জুমবাংলা ডেস্ক : ইলিশের ভরা মৌসুমে উপকূলীয় বাগেরহাটের শরণখোলায় মারাত্মক বরফ সংকট দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ফলে কাঙ্ক্ষিত বরফ উৎপাদন হচ্ছে না। বরফ না পেয়ে অসংখ্য ফিশিং ট্রলার এখনো সাগরে যেতে পারেনি। বরফের অভাবে এরই মধ্যে দুটি ট্রলারের প্রায় ১০ লাখ টাকা ইলিশ নষ্ট হয়ে গেছে।
বরফ কলগুলোতে পর্যাপ্ত বরফ উৎপাদন না হলে এবার চরম লোকসানে পড়বে জেলে-মহাজনরা। ইলিশ খাতেও ব্যাপক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন তারা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শরণখোলার চারটি বরফকলের মধ্যে বর্তমানে মেসার্স মেঘা ও মেসার্স মেঘনা নামে দুটি বরফ কল চালু আছে। এর মধ্যে মেঘা বরফ কলের উৎপাদন ক্ষমতা ২৫০ ক্যান এবং মেঘনার ৬০০ ক্যান। অন্যদিকে এই উপজেলায় সমুদ্রগামী ফিশিং ট্রলারের সংখ্যা প্রায় ৩০০। গত ২৩ জুলাই ৬৫ দিনের অবরোধ শেষ হওয়ার পর দুটি গোন পেয়েছেন জেলেরা। এই ৩০০ ট্রলারের মধ্য থেকে এপর্যন্ত মাত্র দেড় শ’র মতো ট্রলারে বরফ সরবরাহ করতে পেরেছে দুটি বরফ কল। বাকি ট্রলারগুলো বরফ না পাওয়ায় যেতে পারছে না।
মেসার্স আট ভাই ফিশের মালিক মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার জানান, বরফ না পেয়ে তার দুটি ট্রলার ঘাটে পড়ে আছে। মৎস্য ব্যবসায়ী কবির আড়তদার জানান, তার ৬টি ট্রলারের মধ্যে মাত্র একটি ট্রলার সাগরে গেছে। বরফ পাওয়া যাচ্ছে না। যাও পাচ্ছেন তা আবার পূর্ণাঙ্গ ক্যান নয়, আংশিক। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ ক্যানেরই দাম দিতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে এবার জেলে-মহানদের পথে বসতে হবে।
মৎস্য ব্যবসায়ী তহিদুল তালুকদার জানান, রবিবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় তার এফবি আজমির শরীফ ট্রলারটি সাগর থেকে উঠে আসে। শরণখোলার রাজৈর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ট্রলার থেকে মাছ ওঠানোর পর পর্যাপ্ত পরিমাণ বরফ না দিতে পারায় চার লাখ টাকার ইলিশ নষ্ট হয়ে গেছে।
মৎস্য ব্যবসায়ী সোলায়মান হোসেন জানান, তার এফবি শাহী মদিনা ট্রলারও একই সময় সাগর থেকে উঠে আসে। বরফ না পেয়ে তারও প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকার ইলিশ নষ্ট হয়।
মেসার্স মেঘনা বরফ কলের মিস্ত্রি আবু সাইদ বলেন, বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে চাহিদা মতো বরফ উৎপাদন হচ্ছে না। গতবার এই সময় তাদের মিলে ১২ হাজার ক্যান বরফ উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু এবার হয়েছে মাত্র তিন হাজার ক্যান। মিল চালু করতে মালিকের প্রায় ২০ লাখ টাকা খচর হয়েছে। বিদ্যুতের বিপর্যয়ে এবার লোকসানে পড়তে হবে।
মেসার্স মেঘা বরফ কলের মালিক মো. গোলাম মোস্তফা তালুকদার বলেন, সারা দিনে দুই থেকে তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে। তাও একটানা না। আসা যাওয়া করে। এই ফাঁকে ক্যানে যেটুক বরফ জমে বিদ্যুৎ চলে গেলে আবার তা গলে যায়। ৩-৪ দিন বসে ক্যানে আংশিক বরফ পূর্ণ হয়। এতে বিদ্যুৎ ঠিকই ব্যয় হচ্ছে কিন্তু সে তুলনায় বরফ উৎপাদন হচ্ছে না। যে কারণে চাহিদার সিকি পরিমাণও বরফ দিতে পারছি না ট্রলারগুলোতে।
শরণখোলা উপজেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল হোসেন বলেন, আমাদের সমুদগ্রামী তিন শ’র মতো ফিশিং ট্রলার রয়েছে। বরফ সংকটে এখন পর্যন্ত অর্ধেক ট্রলার সাগরে যেতে পারেনি। সমুদ্র থেকে ঘাটে এসে বরফ না পেয়ে লাখ লাখ টাকার ইলিশ নষ্ট হচ্ছে। একটি ট্রলার মেরামতসহ সাগরে পাঠানোর উপযোগী করতে একেকজন মহাজন ৪-৫ লাখ টাকা খরচ করে বসে আছেন। ইলিশের ভরা মেসৗমে বরফের অভাবে তারা সাগরে যেতে পারছে না। ইলিশ মৌসুম বিবেচনা করে শরণখোলায় চাহিদা মতো বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই।
এ ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির শরণখোলা সাব-জোনাল অফিসের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) মো. আশিক মাহমুদ সুমন বলেন, আমাদের পল্লী বিদ্যুতের আমতলি উপকেন্দ্রে দিনের বেলায় চাহিদা সাড়ে ৬ মেগাওয়াট। সেখানে পাই আড়াই থেকে তিন মেগাওয়াট। এ ছাড়া রাতের বেলা পিক আওয়ারে চাহিদা থাকে সাড়ে ৯ থেকে ১০ মেগাওয়াট। সেখানে পাই মাত্র কখনো তিন মেগাওয়াট আবার কখনো চার মেগাওয়াট। এ কারণে চাহিদা মতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।
শরণখোলা উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার রায় বলেন, ইলিশের এই ভরা মৌসুমে বরফ উৎপাদ ব্যাহত হলে ইলিশ আহরণও ব্যাহত হবে। গত বছর শরণখোলার জেলেদের মাধ্যমে সমুদ্র থেকে ৭৮৫ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছিল। বিদ্যুৎ সংকটে বরফ উৎপাদন না হলে এবার ইলিশ খাতে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।