জুমবাংলা ডেস্ক : ফেনী নদী থেকে বছরের পর বছর বালু তোলায় জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর ও ঘোপাল ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে বসতবাড়ি, মসজিদ ও কবরস্থান। পরিত্রাণ পেতে ভুক্তভোগীরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে লিখিতভাবে অভিযোগ জানালেও ফল হয়নি। গতকাল রবিবার বিকেলে ভাঙনপাড়ে মানববন্ধন করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত নারী-পুরুষ।
সরেজমিন দেখা গেছে, শুভপুর ব্রিজের অদূরে নদী থেকে শুষ্ক ও বর্ষা মৌসুমে শক্তিশালী খননযন্ত্র দিয়ে দীর্ঘদিন বালু উত্তোলন করা হয়। এতে করে জয়পুর, লাঙ্গলমোড়া ও কাটাপশ্চিম জোয়ার এলাকার দেড় হাজার একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এসব জমিতে আমন, ফেলন, তরমুজ, বাদাম ও শস্য আবাদ হত। এ ছাড়া কয়েক গ্রামের হাজার হাজার একর ফসলি জমি, কবরস্থান ও মসজিদ এবং বসতবাড়ি নদীভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। নদীর তীরবর্তী এসব ফসলি জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদ করেন কৃষকরা। উত্তোলন করা বালু কার্গোতে করে বিভিন্নস্থানে বিক্রি করা হয়।
ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে নির্দিষ্ট সীমানার বাহিরে গিয়ে নদী-খালকে গিলে খাচ্ছে বালু খেকোরা। বাল্কহেড, ট্রলার, ডেজার মেশিন দিয়ে দিনে-রাতে নদীর সুবিধামত জায়গা থেকে বালু তুলে নিয়ে যাচ্ছে। বালু খেকোদের কারণে নদী-খাল হচ্ছে বিপন্ন, ভাঙনে ভিটে হারাচ্ছে হাজারও মানুষ। নদীতে বিলীন হচ্ছে একের পর এক কৃষিজমি, ঝুঁকিতে রেল ও সড়ক সেতু।
বালু মাফিয়াদের সিন্ডিকেটের কারণে ফেনী জেলায় মোট আটটি বালুমালের ভিতরে পাঁচটি বালুমহালের ইজারা হলেও তিনটি বালু মহালের ইজারাদার মেলেনি। তিনবার বিজ্ঞপ্তি দিলেও ইজারাদার পায়নি প্রশাসন। সোনাগাজী উপজেলা দুইটা বালুহমাল ইজারা নিয়েছেন ফাজিলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যার মুজিবুল হক রিপন। ছাগলনাইয়া উপজেলা ও ফুলগাজী উপজেলার দুইটি ইজারা নিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাইল হায়দার চৌধুরী সোহেলের ভাই রফিকুল হায়দার চৌধুরী ও পরশুরাম উপজেলায় একটি বালু মহালের ইজারা নেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক ও পরশুরাম ডায়াবেটিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মীর আহমেদ চৌধুরী। তিনটির ইজারাদার না মিললেও প্রতিদিন ঠিকই এসব বালুমহাল থেকে কোটি কোটি টন বালু অবৈধভাবে তুলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বালুখেকোরা। অথচ ইজারাকৃত পাঁচটি মহাল থেকে সরকার রাজস্ব পায় ১ কোটি ১ লাখ ১৬ হাজার ১৭১ টাকা।
লাঙ্গলমোড়া এলাকার আমিন হাজী বাড়ির বাসিন্দা ডা. নুরুল আমিন হেলাল জানান, বালু তোলার কারণে ১০ শতাংশ ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। বিশাল এলাকাজুড়ে ভেঙে নদীর গতিপথও পরিবর্তন হয়ে গেছে। প্রতিদিনই ভাঙছে। আরো ২৯ শতাংশ জমি রয়েছে। সেটাও হুমকির মুখে।
একই এলাকার বাসিন্দা ডা. ফারুক মিয়া জানান, নদী ভাঙনের ধারা অব্যাহত থাকায় নদী বাড়ির কাছে চলে এসেছে। বাড়িঘর-মসজিদ ও কবরস্থানও হুমকির মুখে রয়েছে। প্রতিদিন ভাঙনের আতঙ্কে দিন কাটে।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মুহুরী সেচ প্রকল্পের স্কিম ম্যানেজার গিয়াস উদ্দিন জানান, ফসল আবাদের জন্য গভীর নলকূপ স্থাপন করেছিলেন। সেটি বালু কারবারিরা ফেলে দিয়ে বালু তুলেছে। শুধু তাই নয়, প্রকল্পের পাইপও তলিয়ে গেছে।
একটি সূত্র জানায়, গত বছরের ২৫ অক্টোবর ডা. নুরুল আমিন হেলাল, এনামুল হক, আবুল কালাম, সাজেদুল করিম, দেলোয়ার হোসেন, ফজলুল করিম, সাইফুল ইসলাম, সুমনসহ এলাকার বেশ কিছু ব্যক্তি স্বাক্ষরিত একটি চিঠি জেলা প্রশাসক শাহীনা আক্তারকে দেওয়া হয়।
জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, বালু তোলার কারণে পার্শ্ববর্তী অনেক জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ধরনের অভিযোগ পাওয়ার পর বালু উত্তোলন বন্ধ রাখা হয়েছে। বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে শুভপুর ও ঘোপাল এলাকায় বালু তোলার বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়), পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে নেগেটিভ রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী বছরে ছাগলনাইয়া উপজেলায় বালু মহাল না রাখতে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।