ধর্ম ডেস্ক : ইন্টারনেটের এই যুগে অপরাধজগতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে সাইবার অপরাধ। যার শিকার হচ্ছে কমবেশি সব বয়সের মানুষ। তবে অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর-কিশোরী ও নারীরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন সাইবার আক্রমণে। এই অপরাধের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সাইবার বুলিজম’।
সাধারণত ‘বুলিং’ বলতে দুজন ব্যক্তির মধ্যে তর্ক বা কথা-কাটাকাটির জের ধরে একজন ব্যক্তিকে সুনির্দিষ্টভাবে সবার সামনে দোষারোপ বা খারাপ ভাষায় আক্রমণ করাকে বোঝানো হয়। আবার একজনের ছবি বা ভিডিও বিকৃতি করে অনলাইনে তুলে ধরাও বুলিংয়ের মধ্যে পড়ে। এ ধরনের কাজকে সাইবার অপরাধ বলে গণ্য করা হয়।
ইসলামের দৃষ্টিতেও এগুলো জঘন্যতম অপরাধ। কারণ সাইবার বুলিংয়ের মূল উপাদানই হলো হিংসা-বিদ্বেষ, অপবাদ, তিরস্কার, ষড়যন্ত্র, অশ্লীলতার প্রসার, জুলুম ইত্যাদি। যার প্রতিটি মানুষের আমলকে ধ্বংস করে দেয়। মানুষকে আসমান ও জমিনে ঘৃণিত করে তোলে। সাইবার বুলিংয়ের মতো ঘৃণ্য কাজ সাধারণত করা হয় হিংসা-বিদ্বেষ থেকে।
অন্যের অগ্রগতিতে পরশ্রীকাতর হয়ে তাকে আঘাত করার উদ্দেশ্যে এ ধরনের কাজ করা হয়। এটি ইসলামের দৃষ্টিতে ঘৃণ্য কাজ। মহানবী (সা.) এ ধরনের কাজ থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা অবশ্যই হিংসা পরিহার করবে, কারণ আগুন যেভাবে কাঠকে বা ঘাসকে খেয়ে ফেলে, তেমনি হিংসাও মানুষের নেক আমল খেয়ে ফেলে। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯০৩)
সাইবার বুলিংয়ের একটি অস্ত্র হলো অন্যের ওপর মিথ্যা অপবাদ দেওয়া। যেমন—অন্যের নামে ফেক অ্যাকাউন্ট খুলে চ্যাট করে চ্যাট হিস্ট্রির স্ক্রিনশটও বিভিন্ন গ্রুপে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে সে ব্যক্তিকে মানুষ বাঁকা চোখে দেখতে শুরু করে। এর জেরে হয়তো তাকে একঘরে হয়ে যেতে হয়। এ ধরনের অপবাদের শিকার সাধারণত নারীরা হয়, ইসলামের দৃষ্টিতে কাউকে অপবাদ দেওয়া জঘন্য অপরাধ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা সচ্চরিত্রা, সরলমনা-নির্মলচিত্ত, ঈমানদার নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারা তো দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি। ’ (সুরা : নূর, আয়াত : ২৩)
অনেকে আবার নিছক তিরস্কার করার মাধ্যমে মজা করার উদ্দেশে সাইবার বুলিংয়ের আশ্রয় নেয়, ইসলামের দৃষ্টিতে এটিও গুনাহের কাজ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, কোনো সম্প্রদায় যেন অপর কোনো সম্প্রদায়কে বিদ্রুপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রুপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর কোনো নারীও যেন অন্য নারীকে বিদ্রুপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রুপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর তোমরা একে অপরের নিন্দা করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ উপনামে ডেকো না। ঈমানের পর মন্দ নাম কতই না নিকৃষ্ট! আর যারা তাওবা করে না, তারাই তো জালিম। ’ (সুরা : হুজরাত, আয়াত : ১১)
অনেক ক্ষেত্রে আবার অন্যের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাকে সর্বস্বান্ত করার উদ্দেশ্যে সাইবার বুলিংয়ের আশ্রয় নেওয়া হয়। যেমন—কোনো অনলাইন ব্যবসায়ীর উন্নতিতে ঈর্ষাকাতর হয়ে তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা তার নামে ভিন্ন ভিন্ন পেজ খুলে নানা রকম অফার ও মেসেজ করে। কখনো বাজে পণ্যও বিক্রি করে। কখনো অগ্রিম টাকা নিয়ে পণ্য দেয় না। এসব ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তারা অন্যকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করে।
পবিত্র কোরআন ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তির হুঁশিয়ারি এসেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যারা মন্দকাজের চক্রান্ত করে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি আর ওদের ষড়যন্ত্র তো নস্যাৎ হবে। ’ (সুরা : ফাতির, আয়াত : ১০)
আবার অনেকে তো সাইবার বুলিং করতে গিয়ে এতটা নিচে নেমে যায় যে অন্যের বিভিন্ন ছবিকে কারসাজি করে সেগুলো অশ্লীল বানিয়ে অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়। কিংবা অন্যের বিরুদ্ধে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ তথ্য ছড়িয়ে তাকে অপমান করার চেষ্টা করে। অথচ মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা ঈমানদারদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার পছন্দ করে, তাদের জন্য ইহকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না। ’ (সুরা : নুর, আয়াত : ১৯)
মহান আল্লাহ আমাদের এ ধরনের কাজ পরিহার করার তাওফিক দান করুন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।