচের চাহিদাও বেড়ে যায়। এ জন্য মসলাপণ্যটির দামও বাড়তে শুরু করেছে। গত সপ্তাহের ১০০-১২০ টাকার মরিচ এখন ১৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান। লেবুর দামও বেড়েছে। আগে ৩০-৫০ টাকা হালি বিক্রি হলেও গতকাল ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। কারওয়ান বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা জসিম ও টাউনহল বাজারের কালু বেপারি বলেন, সামনে রমজান মাস। সব জিনিসের দাম বাড়ছে। তাই বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। সামনে আরও বাড়তে পারে।
ইফতারে লেবুর চাহিদা অনেক বেশি থাকে। খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা বড় আকারের এক হালি লেবুর দর হাঁকছেন ৮০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি পিস লেবু ২০ টাকা। আকারে ছোট লেবুর পিস কেনা যাচ্ছে ১২ থেকে ১৫ টাকায়।
রমজান মাসে মাংসের চাহিদাও বাড়ে। তাই সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগি ও গরুর মাংসের দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেড়ে গেছে। গত সপ্তাহে কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে পোলট্রি মুরগির কেজি ২০০-২২০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল ২৩০ টাকা ও ৩১০-৩২০ টাকার পাকিস্তানি কক ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে টাউনহল বাজারের চিটাগং পোলট্রি হাউসের তাহের জানান। অন্য খুচরা বিক্রেতারাও জানান, রমজানের কারণে বাড়ছে দাম। গত সপ্তাহে ৭৩০-৭৫০ টাকায় গরুর মাংসের কেজি বিক্রি হয়েছে। কিন্তু সাত দিনের ব্যবধানে ৫০-৭০ টাকা বেড়ে ৮০০ টাকা হয়ে গেছে। টাউনহল বাজারের খুরশিদ মাংস বিতানের খুরশিদসহ অন্য বিক্রেতারা বলেন, আগে কম থাকলেও গতকাল ৮০০ টাকা উঠে গেছে। আর বাড়বে না। তবে শবে কদরে বাড়তে পারে। কারণ তখন চাহিদা বেড়ে যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।