জুমবাংলা ডেস্ক : চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা থেকে কুরবানি পশুর প্রায় আড়াই লাখ টাকার চামড়া কিনে নগরীর আতুরার ডিপো এলাকায় নিয়ে এসেছিলেন মোহাম্মদ সবুর নামে এক মৌসুমি ব্যবসায়ী। আড়তদাররা তার কাছে সেই চামড়া কিনতে চেয়েছেন মাত্র ২০ হাজার টাকায়। এই দুঃখে চামড়া বিক্রি না করে তিনি সব চামড়া রাস্তায় ফেলে চলে গেছেন।
কেবল সবুর নন, জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে সারা দিন চামড়া সংগ্রহ করে মধ্যরাতে গাড়ি ভরে অসংখ্য মৌসুমী ব্যবসায়ী এসেছিলেন আতুরার ডিপো এলাকায়। দাম না পেয়ে তাদের প্রায় অনেকে এসব চামড়া রাস্তায় ফেলে চলে গেছেন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের হিসাব মতে, প্রায় এক লাখ চামড়া পরিত্যক্ত আবর্জনা হিসেবে সরিয়ে তারা ডাম্পিং করেছেন। চামড়ার এমন দরপতনে চোখের পানি ফেলে অসহায়ের মতো ফিরে গেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরীর আতুরার ডিপো এলাকায় দুই শতাধিক আড়ত রয়েছে। এ সব আড়তে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা হয়। উপজেলা থেকে সংগ্রহ করে আনা চামড়া নিয়ে আড়তদার সংগ্রহ করে থাকেন।
এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরু ও মহিষের কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। সেই হিসাবে প্রতিটি পশুর চামড়ার দাম গড়ে ১ হাজার ১৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
সে অনুযায়ী মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অনেকে গ্রাম-গঞ্জ ও অলি-গলি থেকে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় চামড়া কিনেছিলেন। আবার চামড়া কিনলেও সিটি করপোরেশনের বিধিনিষিধের কারণে দিনের আলোতে সে সব চামড়া নগরীতে প্রবেশ করতে পারেনি। রাত ১০টার পর চামড়া নিয়ে আসতে হয়েছে শহরে। লবণহীন কাঁচা চামড়াগুলো তাই নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতেও পড়ে।
নুরুল আলম নামে এক মৌসুমি ব্যবসায়ী বলেন, নগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে তিনি প্রায় এক হাজার চামড়া সংগ্রহ করেছেন। প্রতিটি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে। ট্রাকে করে এ সব চামড়া নিয়ে এসে মুরাদপুর এলাকায় শনিবার গভীর রাত থেকে রোববার সারাদিন বসেছিলেন আড়তদার তথা ক্রেতার আশায়।
কিছু আড়তদার এসেছিলেন। কিন্তু তারা ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকায় একেকটি চামড়া কিনতে চান। লাখ টাকার কম দামের পশুর চামড়া ফ্রিতেই নিতে চান। এই অবস্থায় পচে যাওয়ার ভয়ে শেষ পর্যন্ত ২০০ থেকে সর্বোচ্চ আড়াইশ টাকা দামে সব চামড়া বিক্রি করে দিয়েছেন। এতে চামড়া পরিবহণে যে খরচ হয়েছে ওই খরচও উঠেনি বলে জানান এই ব্যবসায়ী।
তিনি বলেন, সরকারের সঠিক পরিকল্পনার অভাবে এবারও মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা পথে বসেছেন। সর্বোপরি গরিবের হক নষ্ট হয়েছে। ২০১৯ সালের মতো এ বছরও চামড়ার দরপতন ও রাস্তায় ফেলে যাওয়ার পুনরাবৃত্তি ঘটলো।
তিনি আরও বলেন, অনেক ব্যবসায়ী ক্রেতা ও যথাযথ দাম না পেয়ে ক্ষোভে-অপমানে সড়কে চামড়া রেখে চোখের পানি ফেলে বাজার থেকে ফিরে গেছেন। কেবল নগরীর আতুরার ডিপো এলাকায় নয় আগ্রাবাদ চৌমুহনী, দেওয়ানহাট, বহদ্দারহাট, চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় কুরবানি পশুর চামড়া ফেলে চলে যান মৌসুমি সংগ্রহকারীরা।
চামড়ার আড়তদার সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মুসলিম বলেন, সরকার লবণযুক্ত চামড়ার দর নির্ধারণ করে দিয়েছিল। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা সেই দর অনুযায়ী লবণ ছাড়া কাঁচা চামড়া কেনেন। দাম মেনে তাদের কাছ থেকে চামড়া কিনলে আড়তদারদের লোকসান হত।
এছাড়া মৌসুমি সংগ্রহকারীরা বাজার না বুঝে বেশি দামে চামড়া কিনেছেন, আড়তে আনার পরও দর ধরে রেখেছিলেন, এ জন্য শেষ পর্যন্ত অনেকে চামড়া বিক্রি করতে পারেননি। যার ফলে অনেক চামড়া নষ্ট হয়েছে।
তিনি বলেন, চামড়া সংগ্রহের টার্গেট ছিল সাড়ে চার লাখ। তাদের টার্গেট পূরণ হয়েছে। এদিকে সুন্নি মতাদর্শে বিশ্বাসী আলোচিত সংগঠন গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ ২০২২ সাল থেকে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে।
ই সংগঠনটিও এবার লাখের কাছাকাছি চামড়া সংগ্রহ করেছে বলে জানা গেছে। তবে মাদ্রাসা ও এতিমখানায় সহায়তার উদ্দেশে এই সংগঠনকে বিনামূল্যে কুরবানিদাতারা এসব চামড়া দিয়ে দেন। পরবর্তীতে প্রসেসিং করে তারা এসব চামড়া ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করে সেই টাকা মাদ্রাসা, এতিমখানা ও দ্বিনের খেদমতে ব্যয় করবেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।