আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল (ইউএনএইচআরসি) থেকে রাশিয়াকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ সংলগ্ন বুচা শহরে গণহত্যার জেরে ইউএনএইচআরসি’র সদস্যপদ খুইয়েছে রাশিয়া। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় সদস্যরাষ্ট্রগুলোর ভোটের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। খবর রয়টার্স’র।
সাধারণ পরিষদের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে রাশিয়া। তবে জাতিসংঘের রুশ উপপ্রতিনিধি গেন্নাদি কুজমিন এই ভোট প্রক্রিয়াাকে ‘অবৈধ ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপ’ বলে অভিযোগ করেছেন।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স’র এক প্রতিবেদনে এ সম্পর্কে বলা হয়, ‘ইউক্রেনে গণহত্যা ইস্যুতে ইউএনএইচআরসি থেকে রাশিয়ার সদস্যপদ বাতিল করা উচিত কিনা’— প্রশ্নে সদস্যরাষ্ট্রসমূহের মধ্যে ভোটের আয়োজন করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। ১৯৩ সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে ৯৩টি রাষ্ট্র রাশিয়ার সদস্যপদ বাতিলের পক্ষে ভোট দেয়, বিপক্ষে ভোট দেয় ২৪টি রাষ্ট্র ও ভোটদান থেকে বিরত থকে ৫৮টি রাষ্ট্র।
মানবাধিকার কাউন্সিলে রাশিয়ার সদস্যপদ বাতিলের জন্য প্রস্তাবের পক্ষে সাধারণ পরিষদের দুই তৃতীয়াংশ সদস্যরাষ্ট্রের ভোটের প্রয়োজন ছিল। ৯৩টি সদস্যরাষ্ট্র প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়ায় তা অর্জিত হয়। যে ৫৮টি রাষ্ট্র ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল, তাদেরকে অনুপস্থিত হিসেবে ধরা হয়।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের সদর দপ্তর সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায়। ৪৭ সদস্য বিশিষ্ট এই কাউন্সিলের সদস্যপদ প্রতি বছরই আবর্তিত হয়, এবং সেই সদস্যপদের মেয়াদ থাকে তিন বছর। বর্তমান মেয়াদে দ্বিতীয় বছরে ছিল রাশিয়া।
মানবাধিকার কাউন্সিল কোনো দেশকে তাদের সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য করতে পারে না। তবে তাদের সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বার্তা বলে বিবেচিত হয়। এছাড়া, তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তদন্তের অনুমোদন দিতে পারে এই কাউন্সিল।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে বাদ পড়ার ঘটনা খুব একটা ঘটে না। ২০১১ সালে বিরোধীদের ওপর সরকারি বাহিনীর সহিংসতার কারণে লিবিয়াকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবারের ভোট রাশিয়ার বিপক্ষে গেলেও এদিন পুরাতন মিত্রকে পাশে পেয়েছেন পুতিন। ইউক্রেইন যুদ্ধের জেরে রাশিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘে উঠা আগের দুইটি রেজ্যুলেশনে চীন ভোট দান থেকে বিরত থাকলেও এদিন প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয় বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
চীনের জাতিসংঘ প্রতিনিধি ঝ্যাং জুন এ সম্পর্কে বলেন, ‘এ ধরনের ত্বরিত পদক্ষেপ খুবই হটকারি। কারণ এর ফলে সদস্যরাষ্ট্রসমূহ যে কোনো একটি পদক্ষেপ বেছে নিতে বাধ্য হয়, যার পরিণামে বিভিন্ন দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও উদ্বেগ আরও বাড়ে। এটা অনেকটা জ্বলন্ত আগুনে জ্বালানি দেওয়ার মতো একটি ব্যাপার।’
এদিকে, বৃহস্পতিবারের ভোটে যেসব দেশ রাশিয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে, সেসব দেশকে রাশিয়া ‘বন্ধু নয়’ দেশের তালিকায় ফেলেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
গত ০২ এপ্রিল কিয়েভের আশপাশের এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয় রাশিয়া। রুশ বাহিনী সরে যাওয়ার পর বুচা শহরে ৪১০টি মৃতদেহের সন্ধান পায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ছবিতে দেখা যায়, বুচার বিভিন্ন সড়কে সারি সারি মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
বুচা শহরের মেয়র বলেছেন, চেচেন যোদ্ধারা এলাকাটি নিয়ন্ত্রণ করার সময় রুশ বাহিনীর হাতে তিন শতাধিক বাসিন্দা নিহত হয়েছেন।
তবে বুচায় বেসামরিক লোকদের হত্যার অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে রাশিয়া। মস্কো বলেছে, সেখানকার কোনো বেসামরিক মানুষ রুশ বাহিনীর সহিংসতার শিকার হয়নি। এ বিষয়ে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিও জানিয়েছে দেশটি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।