আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কানাডায় স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বড় হন অনেক পাঞ্জাবি। তবে, অনেকেই তাদের পিতামাতার কষ্টার্জিত অর্থ বিদেশী ডিগ্রির জন্য নষ্ট করতে চান না। তারা দেশে উচ্চশিক্ষা লাভ করতে চায় এবং তারপর আরও শিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে চায়। কিন্তু, সেটাও যে অত্যন্ত বাজে স্বপ্ন সেটা অনেক শিক্ষার্থীই বুঝতে পারেন কানাডায় পৌঁছে।
যেসব প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে কানাডায় নিয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা সেখানে পৌঁছালে তারা দেখতে পায় বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। কারণ আবাসন ও চাকরির অনেক অভাব রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে। এরপর থেকে ছাত্ররা আরেক লড়াই শুরু করে। এই লড়াই প্রতিশ্রুতির বিরুদ্ধে লড়াই। ভারত-কানাডা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার আগে থেকেই পরিস্থিতিটা এমনই।
অভিবাসন এবং কানাডার উদ্বাস্তু ও নাগরিকত্ব দফতরের (আইআরসিসি) প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গেছে, প্রায় ২,২৬,৪৫০ জন ভারতীয় ছাত্র ২০২২ সালে কানাডায় গিয়েছিলেন। বিদেশগামী ভারতীয় ছাত্রদের সংখ্যা প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা ভারতকে আন্তর্জাতিক ছাত্রদের বৃহত্তম দলের স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে, শুধু বৃহত্তম দলের স্বীকৃতিই লক্ষ্য নয়। ভারতে শিক্ষাখাতে সরকারি খরচ কমানোও বিদেশে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
ইতিমধ্যে বহু ভারতীয় শিক্ষার্থী অন্টারিওর নর্থ বে-তে কানাডার উত্তর অংশের একটি ছোট শহরে পড়তে গিয়েছেন। তারা বাসস্থানের অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে একের পর এক তাঁবুতে থাকছেন। বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, পড়ুয়াদের ঘর বানানোর মত পর্যাপ্ত জায়গা তাদের নেই। এ নিয়ে পড়ুয়ারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। সেই বিক্ষোভের খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
এক শিক্ষাথীর কথায়, ‘আমি যখন ভারত থেকে আবাসনের বিকল্পগুলি জানতে চাইছিলাম, তখন বলা হয়েছিল এনিয়ে প্রচুর চিটিংবাজি চলে। ভারত থেকে বাসস্থান বুকিং না-করাই ভালো। আমি তাই বাসস্থান বুকিং না-করেই ২১ আগস্ট কানাডায় আসি। ব্রাম্পটনে প্রায় ১০ দিন ধরে সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসনের সন্ধান করেছি, কিন্তু পাইনি। তারপর যখন কলেজের জন্য নর্থ বে-তে আসি, আমাকে প্রথম তিন দিন হোটেলে থাকতে হয়েছে। প্রতিদিন খরচ হয়েছে ১২০ কানাডিয়ান ডলার।’
খরচা বাঁচাতে ওই পড়ুয়া যখন অন্য দুটি মেয়ের সঙ্গে মোটেলের ওই রুম শেয়ার করেন, তখন তাঁর দৈনিক মোটেল ভাড়া কমে হয় দৈনিক ৩০ কানাডিয়ান ডলার। কলেজ জানিয়ে দেয়, হস্টেলে কোনও ঘর দিতে পারবে না। তাদের ক্ষমতা সীমিত। তার মধ্যেও যে মোটেল বা ঘরভাড়া পাওয়া যাচ্ছে, সেই ভাড়া দিনকে দিন বেড়ে যাচ্ছে।
এসব দেখে কানাডোর কলেজ, নর্থ বে-র নিপিসিং ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে (প্রতি মাসে ছাত্র প্রতি ২৫০ ডলার) স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। এখন রুম শেয়ার করেও শিক্ষার্থীদের প্রতিমাসে প্রায় ৯০০ ডলার থাকার জন্য খরচ হচ্ছে। তাছাড়া তো ব্যয়বহুল কানাডায় অন্যান্য খরচ আছেই। পরিস্থিতি এতই খারাপ যে অনেক পড়ুয়ারা খরচ বাঁচাতে গরম বা টাটকা খাবার পর্যন্ত খান না। তাদের কাছে সেই অর্থ থাকে না।
এক পড়ুয়া দুঃখের সঙ্গে জানিয়েছেন, ‘আমরা যেখানে থাকতাম, সেখানে আমরা সকালের খাবারটা দেওয়া হত। সকালের খাবার বলতে একটা অমলেট। আর নিরামিষ খেলে রুটি। আমি রুটি নিতাম। সকালে মাখন বা জ্যাম দিয়ে রুটি খেতাম। তারপর কিছু রুটির টুকরো দিনের জন্য আলাদা করে রেখে দিতাম। সারাদিন কলেজে পড়ার পর সন্ধ্যায় ওই রুটির টুকরোগুলো খেতাম। প্রায় একসপ্তাহ ধরে, আমি শুধু সেসব খেয়েই টিকে ছিলাম।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।