জুমবাংলা ডেস্ক : ‘পড়ালেখা করে যে, গাড়ি ঘোড়ায় চড়ে সে’–শৈশব থেকে সবাই এই প্রবাদটি শুনে বড় হয়। কিন্তু পড়ালেখা করে শুধু গাড়ি ঘোড়ায়ই চড়ে না, গাড়ি তৈরিও করতে পারে। এমনই নিজেদের বানানো গাড়ি নিয়ে হাজির হয়েছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগের একদল মেধাবী শিক্ষার্থী।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগের একদল মেধাবী শিক্ষার্থী সম্প্রতি তৈরি করেছেন রেসিং কারের আদলে একটি চার চাকার গাড়ি। চুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের একদল শিক্ষার্থী নিজ হাতে গাড়ি তৈরির উদ্দেশ্যে ২০২১ সালের অক্টোবরে চুয়েট অটোমোটিভ ও মোবিলিটি সোসাইটি (সিএএমএস) গঠন করে। দীর্ঘ দেড় বছরের প্রচেষ্টায় সম্প্রতি তারা বিজয়-৭১ নামে একটি গাড়ি নিয়ে হাজির হয়েছে নিজেদের ক্যাম্পাসে।
দীর্ঘ দেড় বছরের এই বিজয়-৭১ নামের গাড়ি তৈরির কার্যক্রম নিয়ে বিজয়-৭১-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সিএএমএসের সহসভাপতি রাহাতুল ইসলাম বলেন, ‘গাড়িটি তৈরির জন্য প্রথমেই আমরা একটি দল গঠন করি। দলটিকে চারটি শাখায় বিভক্ত করা হয়। এগুলো হলো: ফ্রেমিং, সাসপেনশন, ইঞ্জিন এবং ট্রান্সমিশন। প্রতিটি শাখার অধীনস্থ সদস্যদের নিজ নিজ বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে শিক্ষা কার্যক্রম এবং হাতে-কলমে দক্ষতা অর্জনের জন্য শিক্ষকদের সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় ওয়ার্কশপ পরিচালনা করি। এরপর আমরা গাড়ির একটি মডেল তৈরি করি।’
তিনি বলেন, ‘পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম বিভাগের বাঁশখালী উপজেলার একটি গ্যারেজে গাড়ির প্রস্তুতকরণ কার্যক্রম শুরু করি। গাড়ির ব্যয়ভার কমানোর জন্য অব্যবহৃত একটি গাড়ি থেকে নেয়া কিছু যন্ত্রাংশ এবং নতুন কিছু যন্ত্রাংশের সমন্বয়ে আমরা গাড়িটি তৈরি করি। প্রতি সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার দলের প্রতিটি শাখার কয়েকজন প্রতিনিধি পালাক্রমে গাড়ি তৈরির কাজ করতে থাকি। দীর্ঘ দেড় বছরের প্রচেষ্টায় অবশেষে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত গাড়ি বিজয়-৭১ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, গাড়িটির বিশেষত্ব হচ্ছে, এটি পরিবেশবান্ধব, জ্বালানি সাশ্রয়ী, বায়ো-ডিজেলে পরিচালিত। সেই সাথে উচ্চ সেফটি ক্ষমতাসম্পন্ন এবং স্বল্প ব্যয়ে তৈরি করা হয়। শুরুতে মাত্র অল্প কিছু সদস্য নিয়ে শুরু করলেও পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে লক্ষ্য অর্জন সহজ হয়।
বিজয়-৭১ দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সিএএমএসের সদ্যবিদায়ী সভাপতি এম এ শাদাব সিদ্দিকী বলেন, ‘বহু বছর ধরেই চুয়েট শিক্ষার্থীদের নিজেদের গাড়ি তৈরির ইচ্ছা ছিল। অবশেষে আমাদের হাত ধরে সেই স্বপ্ন পূরণ হলো। মূলত আমরা ফর্মুলা স্টুডেন্ট ইউকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে ফর্মুলা রেসিং কার তৈরির লক্ষ্যে কাজ শুরু করলেও, নানা প্রতিবন্ধকতার জন্য আমরা সফল হতে পারিনি। তাই পরিকল্পনা পরিবর্তন করে আমরা রেসিং কারের আদলে একটি প্রোটোটাইপ তৈরি করি। এটি তৈরির ক্ষেত্রে সব থেকে বড় সমস্যা ছিল আর্থিক প্রতিবন্ধকতা।’
‘গাড়ি তৈরিতে আমরা বিজয়-৭১-এর সদস্যদের নিজস্ব অর্থায়ন ও গাড়িটির মোট খরচের ৫ ভাগের ১ ভাগ অর্থায়ন করে ইউনিপোলার অটোমেশন লিমিটেড। তা ছাড়াও আমরা গাড়ির পর্যাপ্ত সরঞ্জামাদি জোগাড় করার ক্ষেত্রেও অনেক সমস্যার সম্মুখীন হই। সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আজ আমরা গাড়ি তৈরিতে সক্ষম হই। ইউনিপোলার অটোমেশন লিমিটেড এবং বিজয়-৭১-এর সদস্যদের পাশাপাশি আমরা আমাদের শিক্ষকদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা পেয়েছি,’ যোগ করেন তিনি।
শাদাব সিদ্দিকী বলেন, ‘পর্যাপ্ত আর্থিক সহযোগিতা এবং উন্নত প্রযুক্তির সহায়তা পেলে খুব শিগগিরই আমরা ফর্মুলা-১ রেসিং কার তৈরির স্বপ্ন পূরণ করতে পারব বলে আশা রাখি।’
এ প্রসঙ্গে চুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এবং সিএএমএস-এর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার শিক্ষার্থীদের সাফল্য দেখে আমি সত্যিই খুব আনন্দিত এবং গর্বিত। নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে চুয়েটে প্রথমবারের মতো একটি গাড়ি তৈরি করেছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রচুর সম্ভাবনাময়। পর্যাপ্ত সহযোগিতা পেলে তারা অবশ্যই তাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
বিজয়-৭১-এর সদ্য নির্বাচিত প্রধান নির্বাহী আশহার ইনতেযাম তাহবির বলেন, ‘আমরা আশা করি ২০২৫ সালের মধ্যে আমাদের নিজেদের তৈরি ফর্মুলা-১ কারকে বিশ্বমঞ্চে নিয়ে যেতে পারব।’
চুয়েট অটোমোটিভ অ্যান্ড মোবিলিটি সোসাইটির ফর্মুলা-১ কার তৈরির পাশাপাশি ইলেকট্রিক সাইকেল, ইলেকট্রিক কার এবং ড্রোন তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।