জুমবাংলা ডেস্ক : খাদ্যের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন অনেক পোল্ট্রি ফার্মের মালিকরা। অনেকে ফার্ম বন্ধ করে দেওয়ার চিন্তাও করেছেন। আবার কেউ কেউ পোল্ট্রি ফার্ম বন্ধ করে দিয়ে ব্যবসার ধরন বদলে ফেলেছেন।
এ অবস্থায় সাধ্যের মধ্যে উৎপাদন ব্যয় রেখে ফার্মের হাঁস-মুরগির খাদ্য উৎপাদনে বিটল পোকার চাষ শুরু করেছেন বরিশালের উদ্যোক্তারা। যদিও বিষয়টি পরীক্ষামূলক বলছেন তারা, তবে ভবিষ্যতে খামারিদের স্বার্থে এই চাষ ছড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছাও রয়েছে তাদের।
বিটল পোকা বা তার ‘গুটি’ হাঁস-মুরগির খাদ্য অর্থাৎ পোল্ট্রি ফিডের ৭০ ভাগ প্রোটিন যোগায়। এক কেজি বিটল পাউডার বাজারে বিক্রি হয় ৩ হাজার টাকা দরে, যা দিয়ে তৈরি হয় একশ কেজি খাবার। আর এসবের বেশির ভাগই আমাদের দেশে আসে চীন, জাপান ও থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে।
তবে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন নিয়ে ইন্টারনেট ঘেঁটে চাষ পদ্ধতি শিখে বরিশালে বিটল পোকার চাষ শুরু করেছেন অপু গোমেজ নামে এক উদ্যোক্তা। এক সময় দুই হাজার মুরগির পোল্ট্রি ফার্ম ছিল বরিশাল নগরের আমবাগান এলাকার বাসিন্দা অপুর। কিন্তু পোল্ট্রি ফিডের দাম বাড়ায় বছর কয়েক আগে ফার্ম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন তিনি।
সেই ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিজ্ঞা নিয়ে পোল্ট্রি ফিডের সবচেয়ে দামি যে উপাদান, সেই বিটল পোকার চাষ নিজেই শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে কিছু পোকা বিক্রিও করেছেন।
অপু গোমেজ জানান, বিটল পোকা চাষের শুরু থেকেই বেশ সাড়া পাচ্ছেন। একেবারে ছোট্ট পরিসরেও এই পোকা পালন করা যায়। এ পোকা উড়তে পারে না, দুর্গন্ধও ছড়ায় না।
তিনি বলেন, পোল্ট্রি ফিড ভুট্টা, সয়াবিন, নারিকেল ও তিলের খৈলসহ বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়। তবে এই খাবারের প্রধান উপাদান বিটল পোকার পাউডার ও লাভা। পোলট্রি ফিডসহ অন্যান্য ফিডের সাথে বিটল পোকার পাউডার মিশ্রণ হয়ে আসে।
বিটলের গুঁড়ার বর্তমান দর প্রতিকেজি ৩ হাজার টাকা জানিয়ে উদ্যোক্তারা বলছেন, এগুলোর খাদ্যে তেমন খরচ নেই, খরচের চেয়ে উৎপাদন অনেক বেশি। আর যেহেতু গাছসহ সব প্রাণীর খাদ্যের প্রোটিন যোগান দেয় তাই বিটল পোকা ও তার গুঁড়ার চাহিদা বিদেশেও রয়েছে।
পোল্ট্রি খামারিরা জানান, কয়েক বছর আগেও যে খাবারের দাম ছিল দেড় হাজার টাকার নিচে, এখন তা সাড়ে তিন হাজার টাকার বেশি। এই অবস্থায় যদি সাশ্রয়ী ও বিশেষজ্ঞদের অনুমোদিত হয় তাহলে অবশ্যই এই খাবারে উৎসাহী হবেন তারা।
তবে বিটল পোকা চাষের অনুমোদন দেওয়া হয়নি জানিয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নূরুল আলম বলেন, এটার চাষ কেউ কেউ পরীক্ষামূলকভাবে বিদেশি প্রযুক্তির মাধ্যমে করছেন। তবে সেটা তাদের নিজ দায়িত্বে।
তিনি বলেন, বিষয়টি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বিবেচনাধীন রয়েছে, কারণ মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণ করতে হলে অবশ্যই একটি নির্দেশনা লাগবে। তবে হ্যাঁ, এই পদ্বতিতে পোল্ট্রি খাদ্যের খরচটা কমে যায়। তাই সরকার যদি এটি মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণের নির্দেশনা দেয় তবে সেটি আমরা করব।
উল্লেখ্য, দেশের সর্ব দক্ষিণের জেলা বরগুনাতেও পরীক্ষামূলকভাবে ‘বিটল পোকা’র চাষ শুরু করা হয়েছে। উন্নত দেশগুলোতে এটি ‘মিল ওয়ার্ম’ নামেও পরিচিত।
জানা গেছে, প্রায় তিন বছর আগে দেশের ঢাকা, জামালপুর, ময়মনসিংহে প্রথম এই পোকার চাষ শুরু হয়। বরিশালের দুই উদ্যোক্তা পিটার গোমেজ ও অপু গোমেজ এক বছর আগে বরিশাল শহরে বিটল পোকার চাষ শুরু করেন। সেই খামার দেখে বরগুনার মাহবুবুল আলম মান্নু কিছু পোকা এনে বরগুনায় পরীক্ষামূলক খামার শুরু করেছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।