জুমবাংলা ডেস্ক: এবার কোরবানির হাট কাঁপাতে আসছে ‘যশোরের ভাইজান’। এ উপলক্ষে বেশ আদর-যত্নে ভাইজানকে প্রস্তুত করছেন মো. মহিদুল জামান কাজল। বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিবেদক তৌহিদ জামান-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
সদরের ফতেপুর ইউনিয়নের সীতারামপুর উত্তরপাড়ার বাসিন্দা মহিদুল জামান সরকারি চাকরিজীবী। ছয় বছর আগে বাড়িতে গড়ে তোলেন গরুর খামার। চাকরির পাশাপাশি কিছু করার চেষ্টা থেকে ছোট পরিসরে খামারটি গড়েছেন। তবে এখন খামারটি বেশ বড়, রয়েছে ৩৭টি গরু। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গরুটির নাম ভাইজান। ৬৯ হাজার টাকায় প্রায় চার বছর আগে ছয় মাস বয়সী এই অস্ট্রেলিয়ান হলিস্টিন ফ্রিজিয়ান জাতের গরুটি কিনেছিলেন কাজল।
নাম ভাইজান কেন রাখলেন জানতে চাইলে কাজল বলেন, ‘পরিবারে আমি সবার বড়। ছোটরা আমাকে ভাইজান বলে ডাকে। তাই আদর করে ভাইজান রেখেছি। পরে এটির সাইজ-ওজন বিবেচনায় যশোরের ভাইজান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।’
ভাইজানের বর্তমান বয়স চার বছর পাঁচ মাস। গায়ে সাদার ওপর কালো ছোপ ছোপ দাগ রয়েছে। সামনের দিকের উচ্চতা ৭৩ ইঞ্চি এবং পেছনের দিকের উচ্চতা ৬৫ ইঞ্চি। লম্বায় প্রায় ১০ ফুট। লাইভ ওজন প্রায় ১৪০০ কেজি।
আমার খামারে তিন শেডে ১০০ গরু রাখা যায় উল্লেখ করে কাজল বলেন, ‘বর্তমানে খামারে ৩৭টি গরু আছে। এর মধ্যে এঁড়ে ২০টি, গাভি ১২টি এবং বকনা পাঁচটি। ছয়টি গাভি দুধ দিচ্ছে; দুইটির আগামী সপ্তাহে বাছুর হওয়ার কথা। ছয়টি গাভি প্রতিদিন ৪৫-৫০ লিটার দুধ দেয়। একজন বিক্রেতা আছেন, বাড়ি থেকে সেই দুধ নিয়ে গ্রামাঞ্চলে বিক্রি করেন।
ভাইজানের খাবারের বর্ণনা দিয়ে কাজল বলেন, ‘প্রতিদিন প্রচুর কাঁচা ঘাস, গমের ভুসি, গমের আটা, সয়াবিনের খৈল, ভুট্টা ভাঙা দানা, রাইস পলিশ আর অল্প পরিমাণ ধানের কুঁড়া খেতে দেওয়া হয়। তার পেছনে দিনে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা খরচ হয়। এবার কোরবানির ঈদে বিক্রি করবো।’
কত টাকা দাম চাচ্ছেন জানতে চাইলে কাজল বলেন, ‘দাম চাচ্ছি না। যারা কিনবেন, তারা দেখে সরাসরি দাম বলবেন। আমি কোনও দাম নির্ধারণ করিনি।’
ভাইজান ছাড়াও এবার কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য আরও ছয়টি গরু প্রস্তুত করেছি উল্লেখ করে কাজল বলেন, ‘এগুলোর দাম এক থেকে দুই লাখের মধ্যে।’
খামারে গিয়ে দেখা গেছে, গরু পালনে কাজল ও তার পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও দুই জন কর্মচারী রয়েছেন। একজন বেসরকারি পশুচিকিৎসক নিয়মিত গরুগুলোর দেখভাল করেন। মাঝেমধ্যে সদরের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা খোঁজখবর নেন।
ভাইজানের বিষয়ে জানতে চাইলে সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. তপু কুমার সাহা বলেন, ‘আমি কাজলের খামারে গিয়েছিলাম। খামারে অস্ট্রেলিয়ান হলিস্টিন ফ্রিজিয়ান জাতের একটি বড় গরু আছে। লাইভ ওজন ১৩৬৫ কেজি। তার খামারে সম্পূর্ণ অর্গানিক উপায়ে সঠিক পদ্ধতিতে গরু পালন করা হয়।’
জেলা প্রাণিসম্পদ দফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলায় কোরবানির জন্য গরুর চাহিদা ২৭-২৯ হাজার এবং ছাগল প্রায় ৬০ হাজার।
জেলায় কোরবানির উপযোগী কী পরিমাণ পশু আছে জানতে চাইলে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রাশেদুল হক বলেন, ‘জেলায় যেসব খামারি রয়েছেন, আশা করা যায় চাহিদার জোগান পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে কোরবানির উপযোগী ৩১ হাজার ২১টি গরুর তালিকা করেছি। এর মধ্যে সদরে তিন হাজার ৪৪৪, মণিরামপুরে চার হাজার ৯৪৬, ঝিকরগাছায় তিন হাজার ৭৪৭, শার্শায় দুই হাজার ৯১০, চৌগাছায় আট হাজার ৯৭৫, কেশবপুরে তিন হাজার ৪৬২, অভয়নগরে এক হাজার ৫৭৪ ও বাঘারপাড়ায় এক হাজার ৯৪৫টি। সেইসঙ্গে ৫০ হাজার ছাগল প্রস্তুত রয়েছে।’
জেলার বড় গরুগুলোর একটি ভাইজান উল্লেখ করে রাশেদুল হক বলেন, ‘যশোরে এবার সবচেয়ে বড় দুইটি গরুর নাম শোনা যাচ্ছে। একটি ভাইজান আরেকটি কেশবপুরে আছে। এর মধ্যে কোনটি বড়, তা ওজন করলে নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।