জুমবাংলা ডেস্ক : বাজারে গরুর মাংসের দাম কোনোভাবেই ৬৫০ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়- মূল্যস্ফীতির চাপে পড়া বাজারে এমন যুক্তিই তুলে ধরছেন বিশেষজ্ঞরা। আর বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের হিসাব, ব্রাহমার মতো উন্নত জাতের গরু পালনের সুযোগ উন্মুক্ত হলে মাংসের দাম কমবে ২০ শতাংশ।
উচ্চমূল্যের কারণে ধীরে ধীরে ভোক্তার খাবার তালিকা থেকে বাদ পড়ছে গরুর মাংস। বাজারে এ মাংসের দাম নিয়ে হরহামেশাই ক্রেতা-বিক্রেতারা ক্ষুদ্ধ হোন একে অপরের প্রতি। তবে গরুর মাংসের দাম কমবে কি-না, কিংবা কিভাবে এ বাজারকে স্থিতিশীল করা যায় তা নিয়ে অধিকাংশ বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, নজর দিতে হবে উন্নত জাতের গরু পালনে।
কামাল নামের একজন ক্রেতা জানান, গরুর মাংস মনে হয় এখন আর মধ্যবিত্তদের জন্য না। এখন মাসে একদিন কিনে নিয়ে যেতেই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
তবে গরুর মাংসের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে দায় নিতে নারাজ বেপারীরা। এ ব্যাপারে ফারুক নামের একজন বেপারী বলেন, গরুর মাংস কিনতেই এখন যে দাম পড়ে যায়, তাতে খুব বেশি লাভ থাকে না। তারপরও ক্রেতাদের দাবি- গরুর মাংসের দাম বিক্রেতারা বেশি রাখে।
অন্যদিকে আব্দুল লতিফ নামের একজন গৃহস্থ খামারি বলেন, গরু লালন-পালন করে এখন আর তেমন লাভ নাই। গরুর খাবারের দাম থেকে শুরু করে সব কিছুর দাম বাড়তি। গরু পালতে গিয়ে অনেক খামারি নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। এর লালনে পালনে যে খরচ, সেই তুলনায় বিক্রিতে লাভ খুবই কম। এমনকি গরুর দুধের দামও এখন তুলনামূলকভাবে পাইকারি পর্যায়ে অনেক কম।
যখন ভালো নেই মাংসের ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ-ই, তখন খাত বিশেষজ্ঞদের যুক্তি- বাজারে এককেজি গরুর মাংস পাওয়ার কথা ৬৫০ টাকারও নিচে।
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনিমেল নিউট্রিশন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আল-নূর মো. ইফতেখার রহমান বলেন, সাধারণ খামারিরা যেভাবে গরু লালন-পালন করে, তাতে গরুর মাংসের দাম ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকার উপরে ওঠা কোনোভাবেই উচিত নয়।
বাস্তবতা বলছে, সময় এসেছে এমন উপায় বের করার যেখানে সাশ্রয়ী মূল্যে গরুর মাংস কেনার সুযোগ পাবেন ক্রেতা আর তা সরববরাহ করে ভালো থাকবেন গৃহস্থ-খামারিরা। এই তাগাদা এসেছে স্বয়ং প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ন্যাশনাল টেকনিক্যাল রেগুলেটরি কমিটি (এনটিআরসি) থেকেও। গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত এনটিআরসি উপকমিটির প্রথম সভার প্রথম সিদ্ধান্তে, দামের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় জরুরি ভিত্তিতে ডেইরির পাশাপাশি বিফ ব্রিডের প্রজনন শুরু করার সুপারিশ করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. মো. রেয়াজুল হক বলেন, কোনো নির্দিষ্ট জাতের গরুর মাংসের কথা নির্দিষ্ট করে বলবো না। তবে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে যখন আলোচনা-সমালোচনা হয়, তখন সরকার সেটাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করে দিতে পারে না, সেটা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করে থাকে। সবার জন্য যা ভালো হবে, তাই করা হবে এক্ষেত্রে।
তবে জানা দরকার- বাংলাদেশের আবহাওয়া বিবেচনায় সবচেয়ে এগিয়ে আছে কোন জাতের গরু? আমেরিকান ব্রাহমা ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য, সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে ব্রাহমা। সরকারের বিফ ক্যাটল ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের মূল্যায়ন, যেখানে দৈনিক ২৮০-২৮৪ গ্রাম করে বাড়ে জার্সি-শাহিওয়াল আর হলস্টেইন-ফ্রিজিয়ান বাড়ে ৩০৩ গ্রাম করে, সেখানে একই পরিমাণ খাবার খেয়ে ৪২৬ গ্রাম করে বাড়ে ব্রাহমা। অর্থাৎ কম খরচে বেশি মাংস চাইলে বিকল্প নেই ব্রাহমার।
এ বিষয়ে বিফ ক্যাটল ডেভলপমেন্ট প্রকল্পের পরিচালক এস এম এ সামাদ জানান, তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও ব্রাহমা জাতের গরু স্বাভাবিক থাকে। তাছাড়া এর মাংসে চর্বির পরিমাণও খুবই কম থাকে।
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনিমেল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. কে বি এম সাইফুল ইসলাম বলেন, উন্নত জাতের গরুর ক্ষেত্রে এর বডি গেইন (শারিরীক বৃদ্ধি) অনেক বেশি হয়। সাধারণত প্রচলিত দেশি গরুর তুলনায় এই পার্থক্য ৫ থেকে ৬ গুণ হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে, ব্রাহমার মতো মাংস উৎপাদনকারী জাতের গরুর স্বাভাবিক পালনের সুযোগ দেয়া হলে, অবশ্যই স্বস্তি পাবেন মাংসের ক্রেতা-বিক্রেতা।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ ইমরান বলেন, খামারিদেরকে জিম্মি করে মাংসের দাম কমানো কোনোমতেই সম্ভব নয়। ব্রাহমার মতো উন্নত জাতের গরু যদি দেশে বাজারজাত বা লালন-পালন করা শুরু হয়, তাহলে ৫ বছরের মধ্যে দেশের গরুর মাংসের দাম অন্তত ২০ শতাংশ কমবে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্রাহমার ওপর থেকে কঠোর নিয়ন্ত্রণ তুলে দিয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে গরুর মাংস খাওয়ার সুযোগ করে দেয় কি-না প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সেটাই দেখার বিষয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।