আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে গেছে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। ফেসবুক ছাড়া যেন আমরা এখন আর আমাদের জীবন কল্পনাই করতে পারি না।
কিন্তু আপনি জানেন ? বিশ্বে এমন কয়েকটি দেশ আছে যেখানে ফেসবুক চিরস্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ।
আসুন জেনে নিই সেই দেশগুলো সম্পর্কে-
চীন
চীন নিজ দেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার সীমিত রেখেছে চীনা সরকারও। দেশটিতে ‘দ্য গ্রেট ফায়ারওয়াল অব চায়না’ নামে ইন্টারনেটের ওপর সেন্সরশিপ এবং নজরদারি বজায় রাখা হয়েছে। ২০০৯ সালের জুলাইয়ে ‘উরুমকি দাঙ্গা’র পর চীনে প্রথম ফেসবুক নিষিদ্ধ করা হয়। চীন সরকারের ধারণা, ফেসবুকের মাধ্যমেই দাঙ্গা ছড়ানোর জন্য মানুষ যোগাযোগ এবং পরিকল্পনা করতো।
উত্তর কোরিয়া
পুরো বিশ্ববাসীর কৌতূহলের শীর্ষে রয়েছে এশিয়ার দেশ উত্তর কোরিয়া। দেশটির ক্ষমতাসীন দলের নেতা কিম জং উনের কারণেই সবার এই কৌতূহল। কিম জং উন তার দেশে সব সময়ই ইন্টারনেট ব্যবহার সীমিত রেখেছেন। বিভিন্ন সময় আরোপ করেছেন নিষেধাজ্ঞা। ২০১৬ সালের এপ্রিলে দেশটি ফেসবুক বন্ধ করা শুরু করে। ধারণা করা হয়, অনলাইনে তথ্য বিস্তার এবং নিজেদের ক্ষমতা হারানোর ভয়ে কিম জং উন এ উদ্যোগ নিয়েছেন।
উত্তর কোরিয়ার নাগরিকদের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা সীমিত হলেও দেশটিতে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকরা থ্রিজি ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহারের সুযোগ পান। এছাড়া পিয়ংইয়ং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির কিছু শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা তাদের বিশেষায়িত ল্যাবে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পান।
ওই ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে ইন্টারনেটের ওপর আরো কড়াকড়ি আরোপ করে চীনা সরকার। ২০১৩ সালে সীমিত আকারে সেই নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছিল। যদিও তা সাংহাইয়ের মুক্তবাণিজ্য এলাকার মাত্র ১৭ বর্গমাইলের মধ্যে।
বর্তমানে চীনে স্বাধীনভাবে কেউ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে না। দেশটির জনগণের প্রতিটি কার্যক্রমের উপর সরকারের নজরদারি রয়েছে। চীনের কমিউনিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে যায়, এমন সব ওয়েবসাইট চীনে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। আর তার মধ্যে অন্যতম ফেসবুক।
তবে বিদেশি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট বন্ধ থাকলেও উইবো, রেনরেন, উইচ্যাটের মতো চীনের নিজস্ব সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট এবং অ্যাপগুলো দেশটিতে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে ফেসবুক বা টুইটারের অভাব এখন আর তেমন বোধ করেন না চীনা নাগরিকরা।
ইরান
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বেশ পুরনো। দুই দেশের এই লড়াই কখনও কখনও পরিণত হয়েছে সাইবার যুদ্ধে। আর তাই মার্কিনিদের সোশ্যাল সাইট ফেসবুক নিষিদ্ধ ইরানে। তবে সাধারণ জনগণের জন্য ফেসবুক নিষিদ্ধ হলেও দেশটির রাজনৈতিক নেতারা ফেসবুক এবং টুইটার ব্যবহার করেন।
২০০৯ সালে ইরানে ফেসবুকসহ বেশ কিছু স্যোশাল মিডিয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। নির্বাচনের পর সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগঠিত হতে পারে এমন শঙ্কায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দেশটির সরকার।
তুর্কমেনিস্তান
প্রাক্তন সোভিয়েত মধ্য এশিয়ার রাষ্ট্র তুর্কমেনিস্তানে ফেসবুক নিষিদ্ধ। ফেসবুক ব্লক করার পাশাপাশি, তুর্কমেনিস্তান হোম ইন্টারনেট সংযোগের জন্য সাইন আপ করার সময় কোরআনের শপথ নিতে বলে যে তারা ভিপিএন অ্যাক্সেস করবে না। শিক্ষার্থীদের নিষিদ্ধ সাইটগুলোতে অ্যাক্সেস করার জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে বলা হয়।
কিউবা
কিউবায় আনুষ্ঠানিকভাবে ফেসবুক নিষিদ্ধ নয় কিন্তু এটি অ্যাক্সেস করা খুব কঠিন। শুধু রাজনীতিবিদ, কিছু সাংবাদিক এবং মেডিকেল স্টুডেন্টরা তাদের বাড়ি থেকে আইনত ওয়েব অ্যাক্সেস করতে পারেন। অন্য সবার জন্য অনলাইন জগতের সঙ্গে আইনিভাবে সংযোগ করার একমাত্র উপায় হল ইন্টারনেট ক্যাফে। কিউবার গড় আয় ২০ মার্কিন ডলার। আর ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করতে প্রতি ঘন্টায় ৬ মার্কিন ডলার থেকে ১০ মার্কিন ডলারের খরচ হয়। ফলে এত খরচ দিয়ে বেশিরভাগ মানুষের পক্ষেই ইন্টারনেট ব্যবহার করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। মূলত ইন্টারনেট খরচ তুলনামূলক অনেক বেশি হওয়ায় সেদেশে ব্যবহারকারী কম।
সূত্র: টাইম ম্যাগাজিন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।