জুমবাংলা ডেস্ক : সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধন করে দলটি ও তার সহযোগী সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পথ খুলে যায়।
গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ। জনরোষের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে চলে যান দলটির প্রধান শেখ হাসিনা।
এরপর থেকে দলটির কার্যক্রম কার্যত নিষিদ্ধই থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে বিচ্ছিন্ন মিছিল করার চেষ্টা করছে। তবে ৫ আগস্টের পর মূলত ইন্টারনেট ভিত্তিক সাইবার স্পেসেই কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠন।
ইন্টারনেটে ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স (টুইটার) এর মতো মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে বক্তব্য, মতামত, বিবৃতি প্রচারসহ কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল দলটি। এর বেশিরভাগই দেশের বাইরে থেকে পরিচালিত হয়ে আসছে। সাইবার স্পেসেই দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বক্তব্য-বিবৃতি প্রচার করছেন। ফলে বাহ্যিক কার্যক্রমের চেয়ে দলটির কার্যক্রম সাইবার স্পেস-নির্ভর হয়ে পড়ে।
সরকারের সিদ্ধান্তে সাইবার স্পেসে দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় ফেসবুক, ইউটিউব থেকে বক্তব্য, বিবৃতি সরানোর পাশাপাশি নতুন করে কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। তবে সরকার সাইবার স্পেসের দুই প্ল্যাটফর্ম- ফেসবুক, ইউটিউব কর্তৃপক্ষকে শুধু অনুরোধ করতে পারে। আর অভ্যন্তরীণ লিংক ব্লক করতে পারবে। কিন্তু বাইরে থেকে সেগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব হবে না। ফলে এ কাজটি চ্যালেঞ্জিং।
জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার নয় মাসের মাথায় দলটির সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।
শনিবার (১০ মে) রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে সভার সিদ্ধান্ত জানিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতি পাঠানো হয়।
এতে জানানো হয়, উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে।
সংশোধনী অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার সহযোগী সংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবে।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে জানিয়ে বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, আজকের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জুলাই ঘোষণাপত্র আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে।
এর আগে জুলাই আন্দোলনে গণহত্যার অভিযোগে আওয়ামী লীগকে বিচারের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনীতে অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ।
পরে প্রকাশিত গেজেটে বলা হয়েছে, সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) (দ্বিতীয় সংশোধনী) অর্ডিন্যান্স, ২০২৫ প্রণয়ন ও জারি করেছেন।
সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, সংগঠন অর্থাৎ কোনো রাজনৈতিক দল, অথবা সেই দলের অধীনস্থ, সংশ্লিষ্ট বা সহযোগী কোনো সত্তা, অথবা এমন কোনো ব্যক্তি-গোষ্ঠীকে বোঝায় যা ট্রাইব্যুনালের অভিমত অনুযায়ী, ওই দল বা সত্তার কার্যকলাপ প্রচার, সমর্থন, অনুমোদন, সহায়তা বা সম্পৃক্ততার মাধ্যমে জড়িত থাকে; সংগঠনের জন্য শাস্তি ইত্যাদি।
এ আইনের বা তৎকালীন প্রযোজ্য অন্য কোনো আইনের যাই থাকুক না, যদি ট্রাইব্যুনালের কাছে প্রতীয়মান হয় যে, কোনো সংগঠন এই আইনের ৩ ধারার উপ-ধারা (২) অনুযায়ী উল্লেখিত অপরাধসমূহ করেছে, নির্দেশ দিয়েছে, চেষ্টা করেছে, সহায়তা করেছে, প্ররোচিত করেছে, উসকানি দিয়েছে, ষড়যন্ত্র করেছে, সহজতর করেছে বা সহযোগিতা করেছে, তাহলে ট্রাইব্যুনাল সেই সংগঠনের কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ করার, সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণার, তার নিবন্ধন বা লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল করার এবং তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা রাখবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।