জুমবাংলা ডেস্ক : যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুরে কপির চারা উৎপাদন ক্রমশ বাড়ছে। অন্যদের সফলতা দেখে ভাগ্য বদলের আশায় নতুন নতুন চাষিরা কপির চারা উৎপাদনে ঝুঁকছেন। ফলে গত মৌসুমে ৪ বিঘা জমির চারার উৎপাদন এবার বেড়ে ৭শ’ বিঘায় দাঁড়িয়েছে। চাষীরা বলছেন যার মূল্য ২০ কোটি টাকার বেশি হবে।
ভরা মৌসুমে আর্থিকভাবে লাভবান হতে চাষিরা ক্ষেতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কপির চারাকে ঘিরে দেখছেন সমৃদ্ধির স্বপ্ন। এখানকার চারার সুনাম থাকার কারণে তা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। বীজ অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা তৈরি করে বিক্রি করে থাকেন।
স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আষাঢ় মাস থেকে কার্তিক মাসের শেষ সময় পর্যন্ত বাঁধাকপি ও ফুলকপির চারা উৎপাদন চলবে। এই সময়ের মধ্যেই চারা বিক্রি করা হয়। বেড তৈরি করে একই জমিতে তিন বার চারা উৎপাদন করতে পারেন চাষিরা। ইতিমধ্যে নিজেদের তৈরি করা কপির চারা বিক্রি করে অর্ধশত চাষি লাখপতি হয়েছেন।
আব্দুল পুরড় গ্রামের চাষি আজিজুর রহমান জানান, আষাঢ়ের শুরুতে জমিতে বেড দিয়ে বীজতলা প্রস্তুত করা হয়। তারপর বপন করা হয় বাঁধাকপি ও ফুলকপির বীজ। বীজ থেকে চারা গজাতে এক মাস সময় লাগে। এই চারা চাষিদের কাছে বিক্রি করা হয়। তিনি ৮ বছর ধরে কপির চারা উৎপাদন করছেন।
আজিজর রহমান আরও জানান, এবারও তিনি ১২ কাটা জমিতে মোট ৮০ টি বেড তৈরি করে বাঁধা কপির বীজ বপন করেছেন। প্রতি বেডে চারা উৎপাদনে খরচ হয় আনুমানিক ১ হাজার টাকা। কিন্তু বেড প্রতি আড়াই হাজার টাকার বেশি চারা বিক্রি করেছেন। তিনবার চারা উৎপাদনে লক্ষাধিক টাকা লাভের সম্ভাবনার কথা জানান তিনি।
এবার ফুলকপির ভালো মানের চারা (সনোবক্স) ১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা ৬০ পয়সায় বিক্রি করেছেন। একটু দুর্বল চারা বিক্রি হচ্ছে ১ টাকা পিস। আর বাঁধাকপির প্রতিটি চারা (গ্রিন-৬০) ৫০ পয়সা থেকে ৬৫ পয়সা বিক্রি হচ্ছে বলে জানান চাষি আজিজুর রহমান।
এবারের মৌসুমে আব্দুলপুরে ৭শ’ বিঘা জমিতে কপির চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। যা গত মৌসুমের থেকে ৩শ’ বিঘা জমি বেশি। বর্তমানে গ্রামটি কপি পল্লী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। চারা উৎপাদন লাভজনক হওয়ায় আবাদকারীদের সংখ্যাও বেড়েছে। বর্তমানে ২শ’ ২০ জন চাষি চারা উৎপাদন করছে। নিজস্ব জমি না থাকলেও জমি লিজ নিয়ে চাষে ঝুঁকেছেন অনেকেই।
আরেক চাষি ওসমান গনি জানান, তিনি এক জমিতে চারা উৎপাদন করেন। এখানকার কপির চারার মান ভালো হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সুনাম রয়েছে। ফলে চারা বেশি দামেও বিক্রি করতে পারেন তারা। তিনি আরো জানান, যশোর ছাড়াও খুলনা, সাতক্ষীরা, নড়াইল, মাগুরা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে চাষিরা এসে কপির চারা কিনে নিয়ে যান। কপির চারা উৎপাদন করে তিনি লাখ লাখ টাকা লাভবান হয়েছেন।
আইয়ুব আলী জানান, গতবারের মতো এবারো ১ বিঘা জমিতে বীজ বোপনের পর চারা উৎপাদন করেছিলেন। সাড়ে ৪ লাখ টাকার চারা বিক্রি করেছেন। সব মিলিয়ে তিনি মোটা অংকের টাকা লাভ করতে পারবেন বলে আশাবাদী। এক প্রশ্নের উত্তরে জানান, এক বিঘা জমিতে বীজ রোপন করে চারা উৎপাদন করতে ১ লাখ টাকা খরচ হয়। আরো কয়েকজন চাষি জানান, এবারের মৌসুমে তারা ২০ কোটির বেশি টাকা কপির চারা বিক্রি করেছেন। আগামী মৌসুমে আরও বেশি টাকার চারা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদী।
চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা জানান, আব্দুলপুরে বীজ থেকে কপির চারা উৎপাদন অন্য এলাকার চাষিদের জন্য আদর্শ দৃষ্টান্ত হতে পারে। এখানকার চারার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। যে কারণে চাষিদের যে কোন সমস্যার সমাধানে নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করা হয়। কপির চারা উৎপাদন করে অনেক চাষি নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পেরেছেন। ভরা মৌসুমে নারী পুরুষ মিলে জমিতে ব্যস্ত সময় পার করেন।
যশোর কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হক জানান, চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুরে বাণিজ্যিকভাবে ফুল কপি ও বাঁধা কপির চারা উৎপাদন হয়। এখানকার উৎপাদিন চারা কিনে সবজির চাষ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাষিরা। কপির চারা পল্লীতে বাড়তি খেয়াল রাখার জন্য স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া আছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।